সিলেটের নির্বাচনি জনসভায় শেখ হাসিনা

নৌকা দেবে স্মার্ট বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই দেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’র রূপ পাবে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছি। স্মার্ট বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব দেশ, দক্ষ জনগণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন তৈরি করব। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তুলব।

গতকাল বিকালে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনি জনসভায় একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা এই জনসভার মধ্যদিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করলেন তিনি। বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে জনসভাস্থলে আসেন শেখ হাসিনা। হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ছোটবোন শেখ রেহানাও। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত জনতার কাছে ভোট চাইলে তারা দুই হাত তুলে সমস্বরে নৌকার প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান। জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ, ১৫ আগস্টের শহীদ ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেবেন। এই নৌকা নূহ নবীর নৌকা। এই নৌকায় মানবজাতিকে রক্ষা করেছিলেন রাব্বুল আলামিন। নৌকায় ভোট দিলে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, উন্নয়ন দিয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও সেবা করার সুযোগ দেবেন। বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন, উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হবে, জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করব।

নির্বাচন রুখতে বিএনপি-জামায়াত অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়- উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারেক রহমান রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছে। সেখানে বসে নির্বাচন বন্ধ করতে আগুন সন্ত্রাসের হুকুম দিচ্ছে। বিএনপি বলে ভোট করতে দেবে না। নির্বাচন বন্ধ করতে বলবে- এত সাহস কোথা থেকে পায়? একটা অনুরোধ আপনাদের কাছে, আজকে সব জায়গায় বোমাবাজি, অগ্নিসন্ত্রাস এবং আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যারা লুটেরা, খুনি, হত্যাকারী, দুর্নীতিবাজ, এতিমের অর্থ আত্মসাতকারী তারাই এদেশের মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তারা (বিএনপি-জামায়াত) মনে করেছে, দুইটা আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে। কোনো মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকলে এইভাবে আগুন নিয়ে মা-সন্তানকে পোড়াত পারে? আজ আগুন দিয়ে বাস পোড়াচ্ছে, রেল পোড়াচ্ছে। ২০১৩ সালে নির্বাচন ঠেকাতে অগ্নিসংযোগ করে, গাড়ি পোড়ায়। তাদের আগুনে ৩ হাজারের মতো মানুষ পুড়ে যায়। ৫০০’র মতো মানুষ মারা যায়। তবে অগ্নিসংযোগ করে তারা ২০১৩ সালের নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। ২০১৮ সালে তারা নির্বাচনে এলো। কিন্তু ভোট করবে কী? ওই লন্ডনে বসে একটা নমিনেশন দেয়। গুলশানে বসে একটা দেয়, আর পল্টন বসে আরেকটা। নমিনেশন বাণিজ্য শুরু করে দিল। এই সিলেটেও বাণিজ্য করেছে। বাণিজ্য করেই তাদের নির্বাচন শেষ। দোষ কার? দোষ তো তাদের।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলের প্রতি ইঙ্গিত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা গণমানুষের দিকে তাকায়নি। মানুষের কল্যাণ করেনি। তারা লুটপাট, জনগণের ভোট চুরি এই চুরি করাটাই ছিল তাদের কাজ। তারা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো কাজ করেনি। সেটা করলে অনেক আগেই বাংলাদেশের উন্নতি হতে পারতো। তারা এসেছিল ক্ষমতাকে ভোগ করতে। দেশে ফিরে এসে আমি দেখেছি কীভাবে ক্ষমতা ভোগ করে কুক্ষিগত করে রাখে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি বলে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। ক্ষমতায় আনা হলো বিএনপিকে। জনগণের সম্পদ চোর বিএনপিকে ক্ষমতায় বসালো ভোট কারচুপির মধ্য দিয়ে। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। যার কারণে তার পিঠে বাহবা দিয়ে ক্ষমতায় বসানো হয়। ফলাফল হলো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি আর দুঃশাসন। খালেদা জিয়া যে কূপ খনন করে গ্যাস পায়নি, আওয়ামী লীগের আমলে আমরা সেই কূপ খনন করে কেবল গ্যাস নয়, তেলও পেয়েছি। আল্লাহ জন বুঝেই ধন দেয়। আল্লাহ জানেন, ওদের কাছে দিলে সব নয়-ছয় করবে। আওয়ামী লীগের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগবে। ঠিক কি না বলেন?

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপির চেয়ারম্যান কে? মানিলন্ডারিং, গ্রেনেড হামলা, অস্ত্র চোরাকারবারী এবং দুর্নীতি। তাদের দুর্নীতির শাস্তি এফবিআই দিয়ে গেছে। কোনো দিন রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে চলে গেছে। আর এখন ওখানে বসে বসে হুকুম দিয়ে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়। এটা হলো তাদের চরিত্র। দেশের সব ধরনের নাশকতায় বিএনপির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের মানুষ যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছিল ও অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল, তখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বাবা-মা কে হত্যা করার পর আমাকে বাংলার মাটিতে আসতে বাধা দেওয়া হয়। সব বাধা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মানুষের জন্য ফিরে আসি। দেশে ফিরে শপথ করেছিলাম বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। তাদের জন্য আমি কাজ করব, সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি।

এর আগে দুপুর ১টার দিকে সিলেট হযরত শাহজালাল, শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জিয়ারত শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ মানুষ ভোট চায়, উন্নয়ন চায়। তাই বিএনপি-জামায়াতের হরতাল অবরোধে তারা সাড়া দিচ্ছেন না।

এ সময় তার সঙ্গে ছোটবোন শেখ রেহানা ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় নেতা এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গতকাল দুপুরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-৬০১ এর একটি ফ্লাইটে বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।