ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন

অন্ধকার গুহায় আলোর ঝিলিক

বিএনপি নির্বাচনে এলে তপশিল রিশিডিউল করা যেতে পারে : সিইসি
অন্ধকার গুহায় আলোর ঝিলিক

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকল বাধা কেটে অংশগ্রহণমূলক হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য সরকারের সঙ্গে ‘তলে তলে’ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিকদলগুলো। সে ক্ষেত্রে রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) এবং রাজনৈতক নেতাদের বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত মিলছে। ফলে অন্ধকার গুহায় দেখা যাচ্ছে আলোর ঝিলিক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন নির্বাচিত হতে না পারেন, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে বলেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কেউ বিনা ভোটে (প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

দ্বাদশ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাস করে আসতে পারবেন না। অন্য দলের প্রার্থী না থাকলে প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে।

সূত্রমতে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা অন্যান্য দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকেও সহযোগী ও উৎসাহ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী জানান, দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যে কোনো নেতা বা যে কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন সরকার প্রধান।

আরেক প্রার্থী জানান, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজনে ডামি প্রার্থী রাখতে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। একইসঙ্গে নির্বাচনের সময় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতেও নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগপ্রধান।

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমাদের কমিশনাররা বলেছেন, যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে তপশিল রিসিডিউল করা যেতে পারে, এটা নির্বাচন পেছানো বলা যায় না। তপশিল রিসিডিউল করে তাদের (বিএনপি) অ্যাকোমোডেট করা হবে।

বিএনপি ভোটে না আসলে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে আমি উত্তর দেব না। বিএনপিকে একবার নয়, দুইবার নয়, পাঁচবার নয়, দশবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা আসেনি। এখনো সময় আছে। সমঝোতা হলে আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। আশা করি, তারা যদি আসে পুরো জাতির জন্য সৌভাগ্য হবে। আমরা চাই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক।

তপশিল পেছানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনাররা তপশিল পুননির্ধারণের কথা বলেছেন। এর অর্থ এই নয় যে, ভোটের তারিখ পেছানো হবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা এখতিয়ারের বাইরে যাব না। প্রশাসনের রদবদল কে কখন করেছিল? বিচারপতি লতিফুর রহমান সাহেব করেছেন। তিনি সিইসি ছিলেন কি না জানি না। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন। আমরা নির্বাচনের স্বার্থে যেটা ভালো মনে করব সেটাই করব। আমরা এখতিয়ারের বাইরে যাব না। এখতিয়ারের মধ্যে যা আছে করব।

সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সেনাবাহিনী (সশস্ত্র বাহিনী) নিয়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। যদি প্রয়োজন মনে করি, চাইলে তারা (সরকার) আমাদের দেবে। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই।

অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন-পূর্ব সময় হচ্ছে তপশিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত। এতে কতগুলো ধাপ আছে। যখনই তপশিল ঘোষণা করে থাকি একটা ধাপ হচ্ছে মনোনয়নপত্র দাখিল পর্যন্ত। এরপর বাছাই। এরপরও কিছু স্টেজ থাকে। এরপর আপিল স্টেজ থাকে। শুনানি করে সিদ্ধান্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেব। এরপর থাকে প্রত্যাহার। সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে রিটার্নিং অফিসার চূড়ান্তভাবে বরাদ্দ করবেন। তারপর বলবেন এখন আপনারা প্রচার করতে পারবেন। এরপর ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে সেটা থেমে যাবে।

সিইসি বলেন, বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী একটি বৈঠক করেছেন। আইনে প্রার্থীর কথা বলা আছে। এক্ষেত্রে এখন কেউ প্রচার চালাতে পারে। কেননা, এখনো কেউ প্রার্থী হয়নি। এছাড়া কোনো আইনে বলা আছে যে, দলের মনোনয়নপত্র বিক্রির সময় শোডাউন করা যাবে না।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত