ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা তৈরি করা হয়

বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা তৈরি করা হয়

একাত্তরের এদিন বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা তৈরি করা হয়। প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর ও আলশামসের কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের সদর দপ্তরে ডেকে পাঠান। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় গোপন বৈঠক। এ গোপন বৈঠকে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী তাদের হাতে বুদ্ধিজীবীসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামের তালিকা তুলে দেন। এ নীলনকশা অনুযায়ী একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করা হয় বাঙালি জাতির মেধাবী সন্তানদের। মুক্তিযুদ্ধের এদিন এপিআই’র জেনারেল ম্যানেজার বিশিষ্ট সাংবাদিক নিজামউদ্দিনকে আলবদর বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের দোসররা যখন নিজামউদ্দিনের বাসায় হানা দিয়েছিল, তখন তিনি বিবিসির জন্য রিপোর্ট তৈরি করছিলেন। ওই অবস্থায় ধরে নিয়ে আলবদর বাহিনী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের জন্য মুখিয়ে থাকে। অন্যদিকে তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। রাশিয়ার ওয়াশিংটন প্রতিনিধিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার সাবধান করে দিয়ে বলেন, ভারতকে অবশ্যই যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করাতে হবে।

অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পরের দিন অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা দীর্ঘ বক্তব্য দেয়ার পর ওই অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। অন্যদিকে ৯ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্দেশে বঙ্গোপসাগরে রওনা দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর এদিন বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ২৪ ঘণ্টার দূরত্বে গভীর সমুদ্রে এসে অবস্থান নেয়। ১৯৭১ সালের এদিন সকালবেলা শত্রুমুক্ত হয় নরসিংদী। দিনাজপুরের বিরল থানার বহলা গ্রামে এদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এক নৃশংস গণহত্যা চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি বাহিনী একপর্যায়ে বহলা গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা গ্রামবাসীদের অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। গ্রামবাসী যখন অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়, তখন পাকিস্তানি বাহিনী তাদের একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দেয়। ওই মুহূর্তে মাগরিবের নামাজের সময় হয়। অনেকে মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য নামাজের কাতারে দাঁড়ান। সবাই যখন নামাজের কাতারে দাঁড়ালেন তখন পেছন দিক থেকে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে শহীদ হন ৩৭ জন। মাত্র কয়েকজন গ্রামবাসী সেদিনের নৃশংস গণহত্যা থেকে রেহাই পান। আজ কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে কুষ্টিয়া জেলার মুক্তি সেনারা সংগ্রাম করে পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে কুষ্টিয়াকে মুক্ত করেছিলেন। ১৬ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে সেদিন কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত হয়েছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত