ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ পেছানো নিয়ে গুজব

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ পেছানো নিয়ে গুজব

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ পেছানো নিয়ে দিনভর গুজব চলেছে গতকাল সোমবার। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে প্রয়োজনে সংসদ ভোটগ্রহণ পেছানো হবে। এছাড়া ভোট পেছানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

গতকাল নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, বিএনপি ভোটে আসলে আমরা তাদের জন্য বিবেচনা করব। কেউ যদি ভোটে আসতে চায় তাদের কে সুযোগ দেওয়া হবে। আমাদের অপ্রাণ চেষ্টা থাকবে যে লেভেল প্লেয়েং ফিল্ড ঠিক রাখার জন্য। আমরা সব সময় চাই সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি কিন্তু এসেছিল এবং সেই নির্বাচনে তাদের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। এবারও যদি তারা নির্বাচনে আসে তাদের জন্য তেমন একটা সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হবে।

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তপশিল পেছানোর কথা বলেছেন। এই বিষয়ে আপনাদের মতামত কী- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনই কিছু বলতে চাই না। যদি কোনো রকম কোনো পরিস্থিতি আসে, পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।

যে রাজনৈতিক দলগুলো ভোট বিমুখ তাদের ব্যাপারে আপনাদের মতামত কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, যে দলগুলো ভোটে আসছে না তাদের প্রতি আমার আমাদের বার্তা একটাই থাকবে যে, আপনারা আমাদের প্রতি আস্থা আনেন নির্বাচনে আসেন এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য সহায়তা করুন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের কোনো সুযোগ আছে কী না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আসলে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকার মতো সময় এবং সুযোগ নেই। রাজনৈতিক যে সংকট আছে এই সংকটের জন্য আমাদের কোন উদ্যোগ নেওয়ার মতো কোনো বিষয় নেই যেহেতু তপশিল ঘোষণা হয়ে গেছে। আমরা বারবার রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের জন্য ডেকেছি কিন্তু তারা আসেনি।

পুলিশ-প্রশাসনসহ আপনাদের প্রতি বিরোধী দলের আস্থা নেই। এই বিষয়ে আপনাদের মতামত কী- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি আসলে একটি কথা বলতে চাই যে যদি কারো প্রতি আস্থা না থাকে তাহলে তো দেশটাই থাকে না। আমাদের তো কারো না কারো প্রতি আস্থা অর্জন করতে হবে। আমরা এখন পর্যন্ত হাজারের উপরে নির্বাচন করেছি যে সকল জায়গায় আমরা পুলিশের প্রশাসন থেকে যথেষ্ট পরিমাণ সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি। আমি শেষ দিন পর্যন্ত আশাবাদী সকল রাজনৈতিক দলের আস্থার জায়গা তৈরি হবে এবং সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের করবে। সুষ্ঠু ভোট করার জন্য আমাদের ১০০% প্রচেষ্টা থাকবে।’

নির্বাচনকালীন সরকারের প্রতি আপনাদের কী বার্তা থাকবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সংবিধানের এই দায়িত্ব থাকবে; যখন তপশিল ঘোষণা হয়ে যাবে, তখন নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করার। আমি আশাবাদী তারা আমাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।

নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী কয়দিন থাকবে, কবে থেকে থাকবে, বা থাকবে কি না, সেই বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনাররা এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।

এদিকে ইসি অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকবেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে আনসার ৫ লাখ ১৬ হাজার, কোস্টগার্ড থাকবে ২ হাজার ৩৫০, বিজিবি ৪৬ হাজার ৮৭৬, র‌্যাবসহ পুলিশ থাকবে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন।

ইসি অতিরিক্ত সচিব বলেন, নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে তাদের সঙ্গে আজ বৈঠক হয়েছে। এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের অংশ।

বাজেট নিয়ে তিনি বলেন, বাজেট কখনো চূড়ান্ত হয় না। সম্ভাব্য বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়। পার ডে, পার পার্সন হিসেবে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অনুমদিত হার অনুযায়ী কতসংখ্যক নিয়োগ হবে, সেই বিষয়টি নিয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে। তারা একটি বরাদ্দ অ্যাডভান্স চেয়েছে। কতটুকু আমরা বরাদ্দ দেব, বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে বিষয়গুলো নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে বাজেট কত এটা বলা যাবে না। যে অনুযায়ী মোতায়েন হবে, সে অনুযায়ী বরাদ্দ হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে হার আছে, সে অনুযায়ী তারা বরাদ্দ পাবে। সেজন্য কমিশন আলাদা কোনো হার দেয় না।

কোন বাহিনী কত দিনের জন্য মোতায়েন করা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কতদিনের জন্য মোতায়েন হবে, সেটি কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে। সে অনুযায়ী পরিপত্র জারি করা হবে।

এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের যে তারিখ নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ করেছে, তা পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ। তিনি নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণেরও অনুরোধ জানান। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে রওশন এরশাদ ভোট পেছানোর দাবি জানান। কারণ হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করে তপশিল ঘোষণা করেছে। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনি প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন। ফলে ঘোষিত তফসিলের সময় যথেষ্ট নয়। রওশন এরশাদ রাষ্ট্রপতিকে আরো বলেন, ইসির তপশিল অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। কিন্তু ওই দিনই আয়কর রিটার্ন দাখিলেও শেষ দিন। আর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে সমস্যায় পড়তে হবে প্রার্থীদের। এ বিষয়টি বিবেচনা করে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ রাষ্ট্রপতিকে জানান রওশন এরশাদ। ঘোষিত তপশিলকে স্বাগত জানিয়ে রওশন রাষ্ট্রপতির কাছে আরও জানান, তার দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। এবারও তারা নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত