ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা

মৃত্যুফাঁদ তৈরি করে মানুষ হত্যা করে বিএনপি

মৃত্যুফাঁদ তৈরি করে মানুষ হত্যা করে বিএনপি

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মৃত্যুফাঁদ তৈরি করে দেশের মানুষকে হত্যা করে বিএনপি। বিএনপির মাথা নেই। তাদের নেতৃত্ব দেবে কে? বিদেশ থেকে আসে এক নির্দেশনা। পল্টন থেকে আসে আরেক নির্দেশনা- কোনটা পালন করবে তাদের নেতাকর্মীরা? গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেতারা বলেছিল আমরা আছি পল্টনে; তারেক কেন লন্ডনে? তারেকের নির্দেশে মানুষ পোড়ানো হচ্ছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা। দেশের জনগণ বিএনপিকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বর্তমান বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষ জানে কারা তাদের ভাগ্যোন্নয়ন করে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

নির্বাচন বানচালেন চেষ্ঠা করছে বিএনপি জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে বিএনপি। এজন্য দেশের মধ্যে তারা আগুন সন্ত্রাস শুরু করছে। বিএনপি রেললাইন কেটে মৃত্যুর ফাঁদ পেতে তারা মানুষ হত্যা করেছে। জিয়া আর খালেদা জিয়ার মতো লন্ডনে বসে হুকুম দেয় তারেক রহমান। ওখান থেকে হুকুম দেয় আর এখান থেকে আগুন দেয়। এটা তারা কী করছে। এই আগুন নিয়ে খেলা, এই খেলা ভালো না, বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নেবে না। রেললাইন কাটা এবং অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

আগুনসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করছে বিএনপি- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে, আন্দোলনের নামে আগুনসন্ত্রাস করে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। বাসে, গাড়িতে, ট্রেনে লঞ্চে- সব জায়গায় তারা আগুন দিয়েছে। নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছিল, পারেনি। তাদের এই অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার আজকে কত মানুষ পোড়া শরীর নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত ধরে। ভোট কারচুপি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনলে খুব অবাক লাগে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, ভোট কারচুপি করা, সিল মারা, হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে হ্যাঁ ভোটের বাক্স ভরা, এগুলো কে করেছে? এগুলো তো জিয়াউর রহমানই শুরু করেছেন। তারা আবার ভোটের অধিকারের কথা বলেন। জিয়াউর রহমান অবৈধ ক্ষমতা দখল করে এসবের শুরু করেছেন। বিএনপিকে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করবে কীভাবে? সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে নয়, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে। এদের চরিত্র কখনো বদলাবে না। জনগণের কল্যাণ-মঙ্গলের কথা এরা চিন্তা করে না। নিজেদের কথাটা ভালো বোঝে। যখনই ক্ষমতায় এসেছে অর্থ সম্পদ বানানো, বিদেশে অর্থ পাচার করা, মানি লন্ডারিং করা, এমনকি এতিমের অর্থ পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে। আর তাদের কাছ থেকে বড় বড় কথা শুনতে হয়। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট কারচুপি করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। সেই সময়ে ওই নির্বাচন কিন্তু কেউ মেনে নেয়নি। জনগণের আন্দোলনের কারণে খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে। ভোট চুরি অপবাদ মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া বিদায় নেন। যারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা দেশের জন্য দুর্ভাগ্যের। জোর করে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে জনরোষের আন্দোলনে ছিয়ানব্বইতে ভোট চুরির অপবাদ নিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। দেশের মানুষই তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন। তিনি বলে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে, ২০০১ সালের জুলাই মাসে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ২৬ বছরে প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা স্থানান্তর করা হয়। এর আগে একবারও এমন হয়নি। সেই নির্বাচনে ব্যাপকভাবে অনিয়ম করে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, গ্যাস বিক্রি মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে। তবে গ্যাস দিতে পারে নাই।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির দুঃশাসন, দুর্নীতির কারণে দেশে ইমার্জেন্সি হয়। ইমার্জেন্সি সরকারের কথা ছিল মাত্র তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবে। তারাও ক্ষমতার লোভে চেপে বসে। আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের জনগণকে, ধন্যবাদ জানাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে। সবাই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে আমার মুক্তির জন্য ২৫ লাখ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে। তখন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তার অফিসে পৌঁছে দেয়। এটা অন্য কোনো দলের পক্ষে সম্ভব না। আওয়ামী লীগ শত প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলে। আওয়ামী লীগের ওপর যত আঘাত আসুক, ঝড়ঝাপটা আসুক, আওয়ামী লীগ জনগণের হয়ে লড়াই করে। জনগণের ভোটের-ভাতের অধিকার অর্জন করে। এরপর ২০০৮ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। এই নির্বাচনে ২৩৩টি সিটে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে। আর অন্যদিকে ক্ষমতা দখলকারী মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০ সিট। আমি এজন্য কথাগুলো বললাম, কারণ তাদের চরিত্র বদলায় নাই।

বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি হরতাল ডেকে চুপ করে ঘরে থাকে। তারা যে আন্দোলন করে আগুনসন্ত্রাস করে, এত টাকার উৎস কোথায়? হাওয়া ভবন খুলে অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং করে টাকা পাচার করেছে বিএনপি। যারা আগুন দেয় এবং রেললাইন কাটবে তাদের ধরিয়ে দিতে হবে। ধ্বংসাত্মক কাজ চলতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতি বীরের জাতি। ৭ই মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন- এ বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও পারবে না। এবারের বিজয় দিবসে সারা বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত আনন্দের সাথে অংশগ্রহণ করেছে। আমাদের পাশে ছিল মিত্র বাহিনী, মিত্র বাহিনীর শক্তি ভারত। ভারতের জনগণ, ভারতের তৎকালীন সরকার, বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধী এবং ভারতের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়। ভারতের এমন কোনো দল ছিল না যে, আমাদের সমর্থন দেয়নি। এই মিত্র শক্তির সাথে সাথে আরো অন্যান্য দেশেরও সমর্থন পাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা সরকার পাকিস্তানকে সহযোগিতা করলেও মার্কিন জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের পাশে ছিল। সোভিয়েত রাশিয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশগুলোও আমাদের সমর্থন করে। সবার সমর্থন নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত