ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

সেলিব্রেটিসহ ১০০’রও বেশি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল

সেলিব্রেটিসহ ১০০’রও বেশি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২ হাজার ৭১৩টি মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষ হচ্ছে আজ। এরই মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে সারা দেশে সেলিব্রেটিসহ ১০০’রও বেশি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসি সূত্র জানায়, রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। গতকাল রোববার মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়। ১ শতাংশ ভোটারের ভুয়া স্বাক্ষর পাওয়ার অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে রাজশাহী নির্বাচন কমিশন অফিস।

এর আগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন মাহিয়া মাহি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র বললেই মনে কষ্ট লাগে। কারণ, আমি মনেপ্রাণে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ লালন করি। প্রধানমন্ত্রীর নৌকাকে নিজের নৌকা মনে করি। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো এলাকায় যেন কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত না হন। এ জায়গা থেকেই আমি রাজশাহীর তানোর-গোদাগাড়ী আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই। কারণ, আমার কাছে মনে হয়েছে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের যে প্রার্থী আছেন তিনি অনেকটাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন। তাই প্রথম থেকে নির্বাচন করতে চাই।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। এজন্য মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন রাজশাহী-১ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের জন্য। তবে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড তাকে বিবেচনায় নেয়নি। এদিকে বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম) আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। গতকাল দুপুরে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিষয়টি জানান বগুড়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়েও মনোনয়নপত্রে নিজেকে স্বতন্ত্র দাবি করেছেন। সেই ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মোট ভোটারের ১ শতাংশ সমর্থন ফরমও তিনি জমা দেননি। মনোনয়নপত্রের হলফনামায় আশরাফুল হোসেন সম্পদের বিবরণী জমা দেননি। এছাড়া তিনি মনোনয়নের হলফনামাতে স্বাক্ষরই করেননি। এজন্য তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিলের পর হিরো আলম নিজের এসব ভুল স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আমারও ভুল হয়েছে। আমি দেশের বাইরে ছিলাম। আমার উকিল দুটি ভুল করেছেন। উকিল ভুল করা মানে আমিই দুটি ভুল করেছি। হলফনামায় স্বাক্ষর ছিল না, এটা একটা ভুল ধরা হয়েছে। দ্বিতীয়ত ভুল করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ফরম পূরণ করা হয়।

তবে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে জানালেন এ আলোচিত ইউটিউবার। এর আগেও তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল এবং তিনি উচ্চ আদালতে রিট করে মনোনয়ন বৈধ করেছিলেন বলে স্মরণ করিয়ে দেন হিরো আলম।

তিনি বলেন, সবাই জানেন আমার প্রার্থিতা বাতিল নতুন কিছু না। হলফনামায় স্বাক্ষর ইচ্ছা করলে তারা এখানে নিতে পারত। আমি এখানে দিতে পারতাম। অন্য প্রার্থীরা এ বিষয়ে অবজেকশন করেছে তাই আমাকে বাতিল করেছে, এটা এমন কিছু না। আমাকে এর আগে যতবারই বাতিল করা হয়েছে, ততবারই আমি নিয়ে এসেছি। এবারও বাতিল করেছে। ইনশাআল্লাহ হিরো আলম ভোটের মাঠে থাকবে। আমি আবারো বৈধতা ছিনিয়ে আনার চেষ্টা করব। প্রয়োজনে আবারো হাইকোর্টে যাব। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকব।

অন্যদিকে মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে পাবনা-২ (বেড়া-সুজানগর) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনীর। ক্রেডিট কার্ড-সংক্রান্ত খেলাপি ঋণের কারণে গতকাল রোববার সকালে তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী বলেন, আমার ক্রেডিট কার্ডে কোনো বকেয়া নেই, সব বকেয়া পরিশোধ করা আছে। প্রয়োজনীয় প্রমাণ নিয়ে আপিল করব। আশা করি, এ বিষয়ে সঠিক বিচার পাব।

জানা যায়, নোয়াখালী-৪ (সদর-সূবর্ণচর) আসনে ঋণখেলাপির দায়ে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। গতকাল দুপুর ১টায় নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে নোয়াখালী-৪ আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বিকল্পধারা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় এ নেতার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। জামিনদার হিসেবে ঋণ খেলাপি ও স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ-১ (শ্রীনগর-সিরাজদিখান) আসনে এমপি পদে বিকল্প ধারার মাহী বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

গতকাল যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর রিপন মাহীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।

জামিনদার হিসেবে ঋণখেলাপি হওয়ায় এদিন সকালে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই পর্বে বর্তমান এমপি মাহী বি. চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। আর গোলাম সারোয়ার কবিরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয় স্বাক্ষর জালিয়াতি অভিযোগে। ঋণ খেলাপি হওয়ায় কক্সবাজার-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তবে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ আটজনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এই সিদ্ধান্ত জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে কক্সবাজার-১ আসনে ১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে আটজনের মনোনয়নপত্র বৈধ ও পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, যাচাই-বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম, কমর উদ্দিন আরমান, শামসুদ্দিন মুহাম্মদ ইলিয়াছ ও শাহনেওয়াজ চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ, জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী হোসনে আরা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম ও জাফর আলমের ছেলে তানভির আহমদ সিদ্দিকীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ঝালকাঠির দুটি আসনে সাত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল এবং আমু ও শাহজাহান ওমরসহ আটজনের মনোনয়ন বৈধ করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম। গতকাল রোববার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে এ যাচাই বাছাই অনুষ্ঠিত হয়।

মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন, ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম মনিরুজ্জামান মনির, জাতীয় পার্টির এজাজুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইসমাইল হোসেন, নুরুল আলম, ব্যারিস্টার আবুল কাশেম মো. ফকরুল ইসলাম। এছাড়া ঝালকাঠি-২ আসনের জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নাসির উদ্দীন ইমরানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠানে আলোচিত প্রার্থী ব্যারিস্টার মেজর (অব.) মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরের (বীর উত্তম) এসে কিছুক্ষণ থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে চলে যান। ঝালকাঠি-১ আসনে ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে ছয়জন ও ঝালকাঠি-২ আসনে চার প্রার্থীর মধ্যে এক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম) নৌকার প্রার্থী হিসেবে টিকে রয়েছেন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বজুলল হক হারুন চূড়ান্তভাবে নৌকার মনোনয়ন না পাওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। অন্যদিকে, ঝালকাঠি-২ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, নির্বাচনি হলফনামায় মামলার তথ্য গোপন করায় কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরো জানান, মামলার তথ্য গোপন করায় বিকাল ৪টা পর্যন্ত তার মনোনয়নপত্র স্থগিত রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে সংশোধন না করতে পারায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর আগেও এ আসন থেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাকে আসনটি ছেড়ে দেয়। মহাজোটের প্রার্থী হয়ে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটিতে (১, ২ ও ৩) মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে ৩০টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ২০টি গৃহীত হয়। ১০টি বাতিল করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত