নৌকা বনাম ডামি টক্কর তৃণমূলে বিভক্ত আ.লীগ

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন 

দুয়ারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নতুন বছরের ৭ জানুয়ারি সারা দেশে একযোগে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের আলোকে দ্বাদশের ভোটে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি ও তার মিত্ররা। এরই মধ্যে নির্বাচনি ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের দেওয়া হয়েছে প্রতীক বরাদ্দ। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচারও শুরু করেছে ভোটে অংশ নেওয়া দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ভোটের মাঠে বিএনপি না থাকলেও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিযোগতার মধ্য দিয়েই এবারে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতে মনোনীত প্রার্থীর পাশাপশি দলের ডামি প্রার্থী রাখার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। ভোটে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ১৫১২ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩৮২ মিলিয়ে মোট ১৮৯৪ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বড় অংশই আওয়ামী লীগের নেতা। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (জাপা) ছাড়া অধিক আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি কোনো রাজনৈতিক দলই। তবে তৃণমূল বিএনপি ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি শতাধিক আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দল বাদে ভোটে অংশ নেওয়া দলগুলোর সাংগঠনিক কাঠামোও নড়বড়ে। অন্য দলগুলোর প্রার্থীদের মধ্যে দুয়েকজনের রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও বাকিদের তেমন কোনো পরিচিতি নেই। এমন অবস্থায় দ্বাদশের ভোটে নৌকার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের ডামি বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তিনশ’ আসনের বিপরিতে ২৬৬ আসনে নৌকার প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীতরা। আর নৌকাবঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতারা ২২১ আসনে ডামি প্রার্থী হয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। প্রার্থী নৌকা আর ডামি প্রার্থীরাই টক্কর দিচ্ছে ভোটের মাঠে। প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে এ দুপক্ষ। ভোটে অংশ নেওয়া ২৮ দলের প্রার্থীদের তেমন কোনো আওয়াজ দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনি এলাকায় পরিচিতি না থাকায় চুপিসারে প্রচারণা চালাচ্ছে এসব দলের প্রার্থীরা।

এদিকে নৌকা বনাম ডামি প্রার্থীদের টক্করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কেউ নৌকার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন; আবার কেউ আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। ভোটের আগেই দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল। ডামি বনাম নৌকার লড়াইয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অবস্থান কোন দিকে থাকবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দিকনিদের্শনা দেয়া হয়নি। ভোট প্রচারে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে চলছে তর্কযুদ্ধ। পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতেও জড়িয়ে পড়ছে অনেক স্থানে। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় কোথাও-কোথাও কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। নাজুক হয়ে পড়ছে তৃণমূলের সাংগঠনিক কাঠামো। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে ‘কুল রাখি না শ্যাম রাখি’ অবস্থা বিরাজ করছে। ভোটের লড়াইয়ে ডামি প্রার্থীদের নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা।

বিশ্লেষকদের মতে, ভোটের মাঠে মূল লড়াই হবে নৌকা বনাম আওয়ামী লীগের ডামি বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভোট হলেও দলটির তৃণমূলে বিভক্তি বাড়বে। বিভক্তির এই ক্ষত আওয়ামী লীগকে দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় গত ১৩ ডিসেম্বর ফরিদপুরে আলফাডাঙ্গা উপজেলার আওতাধীন গোপালপুর ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করেছে স্থানীয় নেতারা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম আকরাম হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল আলীম সুজা ইউনিয়ন কমিটি ভাঙার নোটিশ দেন। কমিটি ভাঙার প্রসঙ্গে আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম আকরাম হোসেন বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা না মানা এবং নৌকার প্রার্থীকে বাদ দিয়ে অন্য প্রার্থীর জন্য কাজ করায় গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। যারা দলের প্রার্থী বাদ দিয়ে অন্য প্রার্থীর হয়ে কাজ করে; তারা তো দলের সঙ্গে নেই। তারা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাদের দলে রাখব কোন হিসাবে? ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করে নোটিশের পর গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কমিটি এভাবে বিলুপ্ত করা যায় কি না সেই প্রশ্নই তুলছেন তারা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, নির্বাচন ঘিরে কোথাও কোনো কমিটি বিলুপ্ত করা যাবে না; এ মর্মে দলের কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও কোনো কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।

গত ৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যার পক্ষে খুশি কাজ করবে, এটা তাদের ইচ্ছা। নির্বাচনে কারো পক্ষে কাজ করতে বাধা নেই।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গীদের বাইরে যেসব দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদের সামর্থ্য খুব একটা নেই। নির্বাচন হচ্ছে মূলত নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে নৌকার ‘ডামি’ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর।