ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

নির্বাচনি কৌশলে হেরে গেল বিএনপি : ধাক্কা খেলো জাপা

নির্বাচনি কৌশলে হেরে গেল বিএনপি : ধাক্কা খেলো জাপা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে হেরে গেলো জাতীয় সংসদের বাহিরে থাকা বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। অন্যদিকে এ নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেলো সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। সব মিলে নির্বাচনি সব বাধা অতিক্রম করে আওয়ামী লীগ নির্বাচনি মাঠে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের অধিনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিএনপি রাজপথে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। তাদের দাবি বর্তমান সরকারের অধিনে যেন ভোট না হয়। কিন্তু এ দাবি আদায়ে কার্যত সফল হয়নি বিএনপি। নির্বাচন কমিশন বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে, সে অনুযায়ী সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতে বিএনপির দাবি আদায়ের সম্ভবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। ফলে আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে হেরে যাচ্ছে বিএনপি।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করার লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিদেশিদের কাছ থেকে কোনো রকম চাপ নেই। তারা দেশের বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী। বিদেশিরা বিভিন্ন সময়ে কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাদের ভালো পরামর্শগুলো গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখে তারা (বিদেশিরা) এরই মধ্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ি সুষ্ঠু ও গ্রহণ যোগ্য ভোট করতে যা করা দরকার, তাই করছে ইসি। ভোটের মাঠে পরিবেশ উসবমুখর আছে বলে জানান এ কমিশনার।

ইসি সূত্র জানায়, ভোট করতে ইসি প্রথমে কিছু বাধার মুখে পড়েছিল, সেগুলো এখন কেটে গেছে। বিদেশি পর্যবেক্ষক আসবে কিনা এ নিয়ে প্রথমে কিছুটা চিন্তায় ছিল ইসি। সেটিও কেটে গেছে। বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৫০’র মতো পর্যবেক্ষক আবেদন করেছে, আরো এ সংখা বাড়বে। এছাড়া ২৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে এবার ভোটে। ফলে সব কিছু মিলে আগামী ৭ জানুয়ারি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা।

এদিকে ভোটের মাঠে জাপা বড় ধাক্কা খেয়েছে, তাদের জাতীয় নির্বাচনে কত আসন শরিকরা ছেড়ে দেবে এ বিষয়ে এখনো জানেন না আনেক জাপা প্রার্থী। এছাড়া পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য রওশন এরশাদপন্থি একটি পক্ষ নির্বাচন থেকে ছিটকে গেছে। সব মিলিয়ে ভোটের আগে জাপা একটি ধাক্কা খেতে যাচ্ছে।

জানা যায়, বিরোধীদলীয় নেতা ও ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন এরশাদের রাজনৈতিক অধ্যায়ের ইতি ঘটছে বলে মনে করছেন তার সমর্থক ও নেতাকর্মী। এ নিয়ে হতাশাও বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। রওশনের বদলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরপন্থি মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও আকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু মো. মুসা সরকার।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রওশনের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর তিনিই প্রথম স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু নিজ দলীয় কোন্দলের কারণে এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না তিনি।

গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন নিজ সংসদীয় আসন ময়মনসিংহ-২ থেকে মনোনয়নপত্র উত্তোলন কিংবা জমা কিছুই দেননি তিনি। রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় সদর আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মোহিত উর রহমান শান্তর বিজয় অনেকটা নিশ্চিত। রওশন নির্বাচনে অংশ নিলে আগের দুটি নির্বাচনের মতো আসনটি ছাড়তে হতো- এমন আশঙ্কা করছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। কিন্তু রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় সেই শঙ্কা অনেকটাই কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

রওশনের আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেওয়ায় গত বুধবার রাতে গুলশানের বাসায় বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে রওশন এরশাদ বলেন, আমি দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব সহযোগিতা না করার কারণে দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় দলের ও নেতাদের অবমূল্যায়ন করার কারণে নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়।

জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন সাংস্কৃতিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ আমিনী রুমি বলেন, এবার নির্বাচনে অংশ নিলে রওশনই জয়ী হতেন। স্বামীর মতো তিনিও এমপি অবস্থায় জীবনের শেষ সময় কাটাতে পারতেন। এবার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার মধ্যদিয়ে রওশন অধ্যায়ের শেষ হতে যাচ্ছে।

ইসি কর্মকতারা জানান, এখন পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়ন জমা পড়ে। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে ১ হাজার ৯৮৫, অবৈধ হয়েছে ৭৩১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন। এখন আপিল চলছে, এরপর প্রত্যাহার শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা করবে ইসি।

গত সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, মনোনয়ন বাতিল হলে তার বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। তিনি জানান, এসব আপিলের শুনানি হবে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তখন পুরো নির্বাচন কমিশন বসে আপিল শুনে সিদ্ধান্ত দেব। যে কেউ এ আপিল করতে পারবেন।

সিইসি বলেন, নমিনেশন সাবমিশনের পর সংক্ষুব্ধ যারা, তারা আপিল করতে পারেন। আমাদের যারা রিটার্নিং অফিসার আছেন তারা পরীক্ষা করে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন। কিছু কিছু প্রত্যাখ্যানও হয়। যারা প্রত্যাখ্যাত হন ও যাদের নমিনেশন পেপার গ্রহণ করা হয়, দুটির বিরুদ্ধেই কিন্তু আপিল করা যায়।

এক্সসেপ্টেশন অ্যান্ড রিজেক্টশন, আপিল করার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন যে কেউ।

তিনি আরো বলেন, আপিলের জন্য ১০টি অঞ্চল ঠিক করা হয়েছে। ওই অঞ্চলভিত্তিক আপিল করা হবে। আমি দেখলাম কর্মকর্তারা চমৎকারভাবে আপিলগুলো গ্রহণ করছেন। এগুলো আপিল শুনানিতে দাখিল করা হবে। শুনানি হবে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আমরা তখন পুরো কমিশন বসে আপিলগুলো শুনব। শুনে সিদ্ধান্ত দেব।

বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান ও ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের ইসিতে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ওটা আমার কোনো বিষয় না।

অনুসন্ধান কমিটি একের পর এক শোকজ করছে, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না- এমন বিষয় সামনে আনলে সিইসি বলেন, আমি যতটুকু বলার ততটুকু বলেছি। এর বাইরে কিছু বলব না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত