ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেড় যুগে বদলে গেছে গণপূর্ত

১৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার ফ্ল্যাট

* সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সমস্যা হ্রাস
১৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার ফ্ল্যাট

মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার একটি বাসস্থান। আর সরকারি চাকরিজীবীদের সেই বাসস্থানের সংকট নিরসনে কাজ করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তর। গত দেড় যুগে আবাসনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তুলেছে নতুন নতুন অট্টালিকা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা ১৩ হাজার ৫২টি ফ্ল্যাট থেকে বেড়ে প্রায় ২৫ হাজার ফ্ল্যাট হয়েছে।

জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য ২০০৯ সালে ফ্ল্যাট ছিল ১৩ হাজার ৫২টি, যা মোট চাহিদার ৮ ভাগ। ফলে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকারি বাসা না পেয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে বেসরকারি বাসায় থাকতে হয়েছে। এতে তাদের জীবনযাত্রার মান ব্যাহত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে আবাসন সুবিধা ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার অনুশাসন দিয়েছিলেন। এছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সব ধরনের আধুনিক সুবিধাসহ বহুতল ভবন নির্মাণেরও নির্দেশ দেন। এসব নির্দেশনা মেনে বিদ্যমান আবাসন সংকট নিরসনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে থাকা বিভিন্ন খালি জমিতে এবং আবাসন এলাকায় জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে যার সুফল পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন নির্মাণে চলমান প্রকল্পের কাজগুলো দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। বর্তমানের ইতিবাচক ধারাটি অব্যাহত থাকলে আবাসনের সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হবে। কারণ দেড় যুগ আগের গণপূর্ত অধিদপ্তর আর আজকের গণপূর্ত অধিদপ্তর এক নয়। আজকের গণপূর্ত অধিদপ্তর এক বদলে যাওয়া গণপূর্ত অধিদপ্তর। অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ২০০৯ সালের অর্থবছরে ৩৭২ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ হলেও বর্তমানে ১ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ হয়েছে। বাজেটে বরাদ্দ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সুবিধাও বেড়েছে। একইসঙ্গে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, অফিস, উদ্যান রক্ষণাবেক্ষণ এবং সরকারি মালিকাধীন জমির সুষ্ঠু ব্যবস্থার নিশ্চিতকরণসহ ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হয়েছে।

গণপূর্তের কয়েকজন প্রকৌশলী জানান, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় গত ১৫ বছরের নিরলস পরিকল্পনা পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টা চালিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা। সরকারের অবকাঠামো উন্নয়ন ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে বহু সুউচ্চ ভবন সফলতার সঙ্গে নির্মাণ করেছে এবং করছে। ফলে ১৫ বছরে গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের অবকাঠামো উন্নয়নের নথিতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাজে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতিয়ার অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতে গুরুত্ব দিয়েছে। যার ফলে গত প্রায় ১৫ বছরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক বহু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে- ঢাকা জিগাতলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট, আজিমপুরে সরকারি কলোনিতে বহুতল আবাসিক ভবন, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১ হাজার ৬৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট, গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে ২০টি পরিত্যক্ত বাড়িতে ৩৯৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট (সংশোধিত ৩১১টি), আজিমপুরে বিচারকদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন, তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৩ তলা আবাসিক ভবন, আজিমপুর সরকারি কলোনির অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে বহুতল ভবন, মালিবাগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪৫৬টি ফ্ল্যাট, বেইলি রোডে মন্ত্রীদের আবাসিক ফ্ল্যাট, ইস্কাটনে সচিবদের জন্য ৩টি ২০তলা বিশিষ্ট ভবনে ১১৪টি ফ্ল্যাট, এফএসএফ-এর অফিসার্স মেস ও ননগেজেটেড কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৬০৮টি ফ্ল্যাট (সংশোধিত ফ্ল্যাট ৪১৬টি), মতিঝিল সরকারি কলোনিতে বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য ফ্ল্যাট, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শেরে বাংলানগরে ৪৪৮টি ফ্ল্যাট এবং পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও ২২৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গণপূর্ত অধিদপ্তর রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারা দেশে বহুতল ভবন নির্মাণসহ সরকারি স্থাপনা সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এরমধ্যে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে সিজিএস কলোনিতে জরাজীর্ণ ১১টি ভবন ভেঙে ৯টি বহুতল আবাসিক ভবনে ৬৮৪ ফ্ল্যাট ও ও ডরমিটরী নির্মাণ করেছে। মানিকগঞ্জে বহুতল বিশিষ্ট সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন এবং নোয়াখালী সদরেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন করেছে।

প্রকৌশলীরা বলছেন, বহুতল ভবন নির্মাণে গুণগতমান বজায় রাখে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সুনামের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও দপ্তরের ভবন নির্মাণ করে চলছে সংস্থাটি। পরিবেশবান্ধব ভবনে জানালায় তাপ প্রতিরোধী থাই গ্লাস, উন্নত ফিটিংস ও টাইলসকৃত ফ্লোরসহ আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে এসব ভবনে। রয়েছে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি ফায়ার এক্সিট ও সুপরিসর বারান্দা ও কমন স্পেস। প্রকল্পগুলো নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থাপন করা হয়েছে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা এসটিপি। রয়েছে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়।

এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার আলোকিত বাংলাদেশ’কে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও দিকনির্দেশনায় সরকারি চাকরিজীবীদের অত্যাধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) প্রজেক্টগুলোর অনুমোদন দিয়েছেন। উনার দৃঢ়তা, বিশ্বাস ও মনবল ছাড়া ব্যয় বহুল এসব বহুতল ভবন নির্মাণ সম্ভব ছিল না। গণপূর্তের প্রজেক্টগুলোর অনুমোদন দেওয়া একটি বড় বিষয় ছিল। ফলে কিছু দিন আগেই কয়েক হাজার ফ্ল্যাট উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালের আগে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রজেক্ট কম ছিল, পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে আবাসন ব্যবস্থা ৮ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীতকরণের ঘোষণা দেন। বর্তমানে প্রায় ৩৩ শতাংশ আবাসন ব্যবস্থার উন্নীত করতে পেরেছি। তবে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, সেগুলো সম্পন্নে আবাসন ব্যবস্থা ৪০ শতাংশে উন্নীত হবে।

উন্নয়ন বাজেটের বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আরো বলেন, গণপূর্তের উন্নয়ন বাজেট প্রণয়নকালে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল দীর্ঘমেয়াদি ভিশন, উন্নয়ন অগ্রাধিকার ও নীতি কৌশল আমলে নেয়। এবার ১ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ হয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থ সুষ্ঠুভাবে খরচ করে প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়েছে। যেসব প্রকল্প লাভজনক সেই ধরনের নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সংকট নিরসনে বহুতল ভবন অগ্রাধিকার বিবেচনায় যে বরাদ্দই প্রদান করা হোক, সুবিবেচনা, মিতব্যয়িতা ও দক্ষতার সঙ্গে খরচ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত