দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

ইসির আপিল শুনানিতে বাদ পড়ল ডজনখানেক হেভিয়েট প্রার্থী

ছয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ২৭৫ জন প্রার্থী

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দায়ের করা আপিলের শুনানিতে ছয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ২৭৫ জন। শেষ দিন গতকাল শুনানিতে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ২২ জন। তবে ইসির শুনানিতে বাদ পড়েছেন আওয়ামী প্রার্থীসহ হেভিয়েট ডজন খানেক প্রার্থী। সূত্র জানায়, শুনানির শেষ দিন দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুইজনসহ মোট তিনজন হেভিয়েট প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছে ইসি। আপিল শুনানিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বরিশাল-৪ আসনের শাম্মী আহমেদ ও ফরিদপুর-৩ আসনের শামীম হক এবং বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করেছে ইসি। তবে, ফরিদপুর-তিন আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল কাদের আজাদের (একে আজাদ) বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে করা আপিল খারিজ করে দিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।

গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আপিল শুনানিতে এসব রায় দেয় ইসি। আপিল শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। উপস্থিত ছিলেন অন্য চার কমিশনারসহ ইসি সচিব।

বরিশাল-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহমেদ মনোনয়নপত্রে তার দ্বৈত নাগরিকত্ব (অস্ট্রেলিয়া) সংক্রান্ত তথ্য গোপন করেছেন মর্মে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করে তার প্রার্থিতা বাতিল চেয়েছিলেন ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ দেবনাথ। অভিযোগ পেয়ে শাম্মী আহমেদের যাচাই-বাছাই শেষে মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল দায়ের করেন শাম্মী আহমেদ। পরে তার দ্বৈত নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকার অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সহায়তায় সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দেয় ইসি। তারই পরিপ্রেক্ষিতেই দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রমাণ পাওয়ায় শাম্মী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করল কমিশন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ফরিদপুর-৩ আসনের প্রার্থী শামীম হক হলনামায় তথ্য গোপন করায় তার মনোনয়ন বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেছিলেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী একে আজাদ। মনোনয়নপত্রে তার দ্বৈত নাগরিকত্ব (নেদারল্যান্ডস) সংক্রান্ত তথ্য গোপন করেছেন মর্মে অভিযোগ করে প্রার্থিতা বাতিল চান স্বতন্ত্র প্রার্থী। তার এই আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে শামীম হকের নেদারল্যান্ডসের দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কিত তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল কমিশন। পরে আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য হওয়ায় আপিলে তার মনোনয়ন বাতিল করল ইসি।

প্রথমে, নৌকার প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিতে আবেদন করেছিলেন একে আজাদ। পরে একে আজাদের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করেন শামীম হক। হলফনামায় ‘মিথ্যা তথ্য’ দেওয়ার অভিযোগ তুলে একে আজাদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেন তিনি। তার আপিলের ফলে একে আজাদের দ্বৈত নাগরিকত্বের তথ্য দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয় কমিশন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের জন্য বলেছিল সংস্থাটি।

শুনানি শেষে বের হয়ে একে আজাদের পক্ষের আইনজীবী বলেন, ফরিদপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের আইনজীবী একটি অভিযোগ দাখিল করেন যে, একে আজাদ আমেরিকার নাগরিক। গতকাল কমিশন শুনানিতে শামীম হকের আইনজীবীর কাছে জানতে চায় তাদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে কি না। জবাবে তারা জানান, তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। পরে তথ্য প্রমাণ না থাকায় একে আজাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করে দেয় ইসি।

বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে আপিল করেন ওই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম। সাদিকের বিরুদ্ধেও দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ আনা হয়। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে তার মনোনয়নপত্রের সমর্থনকারী কে বি এস আহমেদ ইসিতে এই আবেদন করেন।

আপিলে সাদিক আবদুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ভোটার হিসেবে উল্লেখ করে সেখানকার ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া তথ্যও যুক্ত করা হয়। আপিল শুনানি শেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে রায় দেয় ইসি। তবে প্রার্থিতা ফিরে পেতে সাদিক আবদুল্লাহ হাইকোর্টে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।

এর আগে শুনানিতে কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিনের আবেদন নামঞ্জুর করে প্রার্থিতা বাতিল রেখেছে নির্বাচন ইসি। এছাড়া গতকাল নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পাননি লক্ষ্মীপুর ২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী, কুয়েতে দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপলুর স্ত্রী ও কুমিল্লার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম।

ইসি কর্মকর্তরা জানান, আগের দিন নির্বাচন কমিশনে চলমান আপিল শুনানিতে যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন নির্বাচন কমিশন।

অন্যদিকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সালামের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছিলেন সেখানকার রিটার্নিং কর্মকর্তা। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান। গত বৃহস্পতিবার ইসি অনুষ্ঠিত শুনানিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে কমিশন। এর ফলে আবদুস সালামের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। ঋণখেলাপি হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

এছাড়া সরকারি ব্যাংকে ঋণখেলাপির দায়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেই প্রার্থিতা হারান পাবনা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আপিল করেও নিজের প্রার্থিতা ফিরে পাননি তিনি।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামীকাল। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।