খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন আজ

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ আজ। এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট আজকের এই দিনে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীরাও এ দিন যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য্য ও আচারাদি, আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মধ্যদিয়ে ‘শুভ বড়দিন’ উদযাপন করছেন।

এ উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জাগুলোকে সাজানো হয়েছে নতুন-আঙ্গিকে। এছাড়া গতকাল সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন গির্জা এবং তারকা-হেটেলগুলোতে ব্যবস্থা করা হয়েছে আলোক সজ্জার। বড়দিন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীসহ সবার শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘ধর্মের মূল কথাই হচ্ছে মানুষ হিসেবে মানুষের সেবা করা। সব ধর্মই মানুষের কল্যাণের কথা বলে। তাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীগণ মহামতি যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিনকে যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে ‘বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। খ্রিষ্ট ধর্মানুসারে যিশু খ্রিষ্ট ছিলেন সত্যান্বেষী, মানবজাতির মুক্তির দূত এবং আলোর দিশারী।’

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি; ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। সকল শ্রেণি-পেশার জনগণের উন্নয়নই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা সব সম্প্রদায়ের মানুষের মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।’

বড়দিন উপলক্ষ্যে আজ সরকারি ছুটি। অন্যদিকে দিনটি উপলক্ষ্যে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। এছাড়া দেশের অনেক অঞ্চলে আয়োজন করা হয়েছে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের।

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বড়দিনকে বেছে নেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিতে অনেকেই রাজধানী ছেড়ে গিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে।

রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে আলোক সজ্জার পাশাপাশি হোটেলের ভেতরে কৃত্রিমভাবে স্থাপন করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি ও শান্তাক্লজ। বড়দিনের প্রাক্কালে গত রাতে বিভিন্ন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনাও অনুষ্ঠিত হয়। আর আজ সকাল থেকে শুরু হবে বড়দিনের প্রার্থনা।

বড়দিনের আগমুহূর্তে পুরান ঢাকার বারোয়ারী দোকানগুলোতে ভিড় : খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘ক্রিসমাস ডে’ উপলক্ষ্যে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বিশ্বজুড়ে সাজসাজ রব পড়ে যায়। পিছিয়ে থাকে না বাংলাদেশও। প্রতি বছরই এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ভিন্নরূপ ধারণ করে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল, গির্জাসহ বিভিন্ন নামিদামি রেস্টুরেন্টগুলো। এতে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা ছাড়াও ভিড় জমান অন্য ধর্মের মানুষরাও। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়লেও আয়োজনের কমতি নেই। বিশেষ করে শেষ সময়ে রাজধানীর চকবাজার এলাকায় বারোয়ারী দোকানগুলোতে জমে উঠেছে বড়দিনের কেনাকাটা। চকবাজারে ক্রিসমাস ট্রি, কাগজের তৈরি ফুল, গিফট পেপার, বিভিন্ন রকম আলোকসজ্জার সরঞ্জাম, ছোটদের খেলনাসহ ‘সান্তাক্লজ’ সাজার উপকরণ বিক্রির ধুম পড়ে যায়। বড় দিনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে চলছে নান্দনিক সাজসজ্জার প্রস্তুতি। চকবাজারে এসব দোকানে কৃত্রিম ফুল, তারা, পাটের দড়ি, ঘণ্টা ইত্যাদি নানারকম ঘর এবং গাছ সাজানোর সামগ্রী খুচরা ও পাইকারি দরে বিক্রি হয়। বড়দিন জমকালো করতে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রং ও আকৃতির মোমবাতি। কোনো কোনো দোকানে সুগন্ধি মোমবাতিও পাওয়া যায়।

দোকানের বিক্রেতারা জানান ‘শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়ার জন্য কার্ড আর ক্রিসমাস ট্রিই আমাদের বেশি পরিমাণে বিক্রি হয়। এছাড়া শিশুদের বিভিন্ন খেলনা, পুতুল, ডেকোরেশন পিস, ঘণ্টা, ছোট বল, মগ, ছবির ফ্রেম, চাবির রিং, ম্যাজিক বক্স, পার্টি স্প্রে, বেলুনও কেনাবেচা ছিল রমরমা। আর ক্রেতারা জানান ‘বড়দিনে সাধারণত শিশুরা সান্তাক্লজ সাজতে অনেক পছন্দ করে। তাদের জন্য সান্তার পোশাক না কিনলে হয় না। বিশেষ করে লালটুপি তাদের অনেক পছন্দ। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার এসব পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেশি বলেও অভিযোগ করেন অনেক ক্রেতা। তবে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ‘সব কিছুর দাম বেড়েছে। বড় দিন উপলক্ষ্যে ক্রিসমাস ট্রি ও আনুষঙ্গিক ঘর সাজানোর জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত কোনো কোনোটির। এজন্য অনেক ক্রেতা দামাদামি করে ফিরে যাচ্ছেন এবং দোকানে ভিড় থাকলেও নেই আমাদের তেমন বেচা-বিক্রি। একজন ক্রেতা জানান, আগে একটি ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার ক্রিসমাস ট্রি কিনতাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। এখন বিক্রেতারা তার দাম হাঁকাচ্ছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। বড়দিন উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ উৎসব ঘিরে প্রত্যেক গীর্জায় স্থায়ীভাবে পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি পুলিশি টহল বৃদ্ধিসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও গোয়েন্দা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক বার্তায় কিছু নিরাপত্তা নির্দেশনা দিয়ে এ কথা জানানো হয়। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।