দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

সুষ্ঠু নির্বাচনে আস্থাশীল হচ্ছে ইসি

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে কতটা সুষ্ঠু হবে, এ নিয়ে কিছুটা সংশয় তৈরি হলেও তা এখন কেটে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের সহযোগিতা ও রাজনৈতিক দলসহ সব মহলের উৎসাহের কারণে আস্থাশীল হয়ে উঠছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট নিরপেক্ষ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ইউএনও এবং ওসিদের বদলির আদেশের পর ঢাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি ইসি।

সূত্র জানায়, ভোট সুষ্ঠু করা নিয়ে প্রথম দিকে ইসির জন্য যেসব চ্যালেঞ্জ ছিল, এখন সেসব চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে সামাল দেয়া হচ্ছে। ইসির বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, ভোটে বিএনপি না আসলেও ২৯টি নিবন্ধিত দল এবং ব্যাপক পরিমাণে প্রার্থী এবার ভোটে অংশ নিচ্ছে। ভোট সুষ্ঠু করতে ভোটের আগে প্রশাসনে রদবদল করা হচ্ছে। এছাড়া ভোটের মাঠে লেবেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে প্রার্থীদের শোকজ করছে ইসি। এমনকি আওয়ামী লীগকে আজকের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি ইসি।

জানা যায়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের অনুমতির জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে গত রোববার চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ। দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ওই দিন বিকাল ৩টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট-সংলগ্ন রাস্তায় সমাবেশ আয়োজন করবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তবে, আওয়ামী লীগের ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ইসি। বাধ্য হয়ে সমাবেশ বাতিল করেছে ক্ষমতাসীন দল। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস। এই মানবাধিকার দিবসে আমরা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে একটি বড় সমাবেশ করব, এ রকম একটি কর্মসূচি আমাদের ছিল। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছিলাম। সে আবেদন তারা গ্রহণ করেননি। বাইরে সমাবেশের নামের শোডাউন হবে সে আশঙ্কা করছে। যে সমাবেশ করার কথা, সেটি করছি না। নির্বাচনি বিধির বাইরে আওয়ামী লীগ যাবে না বলেও জানান ক্ষমতাসীন দলের এই সাধারণ সম্পাদক।

নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনে পতাকাবিহীন ব্যক্তিগত গাড়িতে করে নিজের নির্বাচনি এলাকা টুঙ্গিপাড়া থেকে কোটালীপাড়া সফর শেষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী প্রেস উইং সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সফরে কোনো ধরনের সরকারি সুবিধা গ্রহণ করেননি। গত বৃহস্পতিবারও সরকারি প্রটোকল ছাড়াই ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ যান তিনি।

তপশিলের পর রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনি কাজে কোনো সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। সরকারি গাড়িও ব্যবহার তারা করতে পারবেন না। এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রয়োজনে ডিসি এসপিদের বদলি করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) বদলির কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দুই জেলা প্রশাসককে বদলি করা হয়েছে। এরপর যখন যেখানে ডিসি-এসপি বদলির দরকার হবে, আমরা তা করব।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমিও এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। সরকার কখনো নির্বাচন কমিশনের কোনো কাজে বাধা দেয়নি, বরং সহযোগিতা করেছে। এবারের নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে কমিশন। ইউএনও এবং ওসিদের বদলির কারণে প্রশাসন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে বাধ্য হবে। সরকারি দলের সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে কমিশন সবচেয়ে বড় নিরপেক্ষতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বলেও মনে করেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার।

অন্যদিকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং উৎসবমুখর করতে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। সবাই যেন নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দেয়, সেজন্য ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে হবে। প্রত্যেক ভোটারের কাছে ভোটার কার্ড পাঠাতে হবে। ভোটাররা যেন ভোট কেন্দ্রে এসে উৎসবের আমেজে ভোট দিতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কোনো ভোট হালকাভাবে নিতে নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোটের আগে যে জিতে যায়, সেই হেরে যায়। তাই ভোটের আগে দয়া করে কেউ জিতে যাবেন না। কারণ পিঁপড়ার শক্তিও কিন্তু শক্তি। সুতরাং, নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে কাউকে বাদ দিতে নেই, সবাইকে রাখতে হবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয় গত ১৫ নভেম্বর। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে। আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ভোট।