ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বের ইতিহাস শুরু

মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বের ইতিহাস শুরু

মূলত মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বের ইতিহাস শুরু হয় একাত্তরের ৩ ডিসেম্বর থেকেই। মুক্তিবাহিনীর একের পর এক হামলায় পাকিস্তানি হানাদাররা দিশাহারা হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের বেশে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। তারা একের পর এক যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করে পাকিস্তানি সেনাদের ফাঁদে ফেলে। এদিন যশোর, কুষ্টিয়া ও দিনাজপুর জেলার আরো কয়েকটি থানা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে।

মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে না পেরে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে দুপুর ১২টার দিকে বরগুনা শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বরগুনার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পৈশাচিক নারী নির্যাতন ও নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। এ দিনে তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন জানায়, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে যে কোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তারা ভেটো দেবে।

একাত্তরের এ দিনে ভারতের পূর্বাঞ্চল কমান্ডার লে. লে. জে. জগজিৎসিং আরোরার অধিনায়কত্বে ঘোষিত হয় বাংলাদেশ-ভারত যুক্ত কমান্ড। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী হলো মিত্রবাহিনী। গভীর রাতেই মিত্রবাহিনী অবরুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্ত এলাকায় অবস্থিত মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধরত বাংলাদেশের সশস্ত্র ও মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় মিত্রবাহিনীর নবম ডিভিশন গরীবপুর-জগন্নাথপুর হয়ে যশোর ঢাকা-মহাসড়কসহ চতুর্থ ডিভিশন ও ষষ্ঠ ডিভিশনের বেশ কয়েকটি এলাকায় যোগাযোগ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর জেলার আরও কয়েকটি থানা মুক্তিবাহিনীল দখলে চলে আসে। এদিন বিকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতার এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় ভারতের বিমান বাহিনীর স্থাপনা ও রাডার স্টেশনগুলোয় বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার যুদ্ধ বলে চালিয়ে দিয়ে জাতিসংঘের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা। তারা চেয়েছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা আদায়। পাকিস্তান চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকে যদি দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধ হিসেবে দেখানো যার, তাহলে জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার জন্য উভয় পক্ষকে বাধ্য করবে এবং উভয় দেশে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করবে। আর এতে করে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের মাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করবে। এ উদ্দেশে পাকিস্তাান বিমান বাহিনী এই দিন বিকালের দিকে ভারতের অমৃতসর, পাঠানকোট, শ্রীনগর ও অবনীপুরসহ দিল্লির কাছাকাছি আগ্রা বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। ভারতে জারি হয় জরুরি আইন। ভারতের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর এ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাত সাড়ে ১১টায় ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। এদিন ভারতীয়দের উদ্দেশে ভারণে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, আজ বাংলাদেশের যুদ্ধ ভারতের যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ মোকাবিলায় দেশকে তৈরি করা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড দুর্বার বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ে। গভীর রাতে পূর্ণাঙ্গ লড়াই শুরু হয়। চতুর্দিক থেকে বাংলাদেশের দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ শুরু করল ভারতীয় সেনা, বিমান এবং নৌবাহিনী। আর মুক্ত এলাকা থেকে যোগ দিল বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী। ভারতীয় নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী সব পাকিস্তান অধিকৃত বন্দর অবরোধ করে জলপথে সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। আক্রমণের প্রথমেই হানাদার বাহিনীর সাবমেরিন গাজী বঙ্গোপসাগরে ডুবে যায়। পাকিস্তান এয়ারলাইন্স পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে সব ফ্লাইট বাতিল করে। সামরিক কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ঢাকায় সান্ধ্য আইন জারি ও নিষ্প্রদীপ ব্যবস্থা পালনের নির্দেশ দেয়। এদিন ১১নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী কামালপুর বিওপি আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত