ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যথাযথ মর্যাদায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত

যথাযথ মর্যাদায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত

যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গতকাল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির শুরুতে দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. সাহাবুদ্দিন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে পৃথক পৃথকভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পুষ্পস্তবক অর্পণকালে শহীদদের স্মরণে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

এর আগে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে এসে পৌঁছালে তিন বাহিনী প্রধানগণ এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার তাদেরকে স্বাগত জানান।

মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মরণে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে গমণ করেন। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মহাপরিচালকবৃন্দ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্ধারিতসংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান করেন। তিনি তাদের হাতে সম্মানী চেক এবং উপহার তুলে দেন। এছাড়া পাঁচজন সেনা,তিনজন নৌ এবং তিনজন বিমান বাহিনী সদস্যদের ২০২২-২০২৩ সালের শান্তিকালীন পদকে ভূষিত করা হয়।

সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নিকট আত্মীয়সহ প্রায় ১০১ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীগণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আরসিডিএস, পিএসসি (অব.), সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের সাথে চা-চক্রে অংশগ্রহণ করেন।

এরপর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান বঙ্গভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল নৌবাহিনী প্রধান নৌবাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান করেন। এছাড়া সেনাবাহিনী প্রধান এবং বিমান বাহিনী প্রধান আগামীকাল খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা/তাদের উত্তরাধিকারীদের অনুরূপ সংবর্ধনা প্রদান করবেন।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হতে সেনাকুঞ্জে অপরাহ্নে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই সংবর্ধনায় সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা ছাড়াও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও স্থানীয় দূতাবাসগুলোর বিদেশি কূটনৈতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

ভাষণ শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা স্থলে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং চা-চক্রে মিলিত হন।

এর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেনাকুঞ্জে এসে পৌঁছলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টাসহ সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) সস্ত্রীক তাঁকে স্বাগত জানান।

সংবর্ধনায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিগণ, প্রাক্তন প্রধান উপদেষ্টাগণ, মন্ত্রী ও মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্র্র্গ, প্রতিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, ডেপুটি স্পিকার, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতগণ, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণ, বিচারপতিগণ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, মূখ্য সচিব, সংসদ সদস্যগণ (ঢাকা এলাকার), প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তাগণ, বাহিনীত্রয়ের প্রাক্তন প্রধানগণ, ২০২৩ সালে ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক, স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সব বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারী, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/তাদের উত্তরাধিকারী, উচ্চপদস্থ অসামরিক কর্মকর্তা এবং তিন বাহিনীর চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করে।

দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ জাহাজ ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয় এবং অপরাহ্ন/সন্ধ্যায় বরিশাল, কক্সবাজার, বগুড়া, সিলেট, ঘাটাইল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর ও খুলনা সেনানিবাস/ঘাঁটিতে সংশ্লিষ্ট এরিয়া সদর দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৩’ উপলক্ষ্যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গণমাধ্যমেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে নানামুখী অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন ২০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর ‘বিশেষ অনির্বাণ’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। এছাড়া বাংলাদেশ বেতার ২১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ সন্ধ্যা ০৭৩০ ঘটিকায় ‘বিশেষ দূর্বার’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। ২১ নভেম্বর থেকে বেসরকারি টিভি চ্যানেলসমূহ ‘বিশেষ অনির্বাণ’ অনুষ্ঠানটি এবং বেসরকারি রেডিও চ্যানেলসমূহ ‘বিশেষ দুর্বার’ অনুষ্ঠানটি পর্যায়ক্রমে সম্প্রচার করছে। এদিকে, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসমূহে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়া, সশস্ত্র বাহিনীর আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

এছাড়া, ঢাকা, খুলনা, চাঁদপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনী জাহাজসমূহ ২১ নভেম্বর দুপুর ১৪০০ ঘটিকা হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বসাধারণের দেখার জন্য নিকটস্থ ঘাটসমূহে নোঙরকৃত অবস্থায় উন্মুক্ত রাখা হয়।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত