মহান বিজয় দিবস পালন

নাশকতা ও নৈরাজ্যে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

নাশকতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করে গতকাল দেশে ৫৩তম মহান বিজয় দিবস পালিত হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র বিজয় র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এসব সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আগামী দিনে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও নৈরাজ্যমুক্ত সমাজ গঠনে এগিয়ে আসার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ভোর ৬টা ৩৩ মিনিটে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপ্রধান। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল এ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদর্শন করে। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সেখানে রাখা একটি দর্শনার্থী বইতেও স্বাক্ষর করেন।

বায়ান্ন বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। ত্রিশ লাখ শহীদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে একটি নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল ছিল সরকারি ছুটি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশে পরিণত করে। এই বিজয় স্মরণে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর পালিত হয়।

সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মহান নেতা ও স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

পরে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রীবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর প্রতিনিধিরা এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির মধ্য ছিল সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৬টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। ৮টায় ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।

এদিকে সকাল ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি ও ইকবাল হোসেন অপু এমপি প্রমুখ।

এদিকে আজ বেলা ৩টায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আগামী ১৮ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানমন্ডি বত্রিশস্থ ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে বিজয় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, একটি উদ্বোধনী খাম ও একটি ডাটাকার্ড অবমুক্ত করেন।

শেখ হাসিনা সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ সিলমোহর ও ব্যবহার করা হয়।

এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা : বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বিভিন্ন সংগঠন।

বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। এরপর পুলিশ সুপার আল-বেলী আফিফা, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গোপালগঞ্জ জেলা ইউনিট, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ইউনিট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস, কৃষিগবেষণা ইনস্টিটিউট, জেলা পরিষদ, গোপালগঞ্জ পৌরসভা, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, টুঙ্গিপাড়া পৌরসভাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের ঢল নামে বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে। বিজয়ের এ ক্ষণে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মাধ্যমে স্বাধীনতার এ মহানায়ককে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন উপস্থিত সর্বসাধারণ।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী ৩০ লাখ শহীদ এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর পরিবারের শাহাদাৎবরণকারী সব সদস্যের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া মোনাজাত করা হয়।

বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। আলোক সজ্জায় সমাধিসৌধ কমেপ্লেক্স আলোকোজ্জ্বল হয়ে ওঠে।