দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ভোটের তারিখ ঠিক রেখে মনোনয়ন জমার সময় ৭ দিন বাড়ানো সম্ভব

প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলে ভোটের তারিখ ঠিক রেখে তপশিল পুনর্নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেক্ষেত্রে মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় অন্তত সাত দিন বাড়াতে পারে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তবে বিএনপি নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত নিলে কেবল তপশিল পুনর্নির্ধারণ করবে ইসি। এছাড়া তপশিল পুনর্নির্ধারণ করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে ইসি।

সূত্র জানায়, নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করবে কি না এ ব্যাপারে এখনো কোনো স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয়নি। এর আগে ২০১৮ সালে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে ঢাকা ও লন্ডনের মধ্যে টানাপড়েন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এবছরও পরিস্থিতি আরো জটিল। কেননা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাকারে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। লন্ডনে বসে বাংলাদেশে দলীয় রাজনীতিতে দিকনির্দেশনা দেয়ার মতো সুযোগনেই। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিত কর্থা বার্তা বলার মতোও নেই। তারেক জিয়া লন্ডনে থাকলেও দেশের রাজনীতিতে তার ভূমিকা রাখার সুযোগ কম। এ ছাড়া দন্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মতো তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। বিএনপির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তারেক জিয়া কোনো অবস্থায় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা পক্ষে নয়। এদিকে বিএনপির অনেক নেতা তৃণমূল বিএনপি নামে রাজনৈতিক দলের হয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারেক জিয়া বিএনপির ১ ওয়ান ম্যান শো’তে পরিণত হওয়ায় তার সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ যেতে পারেন না। বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, তারেক জিয়া ছাড়া সেটি সুস্পষ্ট করে বলার মতোও কেউ নেই। নির্বাচনের তপশিল পুনর্নির্ধারণ করার বিষয়টি এখন নির্ভর করছে বিএনপির সিদ্ধান্তের ওপর। তবে দেশে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৫ থেকে ৩০টি দল নির্বাচনে অংশ গ্রহনের স্দ্ধিান্ত নেয়ায় আগামী জাতীয় অংশ গ্রহণমূলক হবে এত কোনো সংশয় না থাকলেও বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচনটা গুরুত্ব হারাবে। আত্মতৃপ্তির জন্য নির্বাচন কমিশন শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বিএনপি নির্বাচনে আসে কিনা। বিএনপি নির্বাচনে আসলে নির্বাচনের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হযে যাবে। নিবাচনি তপসিলেও পরিবর্তন আসবে। ভোটগ্রহণের তারিখ ঠিক রেখে তখন তপসিল রিশিডিল করতে পারে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, ভোটের ৫২ দিন আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে ইসি। গত ১৫ নভেম্বর ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। সে হিসেবে প্রার্থীরা ২০ দিন সময় পাবেন প্রচার কার্যক্রম চালাতে। আইন অনুযায়ি সর্বনিম্ন ১৫ দিন প্রচার-প্রচারণার সময় দেয়া যায়। সে ক্ষেত্রে এখানে কিছু সময় কমাতে পারে ইসি। এছাড়া এবার তপসিলে শুনানির সময় দেয়া হয়েছে ১০ দিন, এ সময় কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছে ইসি। এ কারণে তপসিল রিশিডিউল হলে ভোটের দিন ঠিক রেখে। অন্তত ৭ থেকে ১০ দিন মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় বাড়ানোর সুযোগ পাবে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমাদের কমিশনাররা বলেছেন যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে তপশিল রিসিডিউল করা যেতে পারে, এটা নির্বাচন পেছানো বলা যায় না। তপশিল রিসিডিউল করে তাদের (বিএনপি) অ্যাকোমোডেট করা হবে। বিএনপি ভোটে না আসলে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলে নিয়ে আমি উত্তর দেবো না। বিএনপিকে একবার নয়, দুবার নয়, পাঁচবার নয়, দশবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা আসেনি। এখনো সময় আছে। সমঝোতা হলে আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। আশা করি, তারা যদি আসে পুরো জাতির জন্য সৌভাগ্য হবে। আমরা চাই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক। তপশিল পেছানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনাররা তপশিল পুনর্নির্ধারণের কথা বলেছেন। এর অর্থ এই নয়, ভোটের তারিখ পেছানো হবে। তারিখ ঠিক রেখে তপসিল রিশিডিউল করা হবে।

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি প্রার্থীর নাম ঘোষনা করেছে। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে এবারের নির্বাচনের প্রাক্কালে আলোচনায় আসা তৃণমূল বিএনপিও। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও তাদের জোট মিত্রদের অনেকের অবস্থান এখনো বিপরীত মেরুতে। তারা তপশিল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। পালন করছে হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি। এমন অবস্থায় বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে কি না, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো সমঝোতা হবে কি না কিংবা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বৃহৎ স্বার্থে পুনঃতপশিল বা ভোটের তারিখ পেছানো হতে পারে কি না, এসব নিয়েই এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে নির্বাচন কমিশন দফায় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসলেও তাতে সাড়া মেলেনি বিএনপি। দলটির নেতারা শুরু থেকেই বলে আসছেন, দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তবে অনেকে বলছে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে। কেন না রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই।

এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। সাবেক এই ফার্স্ট লেডি মনে করেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হতে পারে।

সাক্ষাৎকালে তফসিলের বিরোধিতা করা দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কোনো আলোচনা হতে পারে কি না, সে বিষয়টিও তুলে ধরেছেন রওশন এরশাদ। এছাড়া মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ৩০ নভেম্বর থেকে কিছুটা পেছানো এবং প্রয়োজনে তপশিল পেছানোর বিষয়েও রাষ্ট্রপতিকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনের তারিখ পেছানো হতে পারে কি না, এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তপশিল পেছানো বা নির্বাচনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত। সময়সীমার মধ্যে তারা তাদের যে কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন। এখানে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কিছু বলার নেই। নির্বাচনের বিষয়ে ৩০ নভেম্বরের পর সবকিছু স্বচ্ছ হয়ে যাবে। নির্বাচন কিভাবে করবে সেটি পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। নির্বাচন সম্পন্ন করার একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। এ সময়সীমার ভেতরে থেকে ভোট সম্পন্ন করতে হবে। কমিশন যদি মনে করে ভোট কিছুদিন পেছানো দরকার সেটি তারা করতে পারে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে তপশিল পেছানোর সুযোগ আছে। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনছি বিএনপি নির্বাচনে আসতে আগ্রহী যদি তারা পর্দার অন্তরালে আলাপ-আলোচনা বা জোটবদ্ধ হয় তাহলে তপশিল পেছানোর সুযোগ আছে।

জানা যায়, জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করে পরে তা পেছানোর নজির অতীতেও ছিল। কিন্ত এবার সেটা হবে কি না, কিংবা বিএনপি আদৌ নির্বাচনে আসবে কি না, তা এখনো চূড়ান্তভাবে বলা যাচ্ছে না। রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ বলছেন, শিগগিরই এটি পরিষ্কার হয়ে যাবে। ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া যাবে। ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই করা হবে। বাছাইয়ে কারো মনোনয়ন ফরম বাতিল হলে তিনি আপিল করার সুযোগ পাবেন। কোনো প্রার্থী ইচ্ছা করলে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম প্রত্যাহার করতে পারবেন। আর প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ১৮ ডিসেম্বর।