ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে : শেখ হাসিনা

জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে : শেখ হাসিনা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকা নূহ নবীর নৌকা, বিপদে মানুষের একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা। এখনো রাস্তাঘাট যতই করি, বন্যা হলে উদ্ধার করতে নৌকাই ভরসা, সেটা মাথায় রাখতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে পাঁচ জেলার নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নাটোর, পাবনা এবং খাগড়াছড়ি জেলার নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে ভোটের অধিকার আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠিত করেছে। সেটা অব্যাহত থাকবে। অতীতে ভোটের অধিকার ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয়েছিল। জনগণের অধিকার তাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে অনেক সংগ্রাম, ঘাত-প্রতিঘাত আমাদের পার করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে, কারাগারে যেতে হয়েছে। তারপরও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা ২১ বছর পরে ক্ষমতায় আসি। জনগণের সেবক হিসেবে যাত্রা শুরু করি। ৯৬ থেকে ২০০১ সাল ছিল ’৭৫-এর পরে বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বর্ণযুগ।

৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, জনগণ ভোট দেবে, ভোটের মালিক জনগণ। এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা এটা উন্মুক্ত করেছি, আমাদের নৌকার প্রার্থী আছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীও আছে, অন্যান্য দলও আছে। প্রত্যেকে জনগণের কাছে যাবেন, জনগণ যাকে ভোট দেবে সে-ই নির্বাচিত হবে। কেউ কারও অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না। এখানে কোনো রকম সংঘাত-সহিংসতা আমি দেখতে চাই না। কোনও সংঘাত হলে, দলের কেউ যদি করে তাদের রেহাই নেই। যথাযথ ব্যবস্থা নেব। সেটা মনে রাখবেন।

জনগণ ভোটের অধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা যাকে খুশি তাকে পছন্দ করবে, তাকে ভোট দেবে, সে-ই জয়ী হয়ে আসবে। গণতন্ত্রকে আরো সুদৃঢ় আমাদের করতে হবে। এর যদি ব্যত্যয় ঘটে, ভবিষ্যতে কী হবে? বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশে যতটুকু উন্নতি করেছি, তা থাকবে না।

এ সময় দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে যাতে কেউ কোনও অভিযোগ আনতে না পারে, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করবেন। নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। ভোটারের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কোন দল আসলো না আসলো তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। ওরা তো ভোট চুরির সুযোগ না থাকায় আসেনি। বিএনপি আসেনি একটাই কারণ ভোট চুরির সুযোগ নেই তাই। ২০০৮ সালে পারে নাই, তাই এখন ভোট বাতিল করতে চায়, বর্জন করতে চায়। সেটা তাদের ইচ্ছা, যার যার দলের ইচ্ছা। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি, জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। জনগণের ক্ষমতায়ন আমরাই নিশ্চিত করেছি।

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছে কার দ্বারা? অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারী, সেনা আইন লঙ্ঘনকারী, ক্ষমতা দখলকারী এক জেনারেলের পকেট থেকে। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। হ্যাঁ-না ভোটের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। ক্ষমতায় বসে থেকে একদিকে সেনাপ্রধান, আরেক দিকে রাষ্ট্রপ্রধান, আবার নির্বাচনও করেছে। এটা সেনা আইন বিরোধী। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে বের হওয়া একটা দল বিএনপি। তাদের কাজের সবকিছুই অবৈধ।

আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির কাজ হচ্ছে জ্বালাওপোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস। এটাই তারা পারে। এটাই তারা ভালো বুঝে, এটাই তারা জানে। নির্বাচনে তারা আসবে না; আসবে কীভাবে বলেন? ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে তো কারো কোনো অভিযোগ নেই। কেউ তো কোনো কথা বলতে পারে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল কী ছিল? সেই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট, তারা পেয়েছিল মাত্র ৩০টা সিট। আর আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছিল ২৩৩টা সিট। এই কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। তারা বড় বড় কথা বলে, ভোটের কথা বলে; ওরা ভোটের কী বুঝে?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে ৫৮২টা স্কুল, ৭০টি সরকারি অফিস, ছয়টা ভূমি অফিস এবং ৩২৫২টি গাড়ি, ২৯টা রেল, ৯টা লঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। এমনকি জজের এজলাসেও তারা আগুন দেয়। বোমা মেরে ঝালকাঠিতে জজকে হত্যা করে। গাজীপুরে আইনজীবীদের আক্রমণ করল এবং বোমা মেরে আহত করল। এটাই-তো বিএনপির চরিত্র। এখন আবার শুরু করেছে অগ্নিসন্ত্রাস। বাসে আগুন দিচ্ছে, রেলে আগুন দিচ্ছে। নতুন কোচ আমরা কিনেছি, মানুষ যাতে শান্তিতে চলাফেরা করতে পারে। মানুষের শান্তি দেখলে ওদের মনে অশান্তি লাগে। সেগুলোও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করবেন। নিজের দলের মধ্যে ঐক্য রাখবেন। যত প্রার্থী আছে সবাই জনসংযোগ করুক স্বাধীন মতো। জনগণকে সুযোগ দেবেন তাদের পছন্দের মতো প্রার্থী নির্বাচিত করতে। তাতে গণতন্ত্র আরো বেশি শক্তিশালী হবে। যারা নির্বাচনে এসেছে সকলকে ধন্যবাদ জানাই।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যদি আবারও ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে প্রতিটি জেলা, উপজেলায় উন্নয়ন হবে। কোনো জেলায় ভূমিহীন গৃহীন থাকবে না। পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি করা হবে। দেশের দ্রব্যমূলের অনেক দাম বেড়ে গেছে তারপরও দেশ পেছনে যায়নি। সরকার খাদ্য আমদানি করে যাচ্ছে। যাতে দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, তাই আমাদের যা যা দরকার তাই করা হচ্ছে। দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য আমরা দুই হাতে পানির মতো টাকা খরচ করেছি। পৃথিবীর কোনো দেশ বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয় নাই। কিন্তু বাংলাদেশ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য, দেশের মানুষকে ভালো রাখা।

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তুলতে আমরা ভোকেশনাল বা কারিগরি শিক্ষা চালু করেছি। কারণ, আমরা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে চাই। চতুর্থ বিপ্লবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আমরা প্রযুক্তির শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। দেশের সম্পদ বিক্রি করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল আজ তারাই আওয়ামী লীগের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আমরা এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি। আর বিএনপির কাজ হলো জ্বালাওপোড়াও মানুষের ক্ষতি করা। দেশের ক্ষতি করা। পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে তার সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যে পার্বত্য চট্টগ্রাম একসময় যাতায়াতে কষ্ট ছিল, সেখানে রাস্তাঘাট করে দেওয়া হয়েছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। পুরো বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত চুক্তি করেছি। আলোচনা ও শান্তিপূর্ণভাবে এর সমাধান করে দিয়েছি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা বিতাড়িত হয়েছে। অবহেলিত লালমনিরহাট এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। হয়েছে স্মার্ট। তিস্তা, ধরলা সেতুসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে পাল্টে গেছে লালমনিরহাটের চিত্র।

শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। জঙ্গিবাদ যাতে না ছড়ায়, সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। অন্যান্য ধর্মের জন্যও কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপি-জামায়াতের আমলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, বাংলা ভাই, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, আমাদের কত নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে তার হিসাব নেই। বিএনপির আমলে এই কৃষকরা সার চেয়েছিল বলে তাদের গুলি করা হত্যা করা হয়। আজ আমাদের কৃষকদের সারের পেছনে ছুটতে হয় না। সার কৃষকের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে এ ব্যবস্থা করেছে। দেশের মানুষকে ভালো রাখার লক্ষ্যেই কাজ করছে আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত