ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দেয় ভারত

বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দেয় ভারত

একাত্তরের এই দিন রণাঙ্গনের অবস্থা আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সম্মিলিত মিত্র বাহিনীর আক্রমণে দিশাহারা হানাদার বাহিনী সূর্য উঠার আগেই বিভিন্ন সীমান্ত ঘাঁটি থেকে পালাতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের এদিন মিত্র বাহিনী আকাশ থেকে অবাধ গতিতে বিমান আক্রমণ চালায়। বঙ্গোপসাগরে ভারতের নৌবাহিনী সৃষ্টি করে নৌ-অবরোধ। এদিন ফেনী মুক্ত হয়। দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও সাব সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা কর্নেল জাফর ইমামের নেতৃত্বে ফেনী মুক্ত হয়। মেজর জলিলের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা সাতক্ষীরা মুক্ত করে খুলনার দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। ঝিনাইগাতীর আহম্মদনগর হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করেন কোম্পানি কমান্ডার মো. রহমতুল্যাহ। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও মুক্ত করে সেদিন বীরগঞ্জ ও খানসামার পাকিস্তানি অবস্থানের দিকে এগিয়ে চলছিল মুক্ত বাহিনী ও মিত্র বাহিনী। এদিকে লাকসাম, আখাউড়া, চৌদ্দগ্রাম, হিলিতে মুক্তি বাহিনী দৃঢ় অবস্থান নেয়। রাতে আখাউড়া ও সিলেটের শমসেরনগর যৌথ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসে। আর যৌথ বাহিনী হেঁটে ঝিনাইদহ পৌঁছে এবং শহরটি মুক্ত করে। এদিন হানাদারমুক্ত হয় যশোর ও কুড়িগ্রাম। প্রথম কোনো জেলা শহর হিসেবে যশোরই প্রথশ হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধা আর ভারতীয় বাহিনীর যৌথ আক্রমণে যশোর ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করে তারা খুলনার শিরোমনিতে অবস্থান নেয়।

এদিন শুত্রুমুক্ত হয় কুড়িগ্রাম জেলা। আটটি থানা নিয়ে সে সময় কুড়িগ্রাম একটি মহকুমা ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র আক্রমণ চালিয়ে পরাস্ত করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে। এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর তীব্র আক্রমণ চালিয়ে ১৪ নভেম্বর ভুরুঙ্গামারী, ২৮ নভেম্বর নাগেশ্বরী ও ৩০ নভেম্বর উত্তর ধরলা মুক্ত করে। মুক্তি বাহিনী ১ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের চারপাশে অবস্থান নেয়। ৬ তারিখ পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর নিয়মিত আক্রমণ চালাতে থাকে। অতঃপর একাত্তরের এদিন বিকালের দিকে শত্রুমুক্ত হয় কুড়িগ্রাম।

৬ ডিসেম্বর ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, বাংলাদেশ সম্পর্কে কূটনৈতিক স্বীকৃতি। বেলা ১১টার সময় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’ মারফত ঘোষণা করা হয়, ভারত বাংলাদশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতের পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব উত্থাপন করে ইন্দ্রিরা গান্ধী বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষের ঐক্যবদ্ধ বিদ্রোহ এবং সে সংগ্রামের সাফল্য এটা ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট করে তুলেছে যে, তথাকথিত মাতৃরাষ্ট্র পাকিস্তান বাংলাদেশের মানুষকে স্বীয় নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনতে সম্পূর্ণ অসমর্থ। বাংলাদেশ সরকারের বৈধতা সম্পর্কে বলা যায়, গোটা বিশ্ব এখন সচেতন যে, তারা জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ট অংশের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়, জনগণকে প্রতিনিধিত্বকারী অনেক সরকারই যেমনটা দাবি করতে পারবে না। গভর্নর মরিসের প্রতি জেফারসনের বহু খ্যাত উক্তি অনুসারে বাংলাদেশের সরকার সমর্থিত হচ্ছে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত জাতির আকাঙ্ক্ষা বা উইল আব দ্য নেশন দ্বারা। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি জন্য বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যুগ্মভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ জানিয়ে ৪ ডিসেম্বর একটি পত্র প্রেরণ করেন। বাংলাদেশ সরকারের পত্রের জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়ে যে পত্র প্রেরণ করেন, তার আংশিক বঙ্গানুবাদ : ‘প্রিয় প্রধানমন্ত্রী মহামান্য অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আপনি ৪ ডিসেম্বর আমাকে যে বাণী প্রেরণ করেছেন, তাতে আমি এবং ভারত সরকারের আমার সহকর্মীরা গভীরভাবে অভিভূত হয়েছি। এ পত্র পাওয়ার পর আপনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে পরিচালিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি স্বীকৃতি প্রদানের অনুরোধ ভারত সরকার ফের বিবেচনা করেছে। আমি সানন্দে জানাই, বর্তমানে বিরাজিত পরিস্থিতির আলোকে ভারত সরকার স্বীকৃতি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমি একটি অনুলিপি সংযুক্ত করছি। আপনার বিশ্বস্ত ইন্দিরা গান্ধী। এদিকে স্বীকৃতি পেয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মিত্ররাষ্ট্র ভারতের জওয়ানদের অভিনন্দন জানান। অন্যদিকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ায় ভারতের সঙ্গে তাৎক্ষণিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে পাকিস্তান। আর ভারতে মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত