দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

* ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের ২ লাখ ৬২ হাজার ভোটকক্ষ * এবার ১১ কোটি ৯৭ লাখ ভোটার * অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলীয়, স্বতন্ত্র ও জোটের প্রার্থীদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনের সামনে কথা কাটাকাটির জেরে দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হাতাহাতির ঘটনায় দুজনকে আটক করে পুলিশ। গত বুধবার ভোট চাওয়াকে কেন্দ্রে করে ফরিদপুরেও আওয়ামী লীগ-স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২২ জন আহত হয়। নির্বাচনকেন্দ্রিক এ ধরনের সংঘর্ষ নিয়ে মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। তবে নির্বাচন কমিশন ভোটকেন্দ্রিক সংঘর্ষ এড়াতে মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর অবস্থানে থাকার পরিকল্পনা করছে। সুষ্ঠু ভোটের আয়োজনে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সদস্যদের মাঠে রাখতে পারে ইসি।

জানা গেছে, এবার ১১ কোটি ৯৭ লাখ ভোটারের জন্য উৎসবমুখোর ভোটের আয়োজনের চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে এবং ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, জোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর নজর রাখছে ইসি। নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে সহিংসতার ঘটনা এড়াতে পুলিশ, র‌্যাব ও বডার্র গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করবে। প্রয়োজনে ভোটের আগে ও পরে ১৩ দিনের জন্য সারা দেশে সেনা মোতায়েন হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাড়ে ৭ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভোটের মাঠে কাজ করবে। যা একাদশ সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এক লাখ ৩০ হাজার বেশি। এই সাড়ে ৭ লাখের মধ্যে আনসার সদস্য থাকবে ৫ লাখ ১৬ হাজার জন, পুলিশ ও র‌্যাব ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন, কোস্ট গার্ড দুই হাজার ৩৫০ জন এবং বিজিবি সদস্য থাকবে ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন। এরপরও নির্বাচনের আগমুহূর্তে মাঠপর্যায়ে নিরাপত্তার ঝুঁকি মনে হলে সেনাবাহিনী মোতায়েন হতে পারে। ৭ জানুয়ারির ভোটের দিনকে সামনে রেখে অন্তত ছয় দিনের জন্য মাঠে থাকবে নিরাপত্তা সদস্যরা।

গত ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে জারি করা এক পরিপত্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাস্তানদের তালিকা করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসহ সব ধরনের বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা জোরদার করতে বলা হয়।

এরপরই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও অপরাধী ধরতে মাঠে অভিযান অব্যাহত রেখেছে র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গত কয়েক দিনে সারা দেশে অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্দেহভাজন অপরাধীদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ভোটের মাঠে কোনো প্রকার অবৈধ অস্ত্র যেন ব্যবহার না হয় সেজন্য সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্যরা। গত কয়েকদিন সুনির্দিষ্ট করে কিছু এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ নেই। যাদের বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র রয়েছে, তাদেরও নির্বাচনের আগে নির্দিষ্ট থানায় তা জমা দিতে হবে।

নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাতে এবার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। সাধারণত এর দুই-তৃতীয়াংশই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয়, বাকিটা খরচ হয় নির্বাচন পরিচালনা খাতে। দেশের প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের ২ লাখ ৬২ হাজার ভোট কক্ষে এবার প্রায় ১১ কোটি ৯৭ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

তপশিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় আজ। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন আগামীকাল ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।

সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি নির্বাচনে বিভিন্ন অপরাধের বিচার করার জন্য মাঠে থাকবেন ৬৫৩ জন বিচারিক হাকিম। এরই মধ্যে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি আইন মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে রিকুইজিশন দিয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবার রহমান সরকার। তিনি বলেন, বিচারিক হাকিম কাজ করবেন পাঁচ দিন।

ভোটের আগে দুই দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরে দুই দিন কাজ করবেন। জুডিশিয়াল অফিসার নিয়োগ হয়েছে নির্বাচনি তদন্ত কমিটিতে। আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিমকোর্টের অনুমোদন নিয়ে বিচারিক হামিক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে তারা তদন্ত করতে পারবেন। তারা রিপোর্টের পাশাপাশি স্ব উদ্যোগে তদন্ত করতে পারবেন।

ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে গত সোমবার সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে সর্বত্র চেষ্টা করছে ইসি। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে খুবই সিরিয়াস। রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হলে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব যেন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে। অতীতের নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হয়েছে; এবারও রাষ্ট্রপতি অনুমতি দিলে সেনা মোতায়েন হবে।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে যথা-প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয় সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে।