দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী যাচাই-বাছাই শেষ

নির্বাচনি ট্রেনে উঠলেন দুই হাজার প্রার্থী

আজ থেকে ইসিতে আপিল করতে পারবেন প্রার্থীরা

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে প্রার্থী যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচনি ট্রেনে উঠলেন প্রায় ২ হাজার প্রার্থী। এখন আপিল ও প্রত্যাহার শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা নিয়ে নির্বাচনি ট্রেন তার গন্তব্যের দিকে যাবে। অন্যদিকে বিএনপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচনে না এলেও ভোটের পরিবেশ উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইসি সূত্র জানায়, গতকাল ২ হাজার ৭১৬ জন প্রার্থীর মনোনয়ন যাচাই-বাছাই করে ইসি। এর মধ্যে বিভিন্ন অসঙ্গতির কারণ দেখিয়ে ৭৩১ অধিক প্রার্থীর প্রার্থীতা অবৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তরা। বৈধ ঘোষণা করেন ১ হাজার ৯৮৫ প্রার্থীকে।

জানা যায়, সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাতিল করা মনোনয়ন ফিরে পেতে ইসিতে আবেদন করতে পারবেন প্রার্থীরা। আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে আপিল গ্রহণ কার্যক্রম। এ লক্ষ্যে ইসিতে ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি আলাদা আলাদা বুথ করা হয়েছে।

ইসির আইন শাখার উপসচিব মো. আব্দুছ সালাম জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাতিল ও গ্রহণাদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী বা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিটার্নিং অফিসারের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে অর্থাৎ আজ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি আকারে (আপীলের মূল কাগজপত্র ০১ সেট ও ছায়ালিপি ০৬ সেটসহ) আপিল দায়ের করতে পারবেন। এজন্য ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি বুথ করা হয়েছে নির্বাচন ভবনে। ১০ জন কর্মকর্তার কাছে আপিল আবেদন জমা দিতে হবে। তিনি আরো জানান, ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০ করে আপিল শুনানি হবে ক্রমানুসারে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রোববার)। এদিকে সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বদলির প্রস্তাব ইসিতে পাঠানোর সময় তিন দিন বাড়ানো হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বদলির প্রস্তাব আগামী ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠাতে বলেছে ইসি। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে দেশের সব থানার ওসিকে পর্যায়ক্রমে বদলি করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। গত ৩০ নভেম্বর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ইসি। তাতে বলা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) পর্যায়ক্রমে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব থানার ওসির বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে, তাঁদের অন্য জায়গায় বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।

এদিকে আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রথম পর্যায়ে দেশের আট বিভাগের ৪৭ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বদলির প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে ইসি। গতকাল সোমবার ইসি এই প্রস্তাবে সম্মতি দেয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে ঢাকা বিভাগের ১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৮ জন, বরিশাল বিভাগের ২ জন, খুলনা বিভাগের ৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ৬ জন, সিলেট বিভাগের ৬ জন, রাজশাহী বিভাগের ৬ জন এবং রংপুর বিভাগের ২ জন ইউএনওকে বদলির প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২৫০ জন ইউএনওকে বদল করা হতে পারে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে দেশের সব ইউএনওকে পর্যায়ক্রমে বদলি করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। ইউএনওদের বদলির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে গত ৩০ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, প্রথম পর্যায়ে যেসব ইউএনওর বর্তমান কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ এক বছরের বেশি হয়ে গেছে, তাদের অন্য জেলায় বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ইসিতে পাঠানো প্রয়োজন। ইউএনওদের পাশাপাশি সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও (ওসি) পর্যায়ক্রমে বদলির নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

এত দিন ধরে ইসি বলে আসছিল, পুলিশ ও প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে বড় রদবদল আনা হবে না। গত ২২ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মাঠ প্রশাসনে রদবদল করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা হলে তার দায় কে নেবে?

প্রশাসনে রদবদল করা হবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল পাল্টা প্রশ্ন রেখেছিলেন, প্রশাসনে রদবদল কে কখন করেছিল? তিনি বলেন, তারা নির্বাচনের স্বার্থে যেটা ভালো মনে করবেন, সেটা করবেন। তবে এখতিয়ারের বাইরে যাবেন না। এখতিয়ারের মধ্যে যা আছে, তা করবেন।

সিইসির এই বক্তব্যের চার দিনের মাথায় পুলিশের মাঠপর্যায়ে বড় রদবদল আনার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। গত বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। ওই দিন বিকালে জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গেও বৈঠক হয়। এরপর পুলিশ ও প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে রদবদলের চিঠি দেওয়া হয়। জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, তপশিল ঘোষণার পর বিভাগীয় কমিশনার থেকে নিচের পদগুলোতে ইসির সঙ্গে আলোচনা ছাড়া বদলি করা যায় না।