শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় শেখ হাসিনা

বিএনপি-জামায়াতকে না বলুন

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি

বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- ‘যারা জ্বালাওপোড়াও করে, রেল লাইনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলে। এরা তো পরাজিত শক্তির দালাল। মনে রাখতে হবে, এরা পরাজিত শক্তির দোসর। কাজেই এদের না বলুন। বাংলাদেশে এদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।’

গতকাল বিকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের বাংলাদেশে রাজনীতি করারই কোনো অধিকার নেই। কারণ খুনি, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, দুর্নীতিবাজ- এদের বাংলাদেশে কোনো স্থান নেই। এরা ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। এরা মানুষ খুন করতে পারে, মানুষের জীবনে শান্তি-নিরাপত্তা দিতে পারে না। এরা মানুষের সর্বনাশ করতে পারে, মানুষকে উন্নতি দিতে পারে না। কাজেই তাদের থেকে সাবধান।

আওয়ামী লীগের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছে। তারা ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে; তারা শান্তিতে বাস করবে, উন্নত জীবন পাবে- এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা এ দেশকে আর কখনো এই পরাজিত শক্তির হাতে তুলে দেব না। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলবে এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে জাতির পিতার ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।

বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সারা দেশে তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে, তাদের আন্দোলন কী, অবরোধ-হরতাল। তাদের দেখা নেই কয়েকটা গাড়ি পোড়ানো, মানুষ পোড়ানো, রেললাইন কেটে দেওয়া, বাস পোড়ানো; এটাই হচ্ছে তাদের হরতাল, এটাই হচ্ছে তাদের আন্দোলন। তারা নাকি জনগণের স্বার্থে কাজ করে, জনগণের জন্য আন্দোলন করে। তারা নাকি গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য আন্দোলন করবে। আর গণতন্ত্র বানান করতে পারবে? আর গণতন্ত্র তারা কী শিখেছে? ওর (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান) বাপ কি গণতন্ত্র দিয়েছিল? ওটা তো কারফিউ গণতন্ত্র ছিল।

বিএনপি-জামায়াতের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ যদি মাঠে নামে এরা হালে পানি পাবে না। কাজেই আমি জনগণের কাছে আহ্বান করব, সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। এখন তাদের নানা রকম চক্রান্তও শুরু হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই চক্রান্ত হয়। কিন্তু এ দেশের মানুষের শক্তি হচ্ছে বড় শক্তি, আমি যেটা বিশ্বাস করি। সেই শক্তি আছে বলেই আমরা পরপর একটানা তিনবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি।

দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যারা হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, এরা তাদেরই প্রেতাত্মা হয়ে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে; হত্যার পরিকল্পনা করছে।

লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়াকে এখন অনুসরণ করে যাচ্ছে তার ছেলে, যেমন জিয়াউর রহমান তেমন খালেদা জিয়া আর ছেলেও একটা সেই অমানুষ পয়দা করেছে। তারেক আর রাজনীতি করবে না বলে কেয়ারটেকার সরকারের সময় ২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়, এখন বিদেশে বসে হুকুম দিয়ে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সে (তারেক) এখন দূরে বসে হুকুম দেয় আর বিএনপি মানুষ পোড়ায়, গাড়ি পোড়ায়। আর দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারার পরিকল্পনা করে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তারা এখন মানুষ মারার পরিকল্পনা করে। যারা মানুষ হত্যা করার পরিকল্পনা করে তারা কোন গণতন্ত্র দেবে!

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সংসদে বসালেন। আর ঘোষণা দিলেন দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কথায় বলে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। খুনিদের যখন সংসদে বসিয়েছেন, ওই সংসদে খালেদা জিয়া বেশি দিন বসতে পারে নাই। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করল, আর ৩০ মার্চ জনগণের রুদ্ররোষে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। নাকে খত দিয়ে পদত্যাগ করে তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। এই কথাটা বিএনপির নেতাদের মনে রাখা উচিত যে ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া বিদায় নিয়েছিল। ৩০ মার্চ জনগণের রুদ্ররোষে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। নাকে খত দিয়ে পদত্যাগ করে বিদায় নিতে হয়েছিল। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং তার ওপরে হামলার চিত্র তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

বামপন্থিদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কিছু অতি বামপন্থিরা, তারা এখন ওদের সঙ্গে নেমে পড়েছে। কী রকম আদর্শের বিকৃতি। তারা জামায়াত-শিবির খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আমাদের বামপন্থি আদর্শবাদীরা।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ থাকলে এদেশের মানুষ সেবা পায়। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজকে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশকে হেয় চোখে দেখা হতো। পাকিস্তানিরা বোঝা মনে করত, এটা চলে গেলেই ভালো। আজকে তারা বলে আমাদেরকে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিন, লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ।

সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম।