ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট যুক্তফ্রন্ট

নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট যুক্তফ্রন্ট

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট যুক্তফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে আজ বুধবার (২২ নভেম্বর)। আত্মপ্রকাশের দিনে দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোণষা দিয়েছে যুক্তফ্রন্ট গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোণষা দেওয়া হয়।

নতুন জোটে থাকা দলগুলো হলো– বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাত ঘড়ি প্রতীক), বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল (হাতপাঞ্জা), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল প্রতীক)।

সংবাদ সম্মেলনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম নতুন জোটের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়ে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত হয়েছি। সম্ভাবনা আছে ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন কয়েকটা দিন বিলম্ব হতে পারে, নাও হতে পারে। যদি মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন বিলম্ব হয়, তাহলে বাকি তারিখগুলোও আনুপাতিকহারে বৃদ্ধি পাবে। আমাদের জোট যুক্তফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেব। এর জন্য আমরা একটি বড় ঝুঁকি নিচ্ছি। অতীতেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে বড়-ছোট দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।’ যুক্তফ্রন্ট কি আশঙ্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আশঙ্কার উত্তর হলো, সরকার ওয়াদা করেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনকে জাতির সামনে এবং বিশ্বের সামনে গ্রহণযোগ্য করবে। আমরা এতদিন দাবি করেছিলাম, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে যাব না। তার উত্তর, দাবি আদায়ে সফল না হয়ে বিকল্প পন্থায় নির্বাচনে অবদান রাখার সুযোগ নিচ্ছি।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা ছিল কল্যাণ পার্টির। এখন যেহেতু কল্যাণ পার্টি নির্বাচনে যাচ্ছে, সেহেতু কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা আর নেই, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে সে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি আসছে না। ফলে আমাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যা আছে তার মধ্যে আমি অংশ নেবো, নাকি সব কিছু থেকে বিরত থাকব। আমি প্রথম বিকল্পটা বেছে নিয়েছি।’

যুক্তফ্রন্ট কয়টি আসনে নির্বাচন করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা এখনও স্থির করিনি। তবে আমাদের ১০০টি আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে।’ আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আশা করি, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু হবে। অতিরিক্ত আশা করি, সরকার ও নির্বাচন কমিশন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। এর নিশ্চয়তা আমার পক্ষে দেওয়া কোনোদিনও সম্ভব নয়। কারণ যদি না হয়, আমিও একজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি হবো এবং সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানে ‘আত্মহত্যা’ করা। অতীতে এমন মন্তব্য করেছিলেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম। এখন নির্বাচনে যাওয়ার মাধ্যমে ‘আত্মহত্যা’র সিদ্ধান্ত নিলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার নেতাকর্মীরা কষ্ট করে রাজনীতিটাকে টিকিয়ে রেখেছি। আমাদের টিকে থাকার একটা সীমা আছে। সেই সীমা আমরা ধরে রেখেছি। কিন্তু আমার এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অক্ষমতা হচ্ছে, এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আর পেরে উঠছি না। এটা একটা সুনির্দিষ্ট অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে ২৮ অক্টোবরের পর। আমাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমি নিশ্চুপ থাকব, নাকি একটা বিকল্পপন্থা অবলম্বন করব। আমি বিকল্পপন্থা নিলাম। কারণ, আমি যে কথাগুলো বলার চেষ্টা করি, সেটা সংসদে বলব।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি এখান থেকে বের হওয়ার পর বা বিদ্যমান অবস্থাতেই ৫০০ কমেন্ট আসবে- বিশ্বাসঘাতক, দালাল, বেচা হয়ে গেছে। মেজর জেনারেল ইবরাহিম বা বীরপ্রতীক ইবরাহিম বেচা যাওয়ার পাত্র নয়। এর জন্য আপনাদের কাছে আবেদন করব- ধৈর্য ধরুন, দেখেন কখন কী হয়, কী করি।’

এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতি আহ্বান রাখব উভয়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য পরিবেশে সংলাপের ব্যবস্থা করুন। জাতির মঙ্গলের জন্য সংলাপের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। আমি কখনোই বলব না বিএনপি তুমি নির্বাচনে আসো, কখনও বলব না এসো না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো ছিলেন- বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহাসচিব ফারুকুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, অতিরিক্ত মহাসচিব তফাজ্জেল হোসেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন, স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ প্রমুখ।

উল্লেখ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এতদিন বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত