ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নির্বাচন প্রতিহতে ফের অগ্নি সন্ত্রাসের পথে বিএনপি

*টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের আজ দ্বিতীয় দিন *মাঠ পাহারায় আ.লীগ
নির্বাচন প্রতিহতে ফের অগ্নি সন্ত্রাসের পথে বিএনপি

দেশজুড়ে বইছে ভোটের হাওয়া। মাত্র ৪৭ দিন পরে ভোট উৎসবে মেতে উঠবে বাঙালি জাতি। নির্বাচন ঘিরে উৎসবের আমেজে ব্যস্ত সময় পার করছে ভোটমুখী দলগুলো। ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ নিতে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মনোনয়নও বিক্রি করছে ভোটমুখী দলগুলো। এদিকে ২০২৪-এর ভোট প্রতিহত করতে কোমর বেঁধে মাঠে নামছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। তারা তপশিল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে ভোটবিরোধী দলগুলো। বিএনপির নেতারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা বললেও অগ্নি সন্ত্রাসের পথে হাঁটছে দলটি। নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে না পারে সেজন্য জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত। এরইমধ্যে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। আজ হরতালের দ্বিতীয় দিন। তবে হরতাল কর্মসূচি পালন শুরুর আগেই গত শনিবার রাত এবং গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনে ১১টি স্থানে আগুন লাগার সংবাদ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ১১ স্থানে আগুন দেওয়ার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় ১১টি যানবাহনে আগুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে পাঁচটি, রাজশাহী বিভাগে (নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাট) তিনটি, চট্টগ্রাম বিভাগে (ফেনী, কুমিল্লা) দুটি, ময়মনসিংহ বিভাগে (জামালপুর) একটি ঘটনা ঘটে। তিনি আরো জানান, আগুনে ছয়টি বাস, একটি কাভার্ডভ্যান, একটি ট্রাক, একটি সিএনজি, একটি পিকআপ, একটি ট্রেন (তিনটি বগি) পুড়ে যায়। এছাড়াও গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুন দেওয়ার খরব পাওয়া গেছে।

বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নি সন্ত্রাস রুখে দিতে র‌্যাব-পুলিশ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে নির্বাচনি মাঠ পাহারায় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে যাবে এমন কানাঘুষা চলছে রাজনীতির মাঠে। তবে ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি-জামায়াত। তখন তারা অগ্নি সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছিল। আর ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিতে গিয়ে বাণিজ্যে নামেন। এক আসনে একাধিক ব্যক্তিকে নমিনেশন বিক্রি করে সেবার প্রচুর টাকা সংগ্রহ করে বিএনপি।

সূত্রমতে, ২৮ অক্টোরব মহাসমাবেশের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক সিনিয়র নেতা বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন। অনেকে আবার কৌশলে আত্মগোপনে রয়েছেন। এরইমধ্যে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। দলটির হাইকমান্ড থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন বানচাল করতে জেলায় জেলায় আরো কঠোরভাবে কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়াও হয়েছে। ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি কার্যত পুরো দেশকে অচল করে দেয়ারও চিন্তা করছে দলটি। কর্মসূচি পালনকালে সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য কর্মীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, আন্দোলন কর্মসূচি সরাসরি তদারকি করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ভার্চুয়ালি বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন তিনি। কখনো মাঠের সক্রিয় কর্মীদের সঙ্গে ফোনে নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। এছাড়া অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা মাঠের কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিএনপির আর পিছু ফেরার সময় নেই। গ্রেপ্তার করে, হুলিয়া দিয়ে আন্দোলন স্তব্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অটল রয়েছি। দাবি আদায়ে রাজপথে ছিলাম, রাজপথে আছি। জুলুম-নির্যাতন, মিথ্যা মামলা-হামলা, গ্রেপ্তার করে এ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে নস্যাৎ করা যাবে না।

ক্ষমতার পরিবর্তন চাইলে বিএনপিকে নির্বাচন প্রতিরোধ ও প্রতিহতের ঘোষণা না দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে কাদের বলেন, আপনাদের কাউকে সরিয়ে দিতে হবে না, জনগণ না চাইলে নির্বাচনই ঠিক করবে কে সরবে আর কে সরবে না।

এদিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল এ সংক্রান্ত আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ ডিসমিস ফর ডিফল্ট (মূল আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে আপিল খারিজ) আদেশ দেন। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি কিংবা জামায়াতের অংশ নেয়া এবং না নেয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকছে না। এ কারণেই বিএনপি- জামায়াত হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে। তার আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না এবং কেউ যাতে অংশ নিতে না পারে কিংবা নির্বাচনের আগে ব্যাপক অগ্নিসন্ত্রাস করে নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত