ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আগামী মাসে প্রকাশ পাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের দ্বিতীয় তালিকা

আগামী মাসে প্রকাশ পাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের দ্বিতীয় তালিকা

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রথম তালিকা প্রকাশের আড়াই বছর পর দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলতি মাসের মধ্যে কিংবা আগামী জানুয়ারির শুরুতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সূত্র এমন তথ্য দিয়েছেন। বিজয়ের অর্ধশতাধিক বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা যায়নি। অথচ বিজয়ের পথে পথে মিশে আছে বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগ। ৩ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি তালিকা করার উদ্যোগ নেয়। প্রথম দফায় একটি তালিকা করাও হয়। কিন্তু এরপর আর এ উদ্যোগ এগোয়নি। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের জন্য তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো হচ্ছিল। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে না পারায় বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তানেরা।

তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। সময়মতো অগ্রগতি জানতে পারবেন। এর আগে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নে গঠিত কমিটির প্রথম সভায় প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ২২২ জন বুদ্ধিজীবীর তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ২০২১ সালের ২৫ মার্চ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রথম তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রথম দফার তালিকায় স্থান পায় ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম। কয়েকবারই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা পূর্ণাঙ্গ করার আশাবাদের কথা জানিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এ বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। জানা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ণের জন্য ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তখনকার সচিব তপন কান্তি ঘোষকে এই কমিটির সভাপতি করা হয়। মন্ত্রণালয়ের তখনকার অতিরিক্ত সচিব মো. শহীদুল হক ভূঁঞাকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। উপসচিব রথীন্দ্র নাথ দত্ত কমিটিতে সদস্য সচিব হন। কিন্তু ২০২১ সালের ৩০ মে তপন কান্তি ঘোষকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়। অন্য কর্মকর্তারাও বদলি হন।

কমিটিতে গবেষক সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ জহির (বীরপ্রতীক)। গত বছর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার বলেছিলেন, ‘আজ বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে, আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছি। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। তবে আমাদের আক্ষেপের জায়গা একটি, সেটা হলো বাংলাদেশের সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা এখনো হয়নি।

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও একটা তালিকা করতে পারলাম না। আমরা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে বার বার দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানাসহ মতামত দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় কমিটিকে।

কমিটিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন শহীদদের মধ্যে কারা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন সেই সংজ্ঞা নির্ধারণ করতেও বলা হয়।

বিভিন্ন গবেষণা গ্রন্থ, পত্রিকার কাটিং, টিভি রিপোর্ট, অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় কমিটিকে। একই সঙ্গে কমিটিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ সংস্থা/জেলা/উপজেলা ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিদের আবেদন যাচাই-বাছাই ও শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করতে বলা হয়।

কমিটি নির্ধারিত শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা অনুযায়ী, যেসব সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক সঙ্গীত ও শিল্পকলার অন্যান্য শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যাদের বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

পরে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর কমিটির প্রথম সভায় প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২২২ জন বুদ্ধিজীবীর তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ১৯৭২ সালে ১ হাজার ৭০ জন শহীদের তালিকা, পরবর্তী সময়ে ডাক বিভাগ ১৫২ জন শহীদের ডাকটিকিট প্রকাশ করে সেই তালিকাও অনুমোদন দেওয়া হয় ওই সভায়। পরের বছরের স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন ২৫ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রথম তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রথম দফা তালিকায় ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম আসে।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তান বাহিনী বুঝতে পারে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব না। তখন তারা সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে অঙ্কুরেই দুর্বল করে দিতে এক হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তাদের বাসা থেকে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে।

এ গণহত্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। বন্দি অবস্থায়ও বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত মরদেহ রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়।

অনেকের মরদেহ শনাক্তও করা যায়নি। কারও কারও লাশের হদিসই মেলেনি। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পালিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত