ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্বে প্রভাব পড়ল জাতীয় নির্বাচনে

ভোটে অংশ নিলেন না রওশন ও সাদ এরশাদ
ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্বে প্রভাব পড়ল জাতীয় নির্বাচনে

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ এবং দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না রওশন এরশাদ ও সাদ এরশাদ। রওশন এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টি দলের নেতাদের অবমূল্যায়ন করেছে। এ কারণে তিনি নির্বাচন করবেন না। তিনি বলেন, আমি দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এবারও তপশিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সহযোগিতা না করায় এবং দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মনোনয়ন না হওয়ায় তথা দলের নেতাদের অবমূল্যায়ন করার কারণে আমার নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদকে মনোনয়ন ফরম দিতে শেষ দিন রাত ৯টা পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ে ছিলেন জাতীয় পার্টির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনেও ফরম না নিলে রওশন এরশাদের আসনে কী করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখে দলটি।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম জানান, রওশন এরশাদের জন্য ময়মনসিংহ-৪ আসনটি খালি রাখা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরম নেননি। সেখানে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা সভাপতি আবু মো. মুসা সরকারকে প্রার্থী করা হয়েছে। এর আগে ২৭ নভেম্বর ২৮৯ আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে জাতীয় পার্টি। রওশন এরশাদের জন্য ময়মনসিংহ-৪ আসন ফাঁকা রেখে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছিল দলটি। গত বুধবার ময়মনসিংহ-৪ আসনে প্রার্থীর নাম জানায় জাতীয় পার্টি। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন আবু মুসা সরকার।

সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা থেকে একেবারেই সংসদের বাইরে ছিটকে পড়তে চলেছেন রওশন এরশাদ। তার প্রয়াত স্বামী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টির মনোনয়ন তালিকায় স্থান পায়নি তার অনুসারী কোনো নেতা। রওশন ও এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ ওরফে সাদের প্রার্থিত রংপুর-৩ আসনে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের নিজেই প্রার্থী হয়েছেন। দলের অন্তর্দ্বন্দ্বর কারণে জাপার রাজনীতির মাঠে চিত্র দ্রুতই বদলে যেতে থাকে। তাই দু’তিন মাস আগেও সরকার বা আওয়ামী লীগের কাছে রওশন এরশাদের যে কদর ছিল, তা এই মুহূর্তে নেই বলে মনে করা হচ্ছে। আর এর পেছনে থাকতে পারে বেশ কিছু কারণ। প্রথমত রওশন এরশাদের অনেক বয়স হয়েছে, ভুগছেন নানা রোগ-ব্যাধিতে। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় সংসদে ভূমিকা রাখা অথবা দলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা কোনোটিই ঠিকভাবে তার পক্ষে করা সম্ভব হচ্ছে না।

দ্বিতীয়ত : জাতীয় পার্টির উপদলীয় কোন্দলে এরই মধ্যে তিনি ও তার অনুসারীরা বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। কিন্তু একটি ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ জরুরি ছিল।

জাপা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে জিএম কাদের তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তবে পরবর্তীতে তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেন। মোটাদাগে দুটি শর্তে জি এম কাদের নির্বাচনে যেতে সম্মত হন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একটি হলো নির্বাচনে জয়ী হলে দলীয় প্রধান হিসেবে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন। এ ছাড়া তার সিদ্ধান্তে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। জিএম কাদের দেওয়া শর্তগুলোর ব্যাপারে সরকারের ইতিবাচক সাড়ার মধ্য দিয়েই মূলত রওশন এরশাদের রাজনৈতিক মৃত্যুর বীজ রোপিত হয়ে গেল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত