ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ভীতিশূন্য ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করাই ইসির লক্ষ্য

ভীতিশূন্য ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করাই ইসির লক্ষ্য

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে। গত সোমবার ১৩টি জেলায় ব্যালট পাঠানোর মধ্যদিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্বাচনি ট্রেনের শেষ গন্তব্য আগামী ৭ জানুয়ারি। বহুমাত্রিকায়ায় রূপ নিচ্ছে এবারের জাতীয় নির্বাচন। বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। কেন না, স্বাধীন বাংলাদেশে ইতোপূর্বে যেসব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই সব নির্বাচনের সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মেলানো যাচ্ছে না। বিশেষ বৈশিষ্ট নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের ভোটার ও প্রার্থীদের সামনে আসছে। বাইরের যেসব দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের প্রতি নজর রাখছে তাদের কাছেও বাংলাদেশের নির্বাচন ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। কেন না, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদূর প্রসারি চিন্তা চেতনার ফসল হচ্ছে এবারের জাতীয় নির্বাচন।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতা। আবার অনেকে দলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রাথী হিসেবে নির্বাচন করছেন। ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলগুলোও এই নির্বাচনে লড়াই করছেন। অনেক আসনে আওয়ামী লীগ তাদের শরীকদলগুলোকে ছাড় দিয়েছে। ভোটকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা প্রশংসা অর্জন করেছে। প্রতিদিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। নির্বাচন-সংক্রান্ত যে কোনো অনিয়মের সঙ্গে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার সম্পৃতক্ততার অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। ফলে অন্যরাও সতর্ক হচ্ছে। ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে র‌্যাব বিজিবি, পুলিশ আনসার। থাকবেন বিচারিক ক্ষমতাসমপন্ন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষে কোনো ঘাটতি নেই। তবে বিএনপি জামায়াত জোট যাতে ভোটারদের কে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দিতে না পারে তা প্রতিহত করার জন্যও পুলিশ প্রশাসন তৎপরত রয়েছে। পুলিশের শীর্ষ মহল থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যারা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেবে তাদের প্রতিহত করা সাংবিধানিক দায়িত্ব। ভোট কেন্দ্রের পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে গিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নির্বাচন কর্মকর্তার কঠোরতা এবং নির্বাচনি আইনের বাধ্যবাধকতায় যাতে ভোটারদের মধ্যে বাড়তি উৎকন্ঠা বিরাজ না করে সেটি নিশ্চিত করাই এখন নির্বাচন কমিশনের প্রাধান লক্ষ্য। ভোটার, প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন সবার চাওয়া-পাওয়ার কেন্দ্রে ভোটের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। ভয়শূন্য চিত্তে ভোটারা যাতে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে, সেই পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন তৎপর রয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ পরিস্থিতি নিশ্চিত করাই হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা ভোটের তপশিল ঘোষণা করার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময়সভা করছেন। তারা সেখানে মানুষকে আশ্বস্ত করছেন, ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। ভোটারদের কেন্দ্রে আনার দায়িত্ব প্রার্থীদের। নির্বাচন কমিশন সব সময় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে নানাভাবে আশ্বস্ত করছে। নির্বাচনি ট্রেন এখন গন্তব্যের কিনারায় চলে গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যেসব আশঙ্কা ছিল নির্বাচন কমিশন ও সরকার তা নিরসনে সাফল্য অর্জিত হওয়ায় অসহযোগ আন্দোলনের নামে নির্বাচন প্রতিহত করার অপচেষ্টা সীমিত হয়ে আসছে। দেশি-বিদেশি সকালের একটি কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আউয়াল কমিশন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সব ধরনের প্রস্তুতির পাশাপাশি এখন ভোটের পরিবেশ অনুকূল রাখাই বড় চালেঞ্জ বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেজ্ঞরা।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে উৎসাহ দিচ্ছেন নির্বাচন কমিশনাররা। নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, ভোট কেন্দ্রে ভোটার নিয়ে আসার দায়িত্ব প্রার্থীদের। ভোটের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কমিশন। তিনি বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার সক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে। বর্তমান কমিশনের অধীনে প্রতিটি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত-সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের অভিযোগ তদন্ত করে সতর্ক করা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আললমগীর জানান, সবাই এলে মাঠের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতেও ভারসাম্য থাকত। নির্বাচনে প্রার্থী বেশি থাকলে স্বাভাবিকভাবে পরিবেশের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় থাকে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি না এলেও অনেকগুলো রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এ নির্বাচন কমিশনার জানান, বিএনপি নির্বাচনে আসেনি শুধু তাই নয়, নির্বাচনে বাধা দেওয়ারও কর্মসূচি দিচ্ছে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আহ্বান যে কেউ জানাতে পারে। কিন্তু কাউকে বাধা দেওয়া, ভোটারকে বাধা দেওয়া অথবা ভোটকেন্দ্র করতে বাধা দেওয়া; ভোটের পক্ষের কর্মসূচি বাধা দেওয়া, হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো- এসব তো নির্বাচনি আইন অনুযায়ী অপরাধ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে আছেন ১৯০৮ প্রার্থী। এর মধ্যে ২৭ দলের আছেন ১৫১৭ প্রার্থী। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ৩০০ আসনের অন্তত ২২৫টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৯১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এদের মধ্যে বর্তমান সংসদের এমপি, সাবেক এমপি ও মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য, জেলা ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন।

এছাড়া সংগঠনের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারাও শামিল হয়েছেন স্বতন্ত্র দৌড়ে। এর বাইরে জাতীয় পার্টির কয়েকজন, বিএনপির বহিষ্কৃত দুয়েকজন এবং কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, এমন কয়েকজন স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন। এত প্রার্থীর পরও এক-চতুর্থাংশ আসনে নেই কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী। এগুলোসহ আরো কিছু যোগ করে শতাধিক আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার আনাকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মাঠের হিসেবে দেখা যাচ্ছে ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৭৫টিতে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। এসব আসনের দু-চারটি ছাড়া বাকিগুলোতে অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারছে না। আবার প্রায় অর্ধশত আসন আছে যেখানে প্রার্থী থাকলেও তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না। এসব আসনেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভবনা কম। ফলে সব মিলিয়ে অন্তত শতাধিক আসনে নির্বাচন অনেকটাই আমেজহীন। এসব আসনে ভোটারদের ভোট নিয়ে আগ্রহও কম। ফলে এ আসনগুলোতে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনি আমেজ ধরে রাখা এবং সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হলে ভোটার কেন্দ্রে আসতে চায় না। তারা মনে করে যে আছে সে জিতে যাবে অথবাভাবে আমার প্রার্থী তো নেই, কেন্দ্রে গিয়ে কাকে ভোট দেব। এসব বিষয় মাথায় রেখেই এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি, ভোটগ্রহণের হার বাড়ানো, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট করাসহ নানা কারণে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছাড়া দেওয়া হচ্ছে। ধরে নেওয়া হচ্ছে এরাই কেন্দ্রে ভোটার আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু এক-চতুর্থাংশ আসনে স্বতন্ত্র শূন্য হওয়ায় এসব আসনের ভোটকেন্দ্রে কিভাবে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো যাবে তা নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা।

৩০০ আসনের মধ্যে ৭৫টি আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। রংপুর বিভাগে ৩৩টি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটিতে স্বতন্ত্র নেই। সেগুলো হলো- পঞ্চগড় ২, ঠাকুরগাঁও ১, রংপুর ৪ ও কুড়িগ্রাম ১। রাজশাহী বিভাগের ৩৯ আসনের নয়টিতে স্বতন্ত্র নেই। সেগুলো হলো- বগুড়া ৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩, রাজশাহী ২ ও ৩, সিরাজগঞ্জ ১, ২ ও ৪; পাবনা ২ ও ৫। খুলনা বিভাগের ৩৬টি আসনের পাঁচটিতে স্বতন্ত্র নেই। সেগুলো হলো- মাগুরা ২, নড়াইল ২, বাগেরহাট ১, খুলনা ৫, সাতক্ষীরা ৩। বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনের মধ্যে স্বতন্ত্র নেই সাতটিতে। সেগুলো হলো- বরগুনা ২, পটুয়াখালী ১ ও ২; ভোলা ১ ও ২; বরিশাল ১, ঝালকাঠি ২। ঢাকা বিভাগের ৭০টি আসনের মধ্যে স্বতন্ত্র নেই ১৫টিতে। আসনগুলো হলো- টাঙ্গাইল ৮, মানিকগঞ্জ ৩, ঢাকা ১, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৫; নারায়ণগঞ্জ ৪ ও ৫; গোপালগঞ্জ ৩, মাদারীপুর ১ ও ২; শরীয়তপুর ৩। ময়মনসিংহ বিভাগের ২৪টি আসনের মধ্যে স্বতন্ত্র নেই ছয়টিতে। সেগুলো হলো- জামালপুর ১ ও ৩; ময়মনসিংহ ৫ ও ১০; নেত্রকোনা ৪, কিশোরগঞ্জ ৪। সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে ছয়টিতে স্বতন্ত্র নেই। আসনগুলো হলো-সিলেট ১, ২ ও ৪; মৌলভীবাজার ৩ ও ৪; হবিগঞ্জ ৩। চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৮টি আসনের মধ্যে ২০টিতে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। আসনগুলো হলো-ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৪ ও ৬; কুমিল্লা ১, ৩, ৭, ৯ ও ১০; চাঁদপুর ১, নোয়াখালী ৫ ও ৬; চট্টগ্রাম ৪, ৭, ৯ ও ১৩, কক্সবাজার ২, ৩ ও ৪ এবং খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান পার্বত্য আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার ভোটারদের কেন্দ্রে আনাই চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে পুলিশ। এ ক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরা ভোটারদের কেন্দ্রে আনার কাজ করবেন। ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন পুলিশ সদস্যরা। ভোটারদের ভোট দিতে কেউ বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত শুক্রবার ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা জানেন, কারা অপরাধী, কারা অপরাধী নয়। কারা কোন ধরনের রাজনীতি বা অপরাজনীতি যাই বলি না কেন, এই অপরাধী কারা, কোথায় অবস্থান করে, এই বিষয়ে আপনাদের সুস্পষ্ট ধারণা আছে। আপনারা যদি তথ্য দেন, একসঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করি, তাহলে সমাজ থেকে অপরাধীদের নির্মূল করতে পারব। অন্ততপক্ষে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত তাদের দমন করে রাখতে পারব। যদি ৭ তারিখের নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পার করতে পারি, তাহলে দেশ একটি বিশাল সমস্যা উতরে যেতে পারবে।

তপশিল ঘোষণা থেকে শুরু করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তাতে কমিশনের মধ্যে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের ব্যাপারে তাদের সক্ষমতা নিয়ে একটা আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। একটা সুষ্ঠু ভোটের স্বপ্ন দেখছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পুরো কমিশন সারাদেশ ভোটের আগে চষে বেড়াচ্ছেন। যে কোনো মূল্য ভোট সুষ্ঠু করতে চায় ইসি।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, ভোটের মাঠের পরিবেশ ভালো এবং দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রভাব পড়বে না। কোনো দল ভোটে না এসে কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের নিষেধ করলে কিংবা কোনো ধরনের নাশকতা ও উসকানি দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনি বলেন, প্রতিটি জায়গায় নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। কোথাও কোনো রকম সমস্যা নেই। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সব জায়গায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রয়েছে। সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয়, সে বিষয়টি মাঠ পর্যায় থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তাদের পদক্ষেপের পাশাপাশি ইসির পক্ষ থেকে যেসব পরামর্শ দেওয়া দরকার তা দেয়া হয়েছে। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর উৎসবের আমেজে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। নির্বাচনি এলাকার পরিস্থিতি তুলে ধরে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটারদের মধ্যে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনায়ই দেখেছি। প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে মিছিল মিটিং ও মতবিনিময় করছেন। পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে কোথাও কোনো এমন থ্রেড নেই। ভোটের আগে-পরে কোনো প্রকার নাশকতা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে ইসি আলমগীর বলেন, একটা জিনিস বুঝতে হবে, এটা গণতান্ত্রিক দেশ। স্বাধীনভাবে ভোটে অংশ নেওয়ার যেমন অধিকার রয়েছে, অংশ না নেওয়ারও অধিকার রয়েছে। কোনো দল যদি অংশ না নেয় সেটা তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন। এতে কোনো সমস্যা নেই। সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সারা দেশে ৯ লাখের বেশি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেবে সংস্থাটি।

প্রিজাইডিং অফিসার ৪ লাখ ৬ হাজার ৩৬৪ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ২ লাখ ৮৭ হাজার ৭২২ জন এবং পোলিং অফিসার ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৩ জন মিলে মোট ৯ লাখ ৯ হাজার ৫২৯ প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা ৪২ হাজার ১৪৯টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করবেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ সদস্য। এর মধ্যে থাকবেন পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যরা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। তারা আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর মোট ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৬ লাখ ৮ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।

ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভোটের মাঠে আনসার ৫ লাখ ১৬ হাজার, পুলিশ (র‌্যাবসহ) ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন, কোস্টগার্ড ২ হাজার ৩৫৫ জন, বিজিবির সদস্য থাকবেন ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে গত ২৫ নভেম্বর তপশিল ঘোষণার মাধ্যমে। নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৯টি এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। পরিসংখ্যানের হিসেবে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলকই হচ্ছে।

গতকাল সিলেট সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে সিলেট জেলার সব সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে এবং সিলেট শিল্পকলা একাডেমিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন সিইসি। আগামীকাল সকাল ১০টায় কুমিল্লা সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জেলার সব সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে এবং সাড়ে ১১টায় কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগদান করবেন তিনি। ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে জেলার সব সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে এবং সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম পিটিআই মিলনায়তনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন সিইসি। এসব মতবিনিময় অনুষ্ঠানেও তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানাবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত