ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আ.লীগের মনোনয়ন বোর্ড সভায় শেখ হাসিনা

নির্বাচন বানচালের চেষ্টার পরিণতি ভালো হবে না

নির্বাচন বানচালের চেষ্টার পরিণতি ভালো হবে না

কেউ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে তার পরিণতি কারো জন্য ভালো হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচন বানচালের যে কোনো ষডযন্ত্রের বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। কে কতদূর দৌঁড়াতে পারেন এবং জনগণ কাকে ক্ষমতায় দেখতে চায়, তা যাচাই করতে আসুন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করি।

গতকাল রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে রাজধানীর তেজগাঁওস্থ এলাকায় দলের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের আগে সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে যে সব দল ঘোষণা দিয়েছে, সে সব দলগুলোকে স্বাগত জানাই। যারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন আমি আপনাদের সবাইকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, আগামী সাধারণ নির্বাচন যে অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশের মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য বারবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা নির্বাচন করব। এক্ষেত্রে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না। আমরা চাই নির্বাচন কমিশন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করুক। আওয়ামী লীগের ভোট চুরির দরকার নেই, কারণ আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার জরীপেও একই চিত্র উঠে এসেছে। তাই আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেব।

দেশবাসীকে আত্মবিশ্বাসের সাথে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার ইচ্ছে মতো ভোট দিতে পারেন। তবে আমি দেশবাসীকে জাতির সেবায় আরেকবার পরিবর্তন আনতে আওয়ামী লীগের দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পায় কারণ, তাদের দুই শীর্ষ নেতা দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বে কেউ নেই। তারেকের বিরুদ্ধে এফবিআই সাক্ষ্য দিয়েছে এবং কানাডিয়ান পুলিশ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সাক্ষ্য দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’ দেশের স্বাধীনতা এনেছে, বাংলাদেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে, প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে বাড়ি দিয়েছে, প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছে এবং বাংলাদেশকে ডিজিটাল করেছে। আওয়মী লীগ সরকার দেশবাসীকে একটি আধুনিক ও উন্নত জীবন দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে এবং দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নৌকা ক্ষমতায় থাকলে জনগণ তাদের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি পায়। এটাই বাস্তবতা। তাই আমাদের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার জন্য তাদের সুযোগ করে দিন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান প্রহসনমূলক হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছিল এবং তার স্ত্রী তার স্বামীর পথ অনুসরণ করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনসহ প্রহসনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে। ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনমূলক নির্বাচনের দেড় মাসের মধ্যে দেশের জনগণ বিএনপি সরকারকে উৎখাত করেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদচিহ্ন অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সংগ্রামের পর ভোট ও গণতন্ত্রের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী হরতাল, অবরোধ ও অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যখনই আপনারা দেখবেন কোনো অগ্নিসংযোগের সহিংসতা ঘটছে, তখনই অপরাধীদের ধরে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করুন। আমরা এ কথা বলছি না যে, আপনি আইন নিজের হাতে তুলে নিন। জনগণ অগ্নিসংযোগ সহিংসতা প্রতিরোধ করতে শুরু করলে অবশ্যই এর অবসান হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন বড় দেশ অগ্নিসংযোগ সহিংসতাকারীদের সমর্থন করছে কি না, তা আমরা পরোয়া করি না। আমার কাছে আমার দেশই বড়। আমি এখানে আমার দেশের জন্য কাজ করতে এসেছি, অন্য কোনো দেশের সেবা করতে নয়। কিছু বড় দেশ আছে যারা তাদের সেবা করে তাদের পক্ষ নেয়। তাদের পছন্দের কোনো দেশ যদি অন্য কোনো দেশে আক্রমণ করে, তবে তারা এটিকে আক্রমণ বলে না। এমনকি তারা যে দেশগুলোর পক্ষপাতী তাদের দ্বারা পরিচালিত কোনো অমানবিক কাজও তারা দেখতে পান না।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড সারা বাংলাদেশে ৩০০ আসনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তাদের প্রথম সভা করেছে। আগামী শুক্র ও শনিবার বোর্ডের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত শনি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চার দিনে ৩০০ আসনের জন্য ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ, অর্থাৎ প্রতি আসনে গড়ে ১১টি করে ফরম বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি ফরম ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ায় মনোনয়নপত্র বিক্রি করে আওয়ামী লীগ মোট ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা আয় করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত