জাতীয় সংসদ নির্বাচন

স্বতন্ত্রহীন ৩২ আসনে ফুরফুরে নৌকার প্রার্থী

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। ভোটে নেই বিএনপি ও তার মিত্ররা। বিএনপিহীন ভোটে অংশ নিয়েছে ২৯টি রাজনৈতিক দল। এছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে লড়তে ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। বাছাইপর্বে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ৪২৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। টিকেছে ৩২৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তারা প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিলও করেছেন। আপিলের মাধ্যমে অনেকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে পারেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।

দ্বাদশের ভোটকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার কথা আগেভাগেই জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সেখানে নির্বাচনকে উৎসব ও প্রতিযোগিতামূলক করতে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা অন্যান্য দলের কেউ প্রার্থী হলে সহযোগিতা ও উৎসাহ দেওয়ার জন্য দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। সহজে জয় ঠেকাতে ভোটের মাঠে ‘ডামি’ প্রার্থী রাখার পরামর্শ দেওয়া হয় মতবিনিময় সভায়।

আওয়ামী লীগ সভাপতির এমন ঘোষণার পরই সারা দেশে নৌকাবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন দাখিল করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড়াছড়ির মধ্যেও ৩২টি আসনে নেই ‘ডামি’ বা স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় এ আসনগুলোতে অনেকটা নির্ভার নৌকার প্রার্থীরা। অবশ্য এ আসনগুলোতে কয়েকটি দলের প্রার্থী রয়েছে। তবে তারা আওয়ামী লীগে শক্ত প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বলে জানা গেছে।

৩২ আসনের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় প্রতিযোগিতামূলক ভোট হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে দলীয় কোনো বিষয় নেই, এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। কমিশন আচরণবিধি অনুযায়ী চলছে। প্রার্থীরা আদালত পর্যন্ত যেতে পারে। সেখানে আলটিমেটলি যে সিদ্ধান্তে আসবে, সেটার ওপর আমাদের কোনো হাত নেই। এ ব্যাপারে বাধাগ্রস্ত করার কোনো প্রক্রিয়াতে আমরা নেই।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বিভিন্ন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও দলের প্রভাবশালী নেতার আসনে দলীয় কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেননি। তার মধ্যে ৩২টি আসন রয়েছে। যেসব আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। সেগুলো হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪. কুমিল্লা-৯ ও কুমিল্লা-১০, নোয়াখালী-৫, চট্টগ্রাম-৭, ৯ ও ১৩, কক্সবাজার-২, পঞ্চগড়-২, মাগুরা-১, বাগেরহাট-১, পটুয়াখালী-১, শরীয়তপুর-৩, সিলেট-৪ ও ৬, কিশোরগঞ্জ-৪, মানিকগঞ্জ-৩, ঢাকা-১, ঢাকা-৯, ঢাকা-১৫, নারায়ণগঞ্জ-৫, মাদারীপুর-১ ও ২, টাঙ্গাইল-১, টাঙ্গাইল-৮, ময়মনসিংহ-৯, ভোলা-২, বরিশাল-১, ঝালকাঠি-২, বগুড়া-৫ সিরাজগঞ্জ-২ এবং পাবনা-৫ আসন। এসব আসনের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শেখ হেলাল উদ্দিন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ক ম রুহুল হক, সাবের হোসেন চৌধুরী, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের আসন। এছাড়া আরো বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিবিহীন ভোটে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন আওয়ামী লীগ, তাদের জোট ও সমমনা দলের প্রার্থীরা।