ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হরতাল-অবরোধের খেলায় মেতেছে বিএনপি

২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি নবম দফা কর্মসূচি
হরতাল-অবরোধের খেলায় মেতেছে বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে। তবে চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি রোববার, সোমবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার এই চার দিন দিচ্ছে। মাঝখানে মাত্র একদিন মঙ্গলবার অবরোধ কিংবা হরতাল আহ্বান থেকে বিরত থাকছে দলটি। সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার সরকারি অফিস বন্ধ থাকে। অর্থাৎ চার দিন সরকারি অফিস চলাকালে হরতাল বা অবরোধ থাকায় বেকায়দায় পড়ছেন মানুষ। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হচ্ছে তাদের।

জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে তেজগাঁও রেজিস্ট্রি ভবনে এসেছেন সেফালি বেগম। তিনি বলেন, বিএনপি যেভাবে হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে, এতে মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন। সপ্তাহে সরকারি অফিস পাঁচ দিন খোলা থাকলেও বিএনপির হরতাল-অবরোধ থাকছে চার দিন। মঙ্গলবার অবরোধ কিংবা হরতাল নেই, সেজন্য রেজিস্ট্রি অফিসে এসেছি। কিন্তু মানুষের ভিড়ে কাজ শেষ না করেই বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। সেফালি বেগম আরো বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হরতাল-অবরোধের নামে গাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে। সেজন্য হরতাল-অবরোধের দিনে বাড়ি থেকে বের হতে ভয় লাগে।

জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ডের প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দেয় বিএনপি। এরপর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত কয়েক দফায় সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি দেয় বিএনপি এবং ১৯ ও ২০ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয়। তবে ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। শুক্রবার ও শনিবার অবরোধ বিরতি দিয়ে রোব ও সোমবার (২৬ ও ২৭ নভেম্বর) দেশব্যাপী আবারো ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা করে বিএনপি। তবে এসব কর্মসূচিতে বিশেষ করে বাসে চোরাগোপ্তা হামলা চলছে শুরু থেকেই। হরতাল বা অবরোধ- দুই ধরনের কর্মসূচিতে প্রায় প্রতিদিনই বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে এখানে সেখানে। হরতালেই আগুনের ঘটনা বেশি।

এবার অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি একই সঙ্গে করছে। গতকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টা অবরোধ ছিল, আর আজকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হরতাল চলবে। গত সোমবার বিকালে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি নবম দফা কর্মসূচি ঘোষণা করল।

২৯ অক্টোবর হরতাল পালন করলেও ৩০ অক্টোবর বিরতি দিয়ে টানা তিন কর্মদিবস ডাকা হয় অবরোধ। পরের সপ্তাহ থেকে ৭, ১৪ ও ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে বাকি কর্মদিবসগুলোতে কর্মসূচি ডাকা হয়। গত ১৫ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর ১৯ ও ২০ নভেম্বর হরতাল পালন করে বিএনপি। বাকি দিনগুলোতে ডাকা হয় অবরোধ। এবার মঙ্গলবার বাদ দিয়ে অবরোধ ও হরতাল মিলিয়ে টানা দুই দিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

বিএনপি টানা কর্মসূচি দিয়ে এলেও তার প্রভাব ধীরে ধীরে কমে আসছে। দলের নেতাণ্ডকর্মীদের রাজপথে তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে না। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে ‘দুর্জয় সাহস’ দেখানোর আহ্বানেও কাজ হচ্ছে না।

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় বহু নেতা কারাগারে। নাশকতার মামলায় সাজাও হয়েছে বহু জনের। বাকি নেতারা আত্মগোপনে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী নিজেও আসছেন না প্রকাশ্যে। হরতাল বা অবরোধের সকালে গুটি কয়েক নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করে আবার অজ্ঞাত স্থানে ফিরে যান।

এর মধ্যে ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ভোট থেকে দূরে থাকলেও আওয়ামী লীগ ও সমমনা, সংসদে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি এবং কয়েকটি নতুন দলের ভোট প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছে। জাতীয় পার্টিও ২৮৯ আসনে পার্থী ঘোষণা করেছে। আজকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। তবে বিএনপি ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তা পেছানো হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত