ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নাশকতার শঙ্কায় সতর্ক পুলিশ

নাশকতার শঙ্কায় সতর্ক পুলিশ

রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ পণ্ড ওয়ার পর থেকেই সারা দেশে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি বেছে নিয়েছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে দিবসটি ঘিরে বিএনপিসহ এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নাশকতা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নাশকতা ঠেকাতে সারা দেশে বাড়তি সতর্কতামূলক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা সদরে গুম-খুন হওয়া দলীয় নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন করবে বিএনপি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দল ও জোটও একই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ প- হওয়ার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা মানববন্ধনে জড়ো হবে।

বিএনপি মানববন্ধন কর্মসূচির নামে নাশকতার পরিকল্পনা করছেন এমন অভিযোগ করে গতকাল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মানবাধিকার দিবস ঘিরে কর্মসূচির নামে নাশকতা করার চেষ্টা করছে বিএনপি। তবে যত ষড়যন্ত্রই হোক, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে অটল থাকবে আওয়ামী লীগ।

গতকাল ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে দেশি-বিদেশি চাপ থাকলেও আওয়ামী লীগ বিচলিত নয় উল্লেখ করে তিনি নির্বাচন-পরবর্তী দেশে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের যৌক্তিক কারণ দেখছেন না জানিয়ে, যারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে নাশকতা চালাচ্ছে তাদের উপরই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় নির্বাচনের পক্ষের শক্তিদের ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপির যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

জনগণের সব ধরনের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এবার যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা ৭৫তম বার্ষিকীর প্রাক্কালে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। যে অপশক্তি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে বা করার অপচেষ্টা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য অনুযায়ী এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে তারা নিষেধাজ্ঞা দেয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো সরকারবিরোধী আন্দোলনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় রাস্তায় পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে তারা। গতকাল প্রধান সড়কগুলোতে টহল দেওয়ার পাশাপাশি শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতেও পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যায়। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের মানববন্ধন কর্মসূচি ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই তাদের অবস্থানে অনড় থাকায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপির লাগাতার অবরোধ ও একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে পুরো দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির ২৪ দিনের হরতাল-অবরোধে বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর ও যানবাহন পোড়ানো হয়েছে।

অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, অনুমতি না নিয়ে বিভিন্ন মামলার আসামিরা যদি মানববন্ধন করার চেষ্টা করে, তাহলে আসামিদের গ্রেপ্তারে কোনো বাধা নেই।

ডিবিপ্রধান বলেন, যদি কোনো দল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে জোর করে ওইসব মামলার আসামিরা মানববন্ধন করতে চায়, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে রুটিন কাজ- বিভিন্ন মামলার আসামি, ওয়ারেন্টের আসামি তাদের গ্রেপ্তারে আমাদের কোনো বাধা নেই।

তিনি বলেন, তপশিল ঘোষণার পর থেকে আমরা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় কাজ করছি। যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হয়ে বিভিন্ন জায়গায় গাড়িতে আগুন লাগানো, যানবাহন চলায় বাধা, পুলিশের ওপর হামলা, রাজারবাগ হাসপাতালের গাড়ি ভাঙচুর, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে, তারাই কিন্তু এখন আবার অবরোধ ডেকে নাশকতা করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন নেতা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপির বহু নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেজন্য ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মানবাধিকার দিবসে মানববন্ধন কর্মসূচিকে ঘিরে ৪৩ দিন পর আবার দলের নেতাকর্মীদের মাঠের জমায়েতে ফিরিয়ে আনাই বিএনপির লক্ষ্য। এর মাধ্যমে সরকার ও পুলিশের আচরণ কী হয়, সেটিও দেখা। এর ভিত্তিতেই পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা।

এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে নির্যাতনের শিকার, গুম-খুন হওয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধনে উপস্থিত থাকবেন।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত এবং নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টুর স্বাক্ষরে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত