আইনশৃঙ্খলা ছক সাজাল ইসি

দ্বাদশ ভোটের নিরাপত্তায় রাখা হচ্ছে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফোর্স

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ ফোর্স দিয়ে নিরাপত্তা ছক সাজিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিরাপত্তার জন্য ভোটের আগ থেকে ভোট কেন্দ্রের বাহিরে সেনা, র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবি মোতায়েন থাকবে। আর প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে রাখা হয়েছে ১৫ থেকে ১৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

ইসি কর্মকর্তারা জানায়, আগামী সংসদ ভোট সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্ততি নিয়েছে ইসি। এবার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবচনায় আগের নির্বাচনের চেয়ে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাজেট যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবার বাড়ানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, সংসদ ভোট উপলক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক-৬ পরিপত্র জারি করেছে। সেখানে ইসির চাহিদা আনুযায়ি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিস্তারিত জানানো হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে ১৩ দিনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্য বাহিনীগুলোও এ সময়ে মাঠে থাকবে। নির্বাচনের দিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ১৫ থেকে ১৭ জন নিরাপত্তা রক্ষাকারী সদস্য নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচনকালীন পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আর্মড পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়ন ও কোস্টগার্ড এবং সশস্ত্র বাহিনী ভোটের আগে-পরে ১৩ দিনের জন্য মোতায়েন থাকবে।

জানা যায়, ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া পুলিশ, আনসার-ভিডিপিসহ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষাকারী সদস্যরা পাঁচ দিনের জন্য মোতায়েন থাকবে। ভোটের আগের দুই দিন থেকে তাদের মোতায়েন করা হবে।

ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা ছক : মেট্রোপলিটন এলাকার সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ তিনজন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন থাকবে, আর গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ ও অঙ্গীভূত আনসার থাকবে ১২ জন। বিশেষ এলাকার ভোটকেন্দ্রে (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকায়) অস্ত্রসহ পুলিশ দুইজন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন থাকবে, আর গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ ও অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন, গ্রাম পুলিশ থাকবে দুইজন। অন্যদিকে এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ তিনজন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন আর গ্রাম পুলিশ থাকবে দুইজন। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভোটগ্রহণের আগের দুই দিন, ভোটগ্রহণের দিন, ভোটগ্রহণের পরে একদিন এবং যাতায়াত ও অন্যান্য প্রস্ততিমূলক কাজের জন্য একদিনসহ মোট পাঁচদিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে।

গ্রামপুলিশ-দফাদার/মহল্লাদার প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে একজন ক্ষেত্রবিশেষে দুজন করে পাঁচদিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। তবে অঙ্গীভূত/সাধারণ আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষণের জন্য একদিনসহ মোট ছয়দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। পুলিশ কমিশনার/পুলিশ সুপার ¯’ানীয়ভাবে গুরুত্ব বিবেচনায় রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রয়োজন অনুসারে ভোটকেন্দ্রে পুলিশ এবং আনসার ও ভিডিপির সদস্য সংখ্যা কম-বেশি করতে পারবেন। যতদূর সম্ভব নারী ভোটকেন্দ্রে দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নারী অঙ্গীভূত আনসার ও পুরুষ ভোটকেন্দ্রে পুরুষ অঙ্গীভূত আনসার নিয়োগ করতে হবে।

নির্বাচনি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়ন নিয়োগ করা হবে। আনসার ব্যাটালিয়ন সহযোগী ফোর্স হিসেবে পুলিশের সঙ্গে মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া বিজিবি/আর্মড পুলিশ/আনসার ব্যাটালিয়ন জেলা/উপজেলা/থানাসমূহে এবং কোস্ট গার্ড উপকূলীয় এলাকাসমূহে দায়িত্ব পালন করবে। আনসার ব্যাটালিয়ন সেকশন ফরমেশন অনুযায়ী সহযোগী ফোর্স হিসেবে পুলিশের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে।

ভোটের দিন সচল রাখতে হবে ইন্টারনেট : এদিকে ভোটের ফলাফল দ্রুত প্রেরণ রাখার জন্য টেলিফোন, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট সংযোগ সচল রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ পরিপত্রে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরিপত্রে ভোটকেন্দ্রে ধূমপান হয়ে বিরত রাখা ও দিয়াশলাই, লাইটারসহ দাহ্য পদার্থ বহনে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক হিটার বা যে কোনো ধরনের চুলা ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাহসী ও নিরেপেক্ষ কর্মকর্তাদের ভোট গ্রহণে নিযুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে। বলা হয়েছে, পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ না দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

রিটার্নিং অফিসারকে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্যদের জন্য যানবাহন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণ এবং ভোটগণনা শেষে প্রিজাইডিং অফিসাররা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় যথাসম্ভব স্বল্প সময়ে ভোটকেন্দ্র থেকে ভোটগণনা বিবরণী ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদি সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট সরবরাহ করবে। পরিপত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী নিজ নিজ সং¯’ার যানবাহন ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে।

বিশেষ এই পরিপত্রে বলা হয়, কোনো ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা তার পক্ষে ক্যাম্প ¯’াপন না করার ব্যব¯’া গ্রহণ করতে হবে। এ নিষেধাজ্ঞায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৭৯(৪) অনু”েছদে প্রদত্ত রিটার্নিং অফিসারের এখতিয়ার ক্ষুণ্ণ হবে না, ভোটকেন্দ্রে কোনো প্রকারের দাঙ্গা, সন্ত্রাস বা অনিয়ম সংঘটিত হলে কিংবা আইন ও বিধির কোনো ব্যত্যয় ঘটলে আইনানুগভাবে ভোটগ্রহণ করতে হবে।

উদ্ভূত যে কোনো পরি¯ি’তি নিয়ন্ত্রণে এ পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়নি এ রূপ যে কোনো বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক এরইমধ্যে জারিকৃত পরিপত্র, আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধানে বর্ণিত নির্দেশনা/পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।