ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দুয়ারে ভোট ‘ধোঁয়াশায়’ ১৪ দলের শরিকরা

দুয়ারে ভোট ‘ধোঁয়াশায়’ ১৪ দলের শরিকরা

দুয়ারে কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটের মাত্র আর ৩৮ দিন বাকি। ভোটমুখী দলগুলো নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলীয় মনোনয়ন বিক্রি ও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ গুছিয়ে আনছে দলগুলো। নির্বাচন কমিশনের তফশিল অনুযায়ী আজকে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। দ্বাদশ নির্বাচনে টানা জয়ের ধারা ধরে রাখতে নিজেদের মতো করে ভোটকৌশল তৈরি করছে আওয়ামী লীগ।

দুটি আসন বাকি রেখে গত রোববার ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ১৮ নভেম্বর ভোটে জোটবদ্ধ লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরিকরা। তবে নৌকার প্রার্থী ঘোষণার আগে ১৪ দলীয় জোট শরিকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেনি দলটি। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের শরিকদের মধ্যে। যে দুটি আসনে আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেনি তার একটিতে ১৪ দলীয় জোট শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বর্তমান এমপি। আরেকটিতে সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নেতা সেলিম ওসমান। দ্বাদশের ভোটে আসন রফার যাবতীয় সমীকরণ নিয়ে ১৪ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে কানাঘুষা চলছে।

শরিকদের নৌকা পেতে হলে জোটের প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা থাকতে হবে- এমনটা জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শরিক দল হোক আর যে হোক, আমাদের বিবেচনায় যেটা আসবে, আমি আমার দলে প্রার্থী নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থীকে বাছাই করছি। অন্য দল থেকে এলেও তার জনপ্রিয়তা থাকতে হবে। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল বলছে, বিগত নির্বাচনের মতোই ৭ জানুয়ারির ভোট জোটগতভাবেই করবে আওয়ামী লীগ। আসন বণ্টনের বিষয়ে ১৪ দলীয় জোট শরিকদের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারে শেষ দিন। এর মধ্যেই সবকিছু চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না এলে শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা করে আসন বণ্টনের কাজে মনোযোগী হবে আওয়ামী লীগ। অনেক স্থান থেকে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে জোট শরিকদের ছাড় দেওয়া হবে। এজন্য ১৪ দলের জোটে থাকা দলগুলোকে তাদের প্রার্থীরা আলাদাভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় সব আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণা করলেও জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে বলে জানান দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আমরা জোটবদ্ধ নির্বাচন করেছিলাম। সেবারও প্রায় ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে মহাজোটের মধ্যে সমন্বয় করা হয়েছিল। গতবারও প্রায় সব আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল, পরে জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছিল। এবারও ২৯৮ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রথমেই বলেছি, জোটবদ্ধ নির্বাচন করব। সেটি কিন্তু দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। মনোনয়ন দিলেও জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। কোন জায়গায় কীভাবে হবে, সেটি যেহেতু ঠিক করা হয়নি; সেজন্য সব আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এবং পরে জোটের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৪ দলের নেতারা বলছেন, জোটবদ্ধ নির্বাচন না করার বিষয়টি এখনো শেষ হয়ে যায়নি। নতুন করে নতুনভাবে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। অন্যান্য নির্বাচনে তপশিল ঘোষণা করার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে জোট নেতাদের বৈঠক হয়। কিন্তু এবার সেটা হয়নি।

১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, জোটের সমঝোতার বিষয়ে আওয়ামী লীগ থেকে এখনো কিছু জানায়নি। সমঝোতার বিষয়টি যত দেরি হবে, ততই শরিকদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হবে। আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থী মাঠে এরই মধ্যে কাজ করছে, পরে তাদের মাঠ থেকে ফিরিয়ে আনা জটিল হবে।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা। প্রধানমন্ত্রী ডাকলেই আমরা তার সঙ্গে বৈঠক করব। সেখানে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা তুলে ধরা হবে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমরা জোটগতভাবে নির্বাচনে যাচ্ছি, সেটা পরিষ্কার। ১৪ দলীয় জোটের সবশেষ সভায়ও এমন সিদ্ধান্তই হয়েছে। তবে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের প্রধান সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, জোটগতভাবেই নির্বাচন হবে। জোটপ্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বসে শরিকদের আসন বিন্যাস করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত