ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কবে খুলবে বিএনপি কার্যালয়ের তালা?

কবে খুলবে বিএনপি কার্যালয়ের তালা?

বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকে গত ২৮ অক্টোবর থেকে তালা ঝুলছে। এরপর থেকে কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে পুলিশের অবস্থান থাকলেও গতকাল শুক্রবার কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে দেখা যায়নি। যদিও কার্যালয়ের আশপাশ সুনসান নীরবতা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ‘নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে গতকাল কোনো পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দেখা যায়নি।’ গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলার ৫৬ দিন পরও খোলা হয়নি নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তালা। এই তালার চাবি কার কাছে? কে তালা লাগিয়েছে? কবে খোলা হবে এই তালা? এমন প্রশ্ন রয়েছে সর্বমহলে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- ২৮ অক্টোবর রাতে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে যেতে পারছেন না। তবে, এখন তো বিএনপির কার্যালয়ের সামনে কোনো পুলিশ নেই, এবার কি দলটির নেতাকর্মীরা তালা খুলে বা ভেঙে অফিসে ঢুকবে? এমন প্রশ্নও দেখা দিচ্ছে।

জানামতে, বিএনপির নেতাকর্মী এতদিন আত্মগোপনে থাকলেও সম্প্রতি অনেকে প্রকাশ্যে এসে রাজনীতি শুরু করেছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী গত দুই দিন ধরে প্রকাশ্যে রাজধানীতে গণসংযোগ করছেন। এছাড়াও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমানসহ সম্প্রতি অনেকেই বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। এমতাবস্থায় সর্বমহলে প্রশ্ন- কবে খুলবে বিএনপি কার্যালয়ের তালা?

সরেজমিন দেখা যায়, বিএনপির কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটে ঝুলছে তালা। রিসিপশন টেবিলে ধুলো আর ময়লা। আশপাশে পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। একই চিত্র দেখা যায় পাশের সেমিনার হলে। পাশের ফুটপাত ও সামনের রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা। কার্যালয়ের সামনের অংশটুকুতে পথচারীদের রাস্তায় নেমে হাঁটতে হচ্ছে।

সূত্রমতে, এক-এগারো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দীর্ঘদিন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ ছিল। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করে অফিসে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের পর কয়েকবার বিএনপির অফিসে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। সে সময় ৪ দিন কার্যালয়টি বন্ধ করে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবারই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে বিএনপি কার্যালয়ের তালা।

জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কাকরাইল মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপি। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মহাসমাবেশ প- হয়ে যায়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ। সেদিন হরতাল ঘোষণা দিয়ে দ্রুত মঞ্চ ত্যাগ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক নিয়ন্ত্রণে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কার্যালয়ের সামনের অংশে ‘ক্রাইম সিন’ লেখা হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুই দিন ধরে আলামত সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুই দিন পর দেয়া হয় কাঁটাতারের বেড়া। তপশিল ঘোষণার পরদিন তাও সরিয়ে নেয়া হয়। অবরোধ সর্মথনে গত ১৫ নভেম্বর কার্যালয়ে সামনে অবস্থান নিলে জাতীয়বাদী জনতা দলের তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা কারাগারে। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে পুলিশ ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিলেও গতকাল কার্যালয়ের আশপাশে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে দেখা যায়নি।

বিএনপির নেতারা বলছেন, ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষের পর থেকে এখন পর্যন্ত কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। কারণ এবারের পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন। বিএনপির এমন কোনো কেন্দ্রীয় নেতা নেই যার নামে মামলা হয়নি। প্রতিদিন নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নেতাদের না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে নেতারা আত্মগোপনে আছেন। কার্যালয়ের তালা খোলার প্রসঙ্গে তারা বলেন, দেশের বিদ্যমান যে পরিস্থিতি তাতে কবে কার্যালয় খোলা হবে, বলা সম্ভব নয়। তবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে কীভাবে স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফেরা যায়, তা নিয়ে দলের শীর্ষ মহলে চলছে আলাপ-আলোচনা। এখন তো কার্যালয়ের সামনে পুলিশ নেই, এবার কি তালা খোলা হবে এমন প্রশ্ন করলে বিএনপি নেতারা বলেন, কিছু সময়ের জন্য হয়তো পুলিশ নেই। এটা পুলিশের কৌশলও হতে পারে। সার্বিক পর্যালোচনা করে দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী বলেন, এখনো প্রতিনিয়ত সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতার এড়াতে অধিকাংশই ঘরবাড়ি ছাড়া। বাসায় নেতাকর্মীদের না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ঢাকাতেও নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে সভা সেমিনার করতে পারছে না। হঠাৎ কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ সদস্য সরে যাওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত