ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মধ্যেও চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রি

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামিম রহমান, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে পেঁয়াজের বাজারে নৈরাজ্য থামেনি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মধ্যেও ক্রেতাদের পকেট কাটছে বিক্রেতারা। গত শনিবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে লাখ টাকা জরিমানা করা হয় গতকালও অভিযান অব্যাহত ছিল। কিন্তু দাম কমেনি পেঁয়াজের। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র খ্যাত খাতুনগঞ্জে উধাও হয়ে গেছে পেঁয়াজ। সেখানে শনিবার সকালে পাইকারিতে কেজি প্রতি পেঁয়াজ ২০০ টাকা ছাড়ানোর পর খুচরায় দাম ২২০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। গতকালও ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা করে প্রতি কেজি দাম নেয়া হয়। খুচরা বিক্রেতারা পেঁয়াজ না পেয়ে ফিরে আসেন আড়ত থেকে। এদিকে শনিবার দুপুরে ভোক্তা অধিদপ্তরের একটি টিম খাতুনগঞ্জের আড়তে অভিযান চালিয়ে ৪০ বস্তা পেঁয়াজ জব্দ করে। এরপর জব্দ পেঁয়াজগুলো খুচরাভাবে প্রতি কেজি ১১০ টাকা করে বিক্রি করে দেয় ভোক্তার টিমের সদস্যরা। এরপর থেকে মূলত আড়ত থেকে পেঁয়াজ সরিয়ে নিতে শুরু অসাধু ব্যবসায়ীরা।

ভোক্তা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। নগরীর যেখানে বাড়তি দামে বিক্রি করবে, সেখানে অভিযান চালাব। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে খাতুনগঞ্জে শনিবার সকাল ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সাড়ে চার ঘণ্টা অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালে টিমের সদস্যরা মোট ৪০ বস্তা পেঁয়াজ তাৎক্ষণিক জব্দ করে। প্রতি বস্তায় ৪০ থেকে ৫০ কেজি করে পেঁয়াজ ছিল। জব্দ পেঁয়াজগুলো প্রতি কেজি ১১০ টাকা করে আড়তেই বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে পাহাড়তলী এবং খাতুনগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় মূল্য তালিকা না থাকায় কয়েকটি দোকানের মালিককে জরিমানাও করা হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন অভিযান চালানো হবে। খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেটে বড় বড় পেঁয়াজের আড়তগুলোর অবস্থান। শনিবার বিকালে এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকলে অভিযান চালিয়ে কি হবে। আড়তে তো পেঁয়াজ নেই। এ অবস্থায় ভোক্তা অধিদপ্তর কিছু আড়ত থেকে পেঁয়াজ জব্দ করে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতি কেজি ১১০ টাকা করে বিক্রি করেছে। কিন্তু এতে কোনো ফল হবে না। ১১০ টাকায় কেনা পেঁয়াজ ক্রেতারাই ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা কেজি বাইরে বিক্রি করে দেবেন। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাজারে আমদানি সরবরাহ বাড়াতে হবে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কিছুটা কমবে। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা এখনই দেশের বিভিন্ন জেলার খেত থেকেই পেঁয়াজ কেনা শুরু করে দিয়েছেন। দেশের পাবনা, ফরিদপুর, ইশ্বরদীসহ বিভিন্ন এলাকায় খেতের পেঁয়াজ মণপ্রতি হিসাব করে ৬ হাজার টাকা করে কৃষকদের কাছ থেকে আগাম কিনে নিচ্ছেন। খেত থেকে তোলার পর সেই পেঁয়াজ বাজারে পৌঁছার পর দাম ১৫০ টাকার কম হবে না। তবে পেঁয়াজের বাড়তি দাম সাময়িক। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলেই দাম কমবে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর এক কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামের কোথাও পেঁয়াজের সংকট নেই। ব্যবসায়ীরা যোগসাজস করে আড়ত থেকে সরিয়ে নিয়ে গুদামজাত করেছে। ফলে আড়তগুলো পেঁয়াজ শূন্য হয়ে পড়ে। পেঁয়াজের দাম বাড়লে প্রতিবারই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এবারও তাই করেছে তারা।

তিনি বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেও দেশে এখনই পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। মজুদ পেঁয়াজ বিক্রি শেষ হওয়ার আগেই দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসবে। দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া কিছু নয়। প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিলেই শুধু পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। অন্যথায় সিন্ডিকেটের কারণে ক্রেতারা বাড়তি দাম দিয়েই যাবেন। নতুন দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বাজারে পৌঁছলে আর কোনো সিন্ডিকেট কাজ করবে না। কারণ পচনশীল পেঁয়াজ বেশি দিন মজুদ করে রাখা যায় না। এতে মজুদকারী ব্যবসায়ীরা আরো ক্ষতির মুখে পড়বেন।