দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

প্রতীক পেয়ে ভোট ভিক্ষায় প্রার্থীরা

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। গতকাল সারা দেশে রিটার্নিং অফিসাররা ২৭টি নিবন্ধিত দলের এবং স্বতন্ত্র মিলে মোট ১ হাজার ৮৯৬ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেন। প্রতীক পেয়ে প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় মরিয়া হয়ে ভোটারের কাছে ছুটে যান।

সূত্র জানায়, তপশিল অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রচারণা চালানো যাবে। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসন ভাগ হয় আওয়ামী লীগ ও শরিক দল এবং জাতীয় পার্টির মধ্যে। প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার আগের দিন গত শনিবার আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলগুলো এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্ধারণ চূড়ান্ত হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শরিক ১৪ দলকে ছয়টি, জাতীয় পার্টিকে ২৬ আসনে ছাড় দিয়ে ২৬৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমাদের দিক থেকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আমরা জোর দিচ্ছি। তিনি বলেন, যেটা হলো বিশ্বের দেশগুলো আমাদের নির্বাচনের খোঁজখবর নিচ্ছে। আমাদের ‘ডোনার’ দেশগুলো দেখতে চাচ্ছে নির্বাচন। সেটাকে চাপ বলেন বা সেনসেটাইজেশন বলেন, তারা সব দৌড়ঝাঁপগুলো করছে। আমরা দেখেছি, যার ফলে সরকারও বারবার বলেছে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। আমাদের তরফ থেকেও আমরা বলেছি নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু হবে। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটিতে মেম্বার এবং কমিটি অব নেশনসে আমরা সদস্য। আন্তর্জাতিকভাবেও নির্বাচনটা সুন্দর হোক, স্বচ্ছ হোক বহির্বিশ্বের কাছেও নির্বাচনটা একটা ভালো গ্রহণযোগ্যতা পাক, সেই প্রত্যাশা সবার মধ্যে। আমাদেরও আছে। আমাদের দিক থেকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নিশ্চিত করার জন্য আমরা জোর দিচ্ছি।

সিইসি বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ দল তারা অংশ নিলে ভালো হতো। আমরা প্রথম থেকেই তাদের আহ্বান জানিয়েছি, আমন্ত্রণ জানিয়েছি, তারা সাড়া দেয়নি। বিএনপি অংশ নিলে দেশের উপকার হবে এমনটি বলেছিলেন, এখন কী মনে করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, যেটা আগেও বলেছি, তারা অংশ নিলে নির্বাচনটা অনেক বেশি অংশগ্রহণমূলক হতো।

বিএনপি না আসায় গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে সমস্যা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- না, সে বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না। সেটা নির্বাচনের পরে দেখা যাবে। ভোট বর্জনকারীরা নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে, এ নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী- এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, প্রতিহত যদি উনারা করতে চান এটা তাদের রাজনৈতিক পলিসি। সেটার নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমরা কেবল নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ করতে চাই।

প্রচার তো শুরু হয়েছে, বড় দল বা গোষ্ঠী আসেনি, আপনি কতটুকু স্বস্তিবোধ করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, অস্বস্তি বা স্বস্তি কোনোকিছুই আমার মধ্যে নেই। আমার দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচনটা যেভাবে করতে হয়, আমরা সরকারের সহায়তা নিয়ে হোপফুলি প্রশাসন সবার সহায়তা নিয়ে নির্বাচনটা করতে চাচ্ছি। আমার ব্যক্তিগত স্বস্তি, অস্বস্তি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এটা ঠিক, একটা গুরুত্বপূর্ণ দল তারা অংশ নিলে অনেক ভালো হতো।

এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে গত রোববার ৩৪৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। রিটার্নিং অফিসার থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, মোট মনোনয়ন দাখিলের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭১৬ জন। বাছাইয়ে বাতিল হয়েছিল ৭৩১ জন। আপিল দায়ের হয়েছিল ৫৬০টি। আপিল মঞ্জুর হয়েছিল ২৮৬টি এবং আপিল নামঞ্জুর হয়েছিল ২৭৪টি। এছাড়া, সারা দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে ৩৪৭টি, স্থগিত আছে পাঁচটি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে এখন মোট বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৯৬টি।

ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। গতকাল এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সব রিটার্নিং অফিসারদের পাঠিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান। এতে বলা হয়েছে- নির্বাচনি দ্রব্যাদি পরিবহন ও বিতরণে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের দিন সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে জেলা পর্যায়ে ও জেলা পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যায়ে এবং উপজেলা পর্যায় হতে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনি দ্রব্যাদি পরিবহন ও বিতরণের সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে। এ লক্ষ্যে পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।