নৌকা-স্বতন্ত্রের লড়াইয়ে সরগরম ভোটের মাঠ

ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান প্রার্থীদের

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

যতই দিন গড়াচ্ছে ততই ঘনিয়ে আসছে ভোট। এরই মধ্যে প্রচারে নেমে পড়েছে প্রার্থীরা। বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনি পোস্টারে ছেয়ে গেছে। চলছে মিছিল-মিটিং ও পথসভা। ভোটারদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে লিফলেট। অনলাইনেও চলছে ভোটের প্রচার। প্রার্থীদের পক্ষে তাদের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভোট চাচ্ছেন। প্রার্থী ছাড়াও ভোটের মাঠ সরগরম রেখেছেন তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা। তারাও নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ছুটছেন ভোটারদের কাছে, চাইছেন ভোট।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পাশাপশি নৌকাবঞ্চিত স্বতন্ত্র পার্থীরাও ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রচারণায় পিছিয়ে নেই তারাও। নৌকার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে ভোট প্রচার করছেন স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থীরা। ভোটের মাঠে সবর তারা। স্বতন্ত্র বনাম নৌকা প্রার্থীদের ভোটযুদ্ধে জমে উঠেছে প্রচারণা।

নতুন নতুন ছক কষে জনগণের কাছে ভিড়ছে ভোটে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা। সুখে-দুঃখে পাশে থাকার বার্তা দিয়ে নিজ প্রতীকে চাইছেন ভোট। কেউ গাড়ি চড়ে আবার কেউ হেঁটে-হেঁটে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, বুকে টেনে নিচ্ছেন প্রবীণদের। বয়স্ক নারী ভোটারদের হাত নিজের মাথায় রেখে আশীর্বাদ চাচ্ছেন। এলাকার উন্নয়নে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। শীতের মধ্যেও দেশজুড়ে নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। ভোট প্রচারে কোথাও কোথাও টানটান উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে প্রার্থীদের সমর্থক-অনুসারীরা। নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন এমপি প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা এ আহ্বান জানাচ্ছেন।

সারা দেশের পাশাপশি ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনেও জমজমাট নির্বাচনি প্রচারণা। রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণায় জোর দিয়েছেন প্রার্থীরা। গণসংযোগ থেকে শুরু করে পোস্টার-ব্যানার সাঁটানো, মাইকিং, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন তারা। কর্মী-সমর্থকরাও মোড়ে মোড়ে জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন।

গতকাল ঢাকা-৩ আসনের কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কদমপুর এলাকায় উঠান বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী নসরুল হামিদ। এ সময় তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি সকাল থেকেই ভোট দিতে হবে। আমাদের এ ভোট হবে বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। আমার প্রার্থী পাস করবে এটা ভেবে ঘরে বসে থাকলে হবে না। কে পাস করবে আর কে পাস করবে না এটা আল্লাহতাআলা জানেন। ভোটটা দেওয়া মানে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এটা মাথায় রাখতে হবে। এদিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামনে নির্বাচনি জনসংযোগ করেন ঢাকা-১৩ আসনের নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ সময় তিনি বলেন, ঢাকা-১৩ আসনে অত্যন্ত উৎসবমুখর নির্বাচনি পরিবেশ রয়েছে। এই আসনে আরো প্রার্থী রয়েছে। তারা সবাই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন গণতন্ত্র রক্ষার নির্বাচন। এই নির্বাচন স্বাধীনতা রক্ষার নির্বাচন।

একই দিন গেন্ডারিয়ায় গণসংযোগ করেন ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। মানুষের জীবনমান উন্নয়নের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষ অশান্তি চায় না, বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও চায় না। মানুষ এখন কর্মমুখী। নিজের কাজ করে শান্তিতে থাকতে চায়। যার নিশ্চয়তা বিগত দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চিত করেছেন। তাই আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকা প্রতীকে ভোট চাই।

