জিম্মি মুক্তির বিনিময়

হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ বিরতিতে ইসরাইল

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ইসরাইলের মন্ত্রিসভা সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী হামাস ৫০ জনের মতো জিম্মিকে মুক্তি দেবে। ৭ অক্টোবর ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে বসে হামাস। জবাবে ইসরাইল হামাস শাসিত গাজায় হামলা শুরু করে। সেদিন হামাস দুই শতাধিক ইসরাইলিকে জিম্মি করে।

কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনার পর গতকাল বুধবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুমোদনের খবর সামনে এলো। ইসরাইলি গণমাধ্যম বলেছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে এ নিয়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। প্রধানমন্ত্রীর অফিস বলেছে, যুদ্ধবিরতির এ চুক্তির অধীনে হামাস অন্তত ৫০ নারী-শিশুকে মুক্তি দেবে। এ সময়ে চার থেকে পাঁচ দিন যুদ্ধ বন্ধ থাকবে।

এ সময় ইসরাইল প্রায় ১৪০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত চুক্তিটি প্রকাশ করা হয়নি। তবে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার কথাও এর মধ্যে ভাবা হচ্ছে।

হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় টানা বোমাবর্ষণ করছে দখলদার ইসরাইল। তাদের বোমা হামলায় গাজায় ১৪ হাজার ১০০’রও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা উদ্বেগজনক। অন্যদিকে গাজায় হামাসের হাতে ২৩৭ জন বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে ইসরাইলিদের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও রয়েছেন।

ইসরাইলের মন্ত্রিসভায় চুক্তি অনুমোদন : ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে তীব্র সংঘাত চলছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। সে সময় প্রায় ২০০ ইসরাইলি নাগরিককে জিম্মি হিসেবে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। এর পরই গাজায় পাল্টা হামলা চালায় ইসরাইল। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় ১৩ হাজার ১০০’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজারের বেশিই শিশু। গাজার চারদিকে অবস্থান করছে ইসরাইলি বাহিনী। ফলে সেখানকার সাধারণ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।

হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ কোনো কিছুই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই শত শত মানুষ হতাহত হচ্ছে। এর মধ্যেই খাবার, বিদ্যুৎ এবং পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। এর মধ্যেই হামাসের সঙ্গে একটি বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুমোদনের পক্ষে ভোট দিয়েছে ইসরাইলের মন্ত্রিসভা। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, আগামী চার দিনে ৫০ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এ প্রস্তাবের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা বা ওয়ার ক্যাবিনেট। চুক্তি অনুযায়ী, জিম্মিদের কয়েক ধাপে মুক্তি দেওয়া হবে। প্রতি ১০ জন জিম্মির বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ৩০ জিম্মির মুক্তির শর্তারোপ করা হয়েছে। এছাড়া চুক্তিতে চার থেকে পাঁচ দিনের সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, লড়াই কিছুদিনের জন্য স্থগিত থাকবে। আরো বেশি জিম্মির মুক্তির জন্য যুদ্ধবিরতি আরো দীর্ঘ হবে বলে জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি চুক্তির একটি অংশ। অতিরিক্ত ১০ জন করে জিম্মির মুক্তি মানে একদিন করে যুদ্ধবিরতি বাড়বে।

বিরতির পর ফের অভিযান শুরু হবে গাজায় : নেতানিয়াহু : হামাসের সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কবে থেকে শুরু হবে সে বিষয়ক কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা এখনো আসেনি; তবে বিরতি শেষে গাজা উপত্যকায় ফের ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভিযান শুরু করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গত মঙ্গলবার রাজধানী জেরুজালেমে এক জরুরি বৈঠকে হামাসের চার দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুমোদন করে ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে এক বক্তৃতায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা একটি যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি এবং যতদিন আমাদের লক্ষ্য পূরণ না হয়, ততদিন এই যুদ্ধ চলবে।’ সূত্র : বিবিসি।