বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা

মানুষ পুড়িয়ে নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না

* মানবতার কল্যাণ করাই ধর্মের শিক্ষা * এদেশের মাটি সব ধর্মের মানুষের

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি

মানুষ পুড়িয়ে নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের কিছু মানুষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নাশকতা করছে। আন্দোলনের নামে মানুষ মেরে বিএনপি নির্বাচন বন্ধ করে ফায়দা লুটতে চায়, সেটা মেনে নেওয়া হবে না। দেশের মানুষের সঙ্গে কোনো অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না। গতকাল রোববার দুপুরে গণভবন প্রাঙ্গণে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র বোন শেখ রেহানাও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা খ্রিষ্টান ধর্মীয় নেতারা অংশ নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ পুড়িয়ে বিএনপি-জামায়াত কী অর্জন করছে? বাস এবং ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহনে আগুন দিয়ে লাভটা কি হবে? মানুষ হত্যা, রেললাইনের ফিশপ্লেট উপড়ে ফেলে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি করে তারা কী অর্জন করেছে? এটা কী ধরনের রাজনীতি, আমি জানি না। আমরা চাই সংঘাত বন্ধ হোক। মানুষ পুড়িয়ে নির্বাচন বন্ধ করে ফায়দা লুটবে, এটা এদেশে চলবে না।
তিনি বলেন, মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা মহাপাপ ও অন্যায়। এই অন্যায় আর সহ্য করা যায় না। কোনো ধর্মগুরু এটা মেনে নিতে পারেন না। মানবতার জন্য যিশুখ্রিষ্ট তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। যিশুখ্রিষ্ট মানবতার কথা বলেছেন। মহানবী সা. মানবতার কথা বলেছেন। মানবতা ও মানবজাতির কল্যাণই সব ধর্মের মূল কথা। আমরা সেই বিশ্বাস থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। সবার সমান অধিকার নিশ্চিত হয়-  এমন একটা সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের মাটি জাতি-ধর্ম-বর্ণ-পেশা নির্বিশেষে সবার। এখানে সবাই স্বাধীনভাবে বসবাস করবে। আমি সবার কল্যাণ ও উন্নয়ন কামনা করি। বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ায় সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার।
সম্প্রীতির জন্য বাংলাদেশ বিশ্ব মঞ্চে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এ অঞ্চলের মানুষ হাজার বছর ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছে।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই রক্ত দিয়েছেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য; কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন। আমরা ধর্মীয় সংঘাত চাই না। ধর্মীয় রীতি পালনে কেউ বাধা দিক সেটাও আমরা চাই না। আমরা প্রত্যেকে আনন্দ ভাগাভাগি করছি। এটাই সব থেকে আনন্দের। আনন্দ, সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নিই।
গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতা প্রচারের মহৎ উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গকারী যিশু খ্রিষ্টের জন্মস্থানে শিশু ও নারীদের হত্যা করা হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখের বিষয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখনই আমি সুযোগ পাচ্ছি, বারবার যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। সারাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য এটা প্রযোজ্য।
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট সোনার বাংলাদেশে রূপে গড়ে তোলা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বড়দিন উপলক্ষ্যে দেশে ও বিদেশে অবস্থানকারি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকে শুভেচ্ছা জানান।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, আর্চবিশপ বেজয় নাইসেফরাস ডি’ক্রুজ, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জুয়েল আরং এমপি, অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি, ধর্ম মন্ত্রণায়ের সচিব মোঃ এ হামিদ জমাদ্দার, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান লীগের সভাপতি ড্যানিয়েল নির্মল ডি. কস্তা এবং বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত আই কোরায়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও।
ঢাকার আর্চবিশপ আর্চডায়োসিস বেজয় নাইসেফরাস ডি’ক্রুজ এবং বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বড়দিনের শুভেচ্ছা কার্ড তুলে দেন। অনুষ্ঠানে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা বড়দিনের ক্যারোল এবং অন্যান্য দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন। বড়দিন উপলক্ষ্যে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যরা।