এদিকে ঢাকা-৮ আসনে দিনব্যাপী গণসংযোগে করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আমতলা মসজিদের সামনে, বাগিচা মসজিদের সামনে, খিঁলগাও ঝিল মসজিদের সামনে, উত্তরা ব্যাংক মোড়, রাজারবাগ রোড হয়ে শাহজাহানপুর রোড, মাহাবুব আলী ইনস্টিটিউটে গণসংযোগ করেন। দুপুর ১টায় পুরানা পল্টন হোটেল কস্তুরী সংলগ্ন আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের উদ্যোগে নির্বাচনি অফিস উদ্বোধন করেন। বিকাল ৪টায় তিনি ঢাকাস্থ বৃহত্তর ফরিদপুর আইনজীবী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে শান্তিনগর প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা করেন। সন্ধ্যা ৬টায় তিনি শান্তিনগর ইস্টার্ন প্লাস মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাথে মতবিনিময় সভা করেন। রাত সাড়ে ৮টায় শান্তিনগর প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে তাবলিগ জামায়াতের সাথে মতবিনিময় সভা করেন।

প্রচারণার মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা : নৌকার প্রার্থীদের পাশাপশি ঢাকার স্বতন্ত্র পার্থীরাও ভোট প্রচারে মাঠে রয়েছে। তারাও নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাচ্ছে। ঢাকা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল। তিনি ট্রাক প্রতীক নিয়ে ভোটে লড়ছেন। গতকাল তিনি ডেমরার ৬০নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এছাড়া ডেমরার সানারপাড় এলাকায় নির্বাচনি ক্যাম্প উদ্বোধন করে জনসভা করেন তিনি।

আসনটিতে আরেক স্বতন্ত্র পার্থী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. কামরুল হাসান রিপন। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি যাত্রাবাড়ী থানাধীন ৫০নং ওয়ার্ডের ধোলাইপাড়, খালপাড় রোড, যাত্রাবাড়ীর মোড়, ওফদা কলোনিতে গণসংযোগ করেন। এছাড়াও নির্বাচনি এলাকায় খণ্ড-খণ্ড মিছিল, মাইকিং, গানের মাধ্যমে প্রচার, উঠান বৈঠক ও পথসভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন কামরুল ইসলাম রিপন।

এদিকে আদালতের আদেশে ঢাকা-৭ আসনে প্রার্থীরা ফিরে পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসিবুর রহমান মানিকও গণসংযোগ করেছেন। গতকাল তিনি লালবাগের আজিমপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি ঈগল প্রতীকে ভোট করছেন। এ সময় তিনি বলেন, আমার কোনো লোভণ্ডলালশা নেই। আমি জনসাধারণের সেবা করতে চাই। আমার দরজা সবার জন্য খোলা। মানুষের ভালোবাসায় আমি কাউন্সিলর হয়েছি। এবার সংসদ নির্বাচনেও আমি মানুষের ভালোবাসা পাব।

ঢাকা-১৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি। তিনি কেটলি প্রতীকে ভোট করছেন। ঢাকা-১৮ আসনের নৌকা প্রত্যাহার করেছে আওয়ামী লীগ।

খসরু চৌধুরী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪৩নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ভোটের প্রচার করেন। কাঁঠালদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে শুরু করে ডুমনী আহাবপাড়া রাজলক্ষ্মী রোড, ডুমনী বাজার হাইস্কুলের পেছনের প্রধান সড়ক এবং ডুমনি প্রধান সড়কে প্রচারণা চালান। এছাড়া নিকুঞ্জ-২ এর ১নং রোড, বটতলা, জামতলা পশ্চিমপাড়া, উত্তরে পুরোনো বাজারে গণসংযোগ করেন।

ঢাকা-১৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা আক্তার তুহিনও নির্বাচনি গণসংযোগ করেছেন। তিনি গতকাল মিরপুরের ৮নং ওয়ার্ডের গুদারাঘাট, ১২নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান। এবার তিনি ট্রাক প্রতীকে ভোট করছেন।

রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি দ্বাদশের ভোটে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিশেষ করে নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, ক্রিড়াবিদ, সাংবাদিকও রয়েছেন ভোটের লড়াইয়ে। এবার তিনশ’ আসনের বিপরিতে ৩ হাজার ৩৬২ জন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ক্রয় করেছিলেন। তবে নৌকা দেয়া হয় ২৯৮টি আসনে। আর ভোট কৌশলে সাংসদীয় বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতায় ৩৬টি আসন থেকে নৌকা প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ। তবে এবার নৌকাবঞ্চিতদের ২২১ প্রার্থী স্বতন্ত্র হয়ে ভোটে অংশ নিয়েছেন। ভোটের মাঠে রয়েছে ২৮টি রাজনৈতিক দলও। তবে বিএনপিহীন ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ এনেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।