জনগণকে ভোটমুখী করতে ‘স্বতন্ত্র’ কৌশল আ.লীগের

প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নেই বিএনপি ও তার মিত্ররা। তবুও বেকায়দায় পড়েছে নৌকার প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দলের বহু নেতা স্বাতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। অনেকে আবার নির্বাচন কমিশন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে ভোটের মাঠে ডামি প্রার্থী রাখার কথা আগেই বলেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যাতে নির্বাচিত হতে না পারে, সেজন্য দলের বিদ্রোহীদের প্রতি নমনীয়তা দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে অতীতে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোরতা দেখিয়েছিল দলটি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গেলেই নেয়া হতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা।

দ্বাদশের সংসদ ভোটে পাখির চোখ করে আছে, উন্নয়ন সহযোগী ও বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলো। তারা বারবারই বলে আসছে, অবাধ-সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা। বাস্তবতার নিরিখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন কৌশলে আগাচ্ছে আওয়ামী লীগ। জনগণকে ভোটমুখী করতে স্বতন্ত্র কৌশল নিয়েছে দলটি। স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের একটি কৌশলগত অবস্থান বলে গত সোমবার জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর সেই বিষয়টি এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন প্রাপ্তদের। দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজয়ের আশঙ্কায় রয়েছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে সারা দেশের প্রায় প্রতিটি আসনেই ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা ভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের মনোনয়ন বঞ্চিতরা এরইমধ্যে ভোটে লড়াইয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। কোথাও কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের সঙ্গে নৌকার সমর্থকদের সংঘাতও বাঁধছে।

স্বতন্ত্রের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, অনেকেই কয়েক দফা এমপি ছিলেন। তাদের কর্মকাণ্ডে দলের নেতাকর্মীরা সন্তুষ্ট নন। এমপিরা বিভিন্ন স্থানে স্বজনপ্রীতি করেছেন, ভাইলীগ, এমপিলীগ তৈরি করেছেন। কর্মীরা এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্তি চায়। স্বতন্ত্র হয়ে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেওয়া দলের বিরুদ্ধে নয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

স্বতন্ত্রের ব্যানারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকেও পদত্যাগ করছেন কেউ কেউ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন যারা আওয়ামী লীগ থেকে টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন। ফলে ভোটে লড়াই করাটা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে বেশ কঠিন হতে পারে। কারণ এই সমস্ত প্রভাবশালী নেতাদের নিজেদের বহু ভোট রয়েছে। যা ভোট ব্যাংককে প্রভাবিত করতে পারে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতে ডামি প্রার্থীর কথা বলা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনে যেন ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ে। এমন সিদ্ধান্তে দলের প্রার্থীরা টেনশনে পড়ে গেল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের প্রার্থীদের অসুবিধার বিষয়টি অবশ্যই আমরা দেখব। এখনো তো সময় আছে।

৩০ তারিখ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়। এরপর যাচাই-বাছাই চলবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধন্ত নেব। ফলে এই মুহূর্তে এত চিন্তা করার কিছু নেই। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই লক্ষ্য রাখব।

উল্লেখ্য, বিএনপি ও তার জোট শরিকরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় ওই নির্বাচনে ১৫১টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীরা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১২৭টি আসন, জাতীয় পার্টি ১৮টি, জেপি একটি, জাসদ তিনটি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি আসন পেয়েছিল।

ওই নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা মহলের সমালোচনা শুনতে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে। ফলে এবার আর সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি না এলেও ভোটের মাঠে যত বেশি সম্ভব দল ও প্রার্থী আনার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এছাড়া দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করলেও কৌশল হিসাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে রাখতে চাইছে আওয়ামী লীগ।