নির্বাচনি জনসভা

রংপুরে নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা

বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশের সম্পদ লুট করেছে

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বখতিয়ার রহমান, পীরগঞ্জ (রংপুর)

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দরকার। এই নৌকা স্বাধীনতা এনেছে, অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে, এই নৌকা আমাদের একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ দেবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত জনতার কাছে ভোট চাইলে তারা দুই হাত তুলে সমস্বরে নৌকার প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান।

গতকাল বিকালে রংপুরের পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক বিশাল নির্বাচনি জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। দীর্ঘ ৪ বছর পর রংপুর আসেন প্রধানমন্ত্রী।

রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের এলাকার পুত্রবধূ ‘কি বাহে একখান ভোট মুই পামু না, একখান ভোট হামাক দেবেন না’। জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং পীরগঞ্জ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নিজের কন্যা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে আমার মেয়েকে আপনাদের দিয়ে গেলাম নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করা মানে আমাকে ভোট দেওয়া, জয়কে ভোট দেওয়া। সে জয়ের বোন, পুতুলের বোন। এ সময় শিরীন শারমিন চৌধুরীর হাত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শিরীন শারমিন চৌধুরী অত্যন্ত মেধাবী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে জীবনে কখনো প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। সে অত্যন্ত মেধাবী। ২০০৮ থেকে তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন আপনারা। তার নেতৃত্বে পীরগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আগামীতেও যেন এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে সেজন্য তাকে ভোট দেবেন। সরকারপ্রধান বলেন, ১৫ আগস্টের পর বাংলার মানুষ ছিল অবহেলিত। তাদের মাথাপিছু আয় বাড়েনি। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে আমি এগিয়ে এসেছি। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ শুরু করি। আমাদের লক্ষ্য ছিল মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। শিক্ষা, দীক্ষা ও কর্মসংস্থানে তরুণ যুবসমাজকে এগিয়ে আনতে কাজ করেছি। ভূমিহীন, গৃহহীনদের ঘর দিয়েছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। দেশ এখন ডিজিটাল হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আনন্দিত যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রংপুরে মঙ্গা দেখা দেয়নি। রংপুর থেকে শুরু করে লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের প্রতিটি এলাকাই ছিল দুর্ভিক্ষপ্রবণ এলাকা। মঙ্গা লেগেই থাকত। আজকে সেই মঙ্গা নেই, আজকে সেই দুর্ভিক্ষ নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নতি হয়। কৃষি উন্নয়নে সবক্ষেত্রে ভতুকি দেয়া হচ্ছে। এখন আর কাঠের লাঙল নয়, মেশিনে ধান লাগানো ও কাটাও হচ্ছে। সেটার ব্যবস্থাও আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। ৫০ থেকে ৭০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে কৃষি উপকরণ কেনার ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে যাতে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের মানুষ অনাহারে থাকে না, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হয়। এ সময় শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং কৃষিতে অভাবনীয় উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম গণতন্ত্র দীর্ঘদিন অব্যাহত থেকেছে। কিন্তু এটা অনেকেই চায় না। বিএনপি-জামায়াত আগুনসন্ত্রাস করে আনন্দ পায়। মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে দেবো না। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তাদের ধরে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। আওয়ামী লীগ দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশের সম্পদ লুট করেছে। তারা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তাদের নেতারা সম্পদশালী হয়েছে। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না, মঙ্গলও চায় না। এরা মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। এরা ক্ষমতায় এসে লুটপাট করে বিদেশে গিয়ে আয়েশি জীবনযাপন করে। বিএনপি-জামায়াত বা ২০-দলীয় জোট কখনও মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। কাজেই এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না।

এদিন বিকাল ৩টা ৫৩ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেষ করেন ৪টা ২৫ মিনিটে। পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন রাজার সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ওই আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি প্রচারণায় রংপুর সফরে এসে দুপুর আড়াইটার দিকে পীরগঞ্জের ফতেহপুরে স্বামী প্রয়াত ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার বাড়ি ‘জয়সদনে’ পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে পৌঁছে ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন এবং শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের সঙ্গে কুশল বিনিয়োগ করেন। এরপর মধ্যাহ্নভোজ শেষে রংপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্বাচনি জনসভায় যোগ দেন। জনসভা শেষে সড়কপথে সৈয়দপুর গিয়ে বাংলাদেশ বিমানযোগে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

গত ২০ ডিসেম্বর সিলেট থেকে শুরু হওয়া আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার সমাবেশের মতোই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা।