ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি

শতাধিক মোবাইল ফোন ও ডিভাইসসহ আটক ৬৬ জন

শতাধিক মোবাইল ফোন ও ডিভাইসসহ আটক ৬৬ জন

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে রংপুর ও গাইবান্ধার বিভিন্ন কেন্দ্র ও এলাকা জায়গা থেকে মোট ৫৪ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কাছ থেকে বেশকিছু মোবাইল ফোন ও ডিভাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার পরীক্ষার আগে ও পরীক্ষাচলাকালীন সময়ে তাদের আটক করা হয়।

জানা যায়, সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এক ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ টাইপ) চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। প্রথম ধাপে রংপুর, সিলেট, বরিশাল বিভাগের ১৮ জেলায় একযোগে পরীক্ষার হলে বসেন চাকরিপ্রার্থীরা। প্রথম ধাপের পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন চাকরিপ্রার্থী।

এই নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে গাইবান্ধা সদরের বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে অভিনব উপায়ে তৈরি মাস্টারকার্ডের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সংযুক্ত করে জালিয়াতির সময় চক্রের পাঁচ মূলহোতা ও ৩০ পরীক্ষার্থীকে আটক করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১৩)। এসময় তাদের কাছ থেকে ২২টি ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংযুক্ত মাস্টারকার্ড, ১৯টি ব্লুটুথ ডিভাইস ও ১৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান জানান, প্রথম ধাপের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালীন অভিনব উপায়ে তৈরি মাস্টারকার্ডের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সংযুক্ত করে জালিয়াতির সময় চক্রের পাঁচ হোতা ও ৩০ পরীক্ষার্থীসহ মোট ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, এই নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ও এলাকা থেকে ১৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু মোবাইল ফোন ও ডিভাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। দুপুর ১২টায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বিটু এক্স ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীর প্রশ্নপত্রের উত্তর প্রদানের চুক্তি করা হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রস্তুতির প্রাক্কালে পরীক্ষার আগের রাতে ও সকালে রংপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ তিনটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ পরীক্ষার্থী এবং ডিভাইস জালিয়াতি সিন্ডিকেটের সদস্যরা আছেন। আটকদের মধ্যে ১১ জন পরীক্ষার্থী, এদের মধ্যে আটজন নারী। বাকিরা কলেজশিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত। আটক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর আগেই পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে ডিভাইসসহ আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছে থেকে ১১টি ডিভাইস, ৮০টি ফোন ও প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, একটি অসাধু চক্র ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে এই জালিয়াতি কাজের সঙ্গে জড়িত। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ডিভাইস জালিয়াতি চক্রটিকে পরীক্ষার আগের রাতে, সকালে ও পরীক্ষা শুরুর আগেই কেন্দ্র থেকে আটক করা হয়েছে। তাদের আটকের ফলে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে পারেনি চক্রটি। এই ঘটনায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

অপরদিকে, ঠাকুরগাঁওয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইলের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে পরীক্ষা দেয়ার সময় ৭ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তাদের ডিভাইসসহ আটক করা হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা জানান, সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ও ডিভাইসসহ সাতজনকে আটকে করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। ঠাকুরগাঁওয়ের কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব মোতালেব হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আটক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় মেধাবীরা পিছিয়ে পড়ছে। অন্যদিকে যারা অসাধু উপায়ে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে তাদের ভবিষ্যত ধ্বংস হচ্ছে। যে কারণে প্রশাসনসহ সবাইকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

এ বিষয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার খন্দকার মনছুর রহমান জানান, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া সরকারি কলেজ, কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে সাতজনকে আট করা হয়। পরে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এদিকে, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা দেওয়ার সময় ৩ পরীক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। সকালে পরীক্ষা চলাকালে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, কয়া গোলাহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সৈয়দপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজকেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়। সৈয়দপুর থানা-পুলিশ জানায়, তিন পরীক্ষার্থী ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইল ব্যবহার করে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে কেন্দ্রসচিবকে জানান। কেন্দ্রসচিব তাদের কেন্দ্রে কর্তব্যরত পুলিশের হাতে তুলে দেন। আটক পরীক্ষার্থীরা হলেন- নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা এলাকার আপন চন্দ্রের ছেলে তমাল চন্দ্র (২৫), একই উপজেলার পঞ্চপুকুর এলাকার হামিদুল ইসলামের মেয়ে রাফিয়া আকতার (২৩) ও ডিমলা উপজেলার পূর্ব খড়িবাড়ী গ্রামের মুসা মিয়ার ছেলে ওমর ফারুক (২৭)। সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম কেন্দ্র থেকে তিন পরীক্ষার্থী আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আটক পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

অপরদিকে, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহের ৯টি ডিভাইসসহ দুজন আটক হয়েছেন। গত বুধবার রাতে পার্বতীপুর শহরের নতুন বাজার সিঙ্গার মোড় থেকে তাদের আটক করা হয় বলে পার্বতীপুর থানার ওসি আবুল হাসনাত জানান।

আটকরা হলেন- নীলফামারী জেলার জলঢাকা এলাকার সম্রাট মিয়া (১৯) ও একই এলাকার রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য (সিপাহি) আবুল কালাম আজাদ (২০)। পার্বতীপুর থানার ওসি আবুল হাসনাত জানান, গোপন সংবাদ পেয়ে পুলিশের একটি দল শহরের সিঙ্গার মোড়ে যায়। তখন দুই তরুণ দৌড়ে পালনোর চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের আটক করে। পরে তাদের দেহ তল্লাশি করে নয়টি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পাওয়া যায়।

ওসি আবুল হাসনাত আরো দাবি করেন, গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র অর্থের বিনিময়ে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর কাছে সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে আটকরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আটকদের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণার অভিযোগ এনে মামলা করে বলে জানান ওসি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত