দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

ভীতি প্রদর্শন ও চাপ সৃষ্টি হলে পুরো আসনের ভোট বাতিল : ইসি

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ইসি আপিল শুনানির প্রথম দিন ৯৪টি আপিলের মধ্যে ৫৬ জন তাদের প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন। এছাড়া ৩২ জনের প্রার্থিতা নামঞ্জুর এবং ছয়টি আবেদন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে অন্য কমিশনাররা আপিল শুনানি করেন।

রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৫৬১টি আপিল পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। এর মধ্যে ৩০টির মতো আপিল দায়ের হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে বৈধ হওয়া প্রার্থীর বিরুদ্ধে। বাকি আপিলগুলো হয়েছে প্রার্থিতা ফেরত পেতে। গতকাল রোববার শুরু হওয়া এই আপিল পর্যায়ক্রমে ছয় দিন চলবে। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি চাইলে উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন।

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনে ভীতি প্রদর্শন, চাপ সৃষ্টি করা হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করে দেবে ইসি। গতকাল রোববার ইসির পরিপত্র জারি করে বলা হয়েছে, কতিপয় ক্ষেত্রে কমিশনের নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করার ক্ষমতা : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৯১ এর বিধান অনুসারে কমিশনের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, নির্বাচনে বল প্রয়োগ, ভীতি-প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে ন্যায়ানুগ ও নিরপেক্ষভাবে এবং আইন অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হওয়া যাবে না, সেক্ষেত্রে যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো সম্পূর্ণ নির্বাচনি এলাকায় যেকোনো পর্যায়ে ভোটগ্রহণ বন্ধ করতে পারবে কমিশন।

এছাড়া, কোনো ব্যালট পেপার নাকচ বা গ্রহণসহ, এ অধ্যাদেশ বা বিধিমালার অধীন কোনো কর্মকর্তার দেওয়া কোনো আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে পারবে কমিশন। নির্বাচন নিরপেক্ষ, ন্যায়ানুগ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও ক্ষমতা প্রয়োগসহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য আদেশও দিতে পারবে।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে বরিশাল ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার এবং পাঁচ জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসককেও প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো চিঠিতে দুই পুলিশ কমিশনারসহ হবিগঞ্জ, পিরোজপুর, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো চিঠিতে ব্রাহ্মবাড়িয়ার জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে তার স্থলে একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ জেলা প্রশাসক পদায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো আরেকটি চিঠিতে মানিকগঞ্জ সদর, সিংগাইর ও গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও জেলার বাইরে অন্যত্র বদলি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাদের স্থলে উপযুক্ত কর্মকর্তাকে পদায়ন করার জন্য বলেছে ইসি।

মনোনয়ন ফিরে পেয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ফরিদপুর-১ আসনের মোহাম্মদ আরিফুর রহমান (স্বতন্ত্র), টাঙ্গাইল-২ আসনের মো. ইউনুস ইসলাম তালুকদার (স্বতন্ত্র), যশোর-২ আসনের এস. এম হাবিবুর রহমান (স্বতন্ত্র), জামালপুর-২ আসনের মো. জিয়াউল হক জিয়া (স্বতন্ত্র), নোয়াখালী-২ আসনের তালেবুজ্জামান (জাতীয় পার্টি), যশোর-১ আসনের মো. আক্তারুজ্জামান (জাতীয় পার্টি), কিশোরগঞ্জ-৩ মো. নাসিরুল ইসলাম খান (আওয়ামী লীগ), গোপালগঞ্জ-১ আসনের মোহাম্মদ কবির মিয়া (স্বতন্ত্র), খুলনা-৬ আসনের মো. শফিকুল ইসলাম মধু (জাতীয় পার্টি), চট্টগ্রাম-৮ আসনের আবদুছ সালাম (স্বতন্ত্র), বরগুনা-১ আসনের মো. খলিলুর রহমান (স্বতন্ত্র), খুলনা-৪ আসনের শেখ হাবিবুর রহমান (তৃণমূল বিএনপি), মেহেরপুর-২ আসনের মোখলেসুর রহমান (স্বতন্ত্র), রংপুর-২ আসনের বিশ্বনাথ সরকার (স্বতন্ত্র), ঢাকা-২০ আসনের মো. মিনহাজ উদ্দি (বিএসপি), ফরিদপুর-১ আসনের মাহমুদা বেগম (স্বতন্ত্র), চট্টগ্রাম-২ আসনের মোহাম্মদ শাহজাহান (স্বতন্ত্র), মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের মমতাজ সুলতানা আহমেদ (বিএনএফ), মাদারীপুর-২ আসনের ইউসুফ আলী সুমন (বিএসপি), চট্টগ্রাম-১৫ আসনের আব্দুল মোতালেব (স্বতন্ত্র), যশোর-৩ আসনের মো. মহিদুল ইসলাম (জাকের পার্টি), ঢাকা-৫ আসনের মো. কামরুল হাসান (স্বতন্ত্র), চট্টগ্রাম-১ আসনের মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন (স্বতন্ত্র), যশোর-৫ আসনের শেখ নুরুজ্জামান (বিএনএম), মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের মো. বাচ্ছু শেখ (বিএনএফ), যশোর-৩ আসনের মোহিত কুমার নাথ (স্বতন্ত্র), কুমিল্লা-২ আসনের এ.টি.এম মঞ্জুরুল ইসলাম (জাকের পার্টি), যশোর-৬ আসনের মো. আজিজুল ইসলাম (স্বতন্ত্র), বরিশাল-৬ আসনের মোহাম্মদ শামসুল আলম (স্বতন্ত্র), কুমিল্লা-৫ আসনের সাজ্জাদ হোসেন (স্বতন্ত্র), মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বিকল্পধারা বাংলাদেশ), কুমিল্লা-৫ আসনের এম তাহের (স্বতন্ত্র), বরগুনা-১ আসনের মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র), চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দ নজরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র), গাইবান্ধা-২ আসনের শাহ সারোয়ার কবীর (স্বতন্ত্র)। মনোনয়ন বাতিল হয়েছে টাঙ্গাইল-৫ আসনের খন্দকার আহসান হাবীব (স্বতন্ত্র), টাঙ্গাইল ৬ আসনের সৈয়দ মাহমুদুল ইলাহ (স্বতন্ত্র), টাঙ্গাইল-৬ আসনের কাজী এটিএম আনিছুর রহমান বুলবুল (স্বতন্ত্র), জামালপুর-২ আসনের মো. আব্দুল হালিম মন্ডল (জাকের পার্টি), নেত্রকোণা ১ আসনের মো. ছমীর উদ্দিন (জাকের পার্টি), মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সোহানা তাহমিনা (স্বতন্ত্র), চট্টগ্রাম-৪ আসনের মোহাম্মদ ইমরান (স্বতন্ত্র), ময়মনসিংহ-১০ আসনের মোহাম্মদ আবুল হোসেন (স্বতন্ত্র), খুলনা-৪ আসনের এস. এম. মোর্ত্তজা রশিদী দারা (স্বতন্ত্র), যশোর-৬ আসনের হোসাইন মোহাম্মদ ইসলাম (স্বতন্ত্র), রংপুর-২ আসনের মো. জিল্লুর রহমান (বিএনএফ), যশোর-৫ আসনের মো. হাবিবুর রহমান (জাকের পার্টি), চট্টগ্রাম-৫ আসনের মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী (স্বতন্ত্র), চট্টগ্রাম-৫ আসনের স্বপন কুমার সরকার (স্বতন্ত্র), নেত্রকোনা-২ আসনের সুব্রত চন্দ্র সরকার (স্বতন্ত্র), বগুড়া-৭ আসনের মো. আসাফুদ্দৌলা (স্বতন্ত্র), বগুড়া-৭ আসনের জুলফিকার আলী (স্বতন্ত্র) ও বগুড়া-৭ আসনের মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিলু (স্বতন্ত্র)। সিদ্ধান্ত হয়নি কক্সবাজার-১ আসনের সালাহ উদ্দিন আহমেদ (আওয়ামী লীগ), সিলেট-২ আসনের মো. আব্দুর রব (তৃণমূল বিএনপি), ঢাকা-১২ আসনের খোরশেদ আলম খুশু (জাতীয় পার্টি) ও কুষ্টিয়া-১ আসনের মহা. ফিরোজ আল মামুনের (স্বতন্ত্র)। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়াম (বেজমেন্ট-২) এ আপিল আবেদনের শুনানি প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। আজ (সোমবার ১১ ডিসেম্বর) ৯৫-২০০ নম্বর আপিল, ১২ ডিসেম্বর ২০১-৩০০ নম্বর আপিল, ১৩ ডিসেম্বর ৩০১-৪০০ নম্বর আপিল, ১৪ ডিসেম্বর ৪০১-৫০০ নম্বর আপিল এবং ১৫ ডিসেম্বর ৫০১ থেকে অবশিষ্ট আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেন। তপশিল অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সাত জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।