ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আসনে আসনে নির্বাচনি আমেজ

* বিএনপিহীন ভোটে ২৯ দলের অংশগ্রহণ * চলছে মনোনয়ন বাছাইয়ের কাজ
আসনে আসনে নির্বাচনি আমেজ

দ্বাদশের ভোটে নেই বিএনপি ও তার মিত্ররা। ভোট বর্জন করে সরকার পতনের একদফা দাবিতে আন্দোলন করছে দলগুলো। বিএনপি ছাড়াই বিপুল উৎসাহে জমে উঠছে ভোটের আমেজ। বিএনপিহীন ভোটে অংশ নিয়েছে ২৯টি রাজনৈতিক দল। এছাড়াও ভোটের লড়াইয়ে মাঠে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

এর আগে দশম সংসদ ভোটেও অংশ নেয়নি বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। সেবারই প্রথম সংবিধানের আলোকে দেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ ভোটে মাত্র ১২টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। তবুও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩টি আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীরা। সেই নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত টানা ৫ বছর সরকার পরিচালনা করে আওয়ামী লীগ। তবে দ্বাদশে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি আগেভাগেই ঘোষণা দিয়েছেন কোনো আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় প্রধানের এমন ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া নেতারা উৎসাহের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সারা দেশে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলটির ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলীয় নেতাদের গণহারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি হেভিওয়েট কারো সীমানা পেরিয়ে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে যায়, এটাতে আমরা বাধা দিতে পারি না। গণতন্ত্র হলো প্রতিযোগিতা। সুষ্ঠু নির্বাচন, সুস্থ প্রতিযোগিতা। এখানে প্রার্থীকে প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করি আমরা।

একাদশে সংবিধানের আলোকেই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট করে ভোটে অংশ নেয় বিএনপি। সেবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়েও তেমন সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। সে নির্বাচনে মাত্র ৮টি আসনে জয় পায় ঐক্যফ্রন্ট। এরমধ্যে বিএনপির প্রতিনিধি ছিল মাত্র ৬ জন। আর গণফোরামের দুজন। পরবর্তীতে সংরক্ষিত কোটায় একটি নারী আসন পায় বিএনপি। নির্বাচনের পরপরই ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তারা প্রথমে ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। পরে ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ীরা শপথ নিয়ে সংসদে অংশগ্রহণ করেন। তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচিত হলেও শপথ নেননি। বিএনপির বাকি সদস্যরা শপথ নেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ৩ হাজার ৬৫ জন। তখন যাচাই-বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর চূড়ান্ত প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৮৪৮ জন। সেবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ৩৯টি রাজনৈতিক দল।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভোটের হাওয়া বইতেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়ে একদফা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তারা। তবে দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও এবার দলটির বেশ কয়েকজন নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য, ভোটে অংশ নিতে দল ছেড়েছেন। এমনকি বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে এসে ভোটে অংশ নিচ্ছেন। এরইমধ্যে মনোনয়ন দাখিলের দিনক্ষণ শেষ হয়েছে। চলছে মনোনয়ন বাছাইয়ের কাজ। আগামীকাল সোমবার মনোনয়ন বাছাইয়ের পর্ব শেষ হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৯টি দল ভোটের লড়াইয়ে সামিল হচ্ছে। এছাড়া অনিবন্ধিত আরো বেশ কিছু দল জোটবদ্ধভাবে ভোটে অংশ নিচ্ছে। আছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরও ছড়াছড়ি। এরইমধ্যে ৩০০ আসনের বিপরীতে ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনো মনোনয়ন দাখিল করেছেন। প্রতিটি আসনে গড়ে ৯ জনের বেশি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এবার ভোটে আসছে না বিএনপিসহ নিবন্ধিত ১৪টি রাজনৈতিক দল। বিএনপিহীন ভোট কতটা জমবে এ আলোচনা ছিল সর্বত্র। স্বতন্ত্র আর সিংহভাগ দল ভোটে আসায় আসনে আসনে দেখা গেছে নির্বাচনি আমেজ। প্রতীক বরাদ্দের আগেই অনেক স্থানে প্রার্থীদের পোস্টার ছেয়ে গেছে।

উৎসাহ-উদ্দিপনায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হবে বলেও মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন চায়। নির্বাচনকে ঘিরে দেশের প্রতিটি আসনে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। মানুষের ভিতরে প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এরইমধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে জনগণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত