ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংকটাপন্ন জ্বালানি খাতে আশার সঞ্চার

সংকটাপন্ন জ্বালানি খাতে আশার সঞ্চার

জ্বালানি খাতের ঘাটতি পূরণে নিয়মিত তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান করছে সরকার। এরই ধরাবাহিকতায় সিলেটের একটি গ্যাসক্ষেত্রে তেলের সন্ধান পেয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এখন জ্বালানি তেল সরবরাহের পাশাপাশি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে জ্বালানি খাত।

জানা গেছে, সিলেটের তেলক্ষেত্রে আগামী ২০ বছর পর্যন্ত তেল উত্তোলন সম্ভব হবে, যা জ্বালানি খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে জ্বালানি আমদানিতে ডলারের ওপর চাপ কমে যাবে।

এ বিষয়ে গতকাল রোববার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের ১০ নম্বর কূপে (অনুসন্ধান কূপ) গ্যাসের পাশাপাশি জ্বালানি তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই কূপ থেকে আগামী ১৫ বছরেরও বেশি সময় তেল উত্তোলন করা যাবে, যার সুফল পাওয়া যাবে প্রায় ২০ বছর পর্যন্ত। এখান থেকে দৈনিক কম-বেশি ৬০০ ব্যারেল হারে তেল পাওয়া যাবে। বিজয়ের মাসে এটা সবার জন্য ‘বিরাট সুখবর’ বলেও উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জ্বালানি খাতের এই সময়ে সিলেটে তেলের সন্ধান মেলা একটা বড় ধরনের সুখবর। সপ্তাহখানেক আগেও সিলেটে একটি কূপে গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে অনুসন্ধান টিম। দেশে দৈনিক তেল-গ্যাস উৎপাদনের চাহিদা মেটাতে কখনো কখনো সক্ষমতার চেয়ে বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। বর্তমান উৎপাদনের ধারা ধরে রাখলে জ্বালানি খাতে তেল-গ্যাস সরবরাহে বড় পরিবর্তন আনবে।

চলমান গ্যাস-সংকটের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বেশি মজুত থাকা তিনটি গ্যাসক্ষেত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস, সিলেটের কৈলাসটিলা ও হবিগঞ্জের রশিদপুর। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারিগরি পরিকল্পনা, দক্ষ ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে, মজুত থাকলে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিবিয়ানায় গ্যাসের মজুত শেষ হয়ে আসার তথ্য সঠিক নয়। এ তথ্য সংশোধন করা হবে। এছাড়া উৎপাদন যাতে কমে না যায়, সেজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে পেট্রোবাংলা।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র তিতাস থেকে উৎপাদন করছে সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)। কৈলাসটিলা ও রশিদপুর থেকে উৎপাদন করে আরেক সরকারি কোম্পানি সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড (এসজিএফএল)। আর বিবিয়ানা থেকে উৎপাদন করে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। তিতাস গ্যাসক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মজুত থাকলেও উৎপাদনে কিছুটা পিছিয়ে আছে।

পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্য বলছে, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদনে সক্ষম। বর্তমানে ২৬টি কূপ থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। উৎপাদন বাড়াতে ২০২১ সালে গ্যাস উত্তোলনের পাইপ পরিবর্তন করে বেশি ব্যাসার্ধের পাইপ বসানো হয়েছে।

গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিলেট-১০ নম্বর গ্যাসকূপে ২ হাজার ৫৭৬ মিটার গভীরতায় খনন সম্পন্ন হয়েছে। কূপটিতে তিনটি স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে নিচের স্তরটি ২ হাজার ৫৪০ থেকে ২ হাজার ৫৫০ মিটার পর্যন্ত পরীক্ষা করে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রবাহ পাওয়া গেছে; যার ফ্লোয়িং প্রেসার ৩ হাজার ২৫০ পিএসআই। গ্যাসের মজুতের পরিমাণ ৪৩ থেকে ১০০ বিলিয়ন ঘনফুট।

এছাড়া ২ হাজার ৪৬০ থেকে ২ হাজার ৪৭৫ মিটার গভীরে আরো একটি ভালো গ্যাস স্তর পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে পরীক্ষা করলে ২৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি। আর ২ হাজার ২৯০ থেকে ২ হাজার ৩১০ মিটার গভীরেও গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

গ্যাস ছাড়াও উপরের দিকে ১ হাজার ৩৯৭ থেকে ১ হাজার ৪৪৫ মিটার গভীরতায় আরো একটি জোন পাওয়া গেছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেখানে গত শুক্রবার পরীক্ষা করে তেলের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যার প্রাথমিকভাবে এপিআই গ্রাভিটি ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি। সেলফ প্রেসারে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল তেলের প্রবাহ পাওয়া যাচ্ছে। পরীক্ষা সম্পন্ন হলে মোট তেলের মজুত জানা যাবে।

একযোগে উৎপাদন করা হলে এই কূপটি প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর সাসটেইন করবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গড় ভারিত মূল্য হিসেবে এর মূল্য প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যদি ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে উৎপাদন করা হয়, তাহলে কূপটি ১৫ বছরেরও বেশি সময় সাসটেইন করবে।

এর আগে ১৯৮৬ সালে হরিপুরে তেলের অস্থিত্ব পাওয়া গিয়েছিল উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেই কূপটির স্থায়িত্ব ছিল ৫ বছর। সেখানে গ্রাভিটি পাওয়া গিয়েছিল এপিআই গ্রাভিটি ২৭ ডিগ্রি। এবার যে তেলের মজুত পাওয়া যাচ্ছে। সেই তেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। এর এপিআই গ্রাভিটি ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি।

প্রথম দিনে ২ ঘণ্টায় ৭০ ব্যারেলের মতো তেল উত্তোলন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তেল উত্তোলন আমরা আপাতত বন্ধ রেখেছি। এটা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে, মোট মজুতের পরিমাণটা আমরা জানতে পারব। পুরো বিষয়টির বিস্তারিত জানতে আরো চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে।

এই কূপে গ্যাস ও তেলের স্তর ভিন্ন উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখানে একটি ভালো দিক হলো গ্যাস ও তেলের স্তর ভিন্ন। আগে গ্যাসের সঙ্গে কিছুটা তেল আসত। যেটা আমরা কনডেসার হিসেবে ব্যবহার করতাম। এখন তেলটা ভিন্ন স্তর হওয়ায় সেটা আরো ভালো হবে।

এর আগে নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করা আওয়ামী লীগ সরকারের বড় একটি সফলতা। আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম রিগ কিনে দিনে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়িয়েছে। স্থানীয়ভাবে আমাদের ২১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা হয়। সমন্বিত মহাপরিকল্পনা অনুসারে ২০৪০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ ক্লিন এনার্জি থেকে তৈরি করা হবে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়ায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রে তেল পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা গেছে। জোরালোভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্ভাবনাময় জায়গাগুলোতে আরো বেশি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত