ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিবিএস’র খানা আয়-ব্যয় জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন

দেশের উত্তরে দারিদ্র্য কমে বাড়ছে দক্ষিণে

দেশের উত্তরে দারিদ্র্য কমে বাড়ছে দক্ষিণে

উত্তরবঙ্গে মঙ্গা নেই। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার উত্তরবঙ্গের চেয়ে দক্ষিণাঞ্চলে বেড়েছে। এই হিসেবে দেশের দরিদ্রতম বিভাগ হচ্ছে বরিশাল। এ বিভাগে দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ। সবচেয়ে কম দরিদ্র খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস সম্মেলন কক্ষে ‘হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভে (এইচআইইএস) ২০২২’ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশে এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় তিনি ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মো. কাউছার আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ।

দারিদ্র্যের হার জাতীয় পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে। এর মধ্যে পল্লি এলাকায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ দারিদ্র্য রয়েছে। যেখানে ২০১৬ সালে জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। পল্লি এলাকায় ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে অতি দারিদ্র্যের হার ব্যাপকভাবে কমেছে। নিম্ন দারিদ্র্য রেখা ব্যবহার করে ২০২২ সালে অতি দারিদ্র্যের হার জাতীয় পর্যায়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, পল্লি এলাকায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। যেখানে ২০১৬ সালে নিম্ন দারিদ্র্য রেখা ব্যবহার করে অতি দারিদ্র্য ছিল জাতীয়পর্যায়ে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ, পল্লি এলাকায় ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ ও শহরাঞ্চলে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ব্যাক-ক্যালকুলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে ২০১৬ সালে অতি দারিদ্র্য ছিল ৯ দশমিক ৩ শতাংশ (নিম্ন দারিদ্র্য রেখা)। সুতরাং দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০১৬ থেকে ২০২২ সালে অতি দারিদ্র্যের হার ব্যাপকভাবে কমেছে।

আরো বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ দারিদ্র্য হার পাওয়া গেছে। আগে কুড়িগ্রামে সর্বোচ্চ দারিদ্র্যের হার থাকলেও এবার সেটি বরিশালে গেছে। উচ্চ ও নিম্ন উভয় দারিদ্র্য রেখার মাধ্যমে প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্য বিভাগগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে ২১ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যক্তি মাঝারি বা মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। যেখানে ২০২২ সালে পল্লি এলাকায় এ হার ছিল ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দেশে ২০২২ সালে ১ দশমিক ১৩ শতাংশ মানুষ মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ছিলেন।

ভাতের চাহিদা কমলেও বেড়েছে সবজির চাহিদা : বর্তমানে প্রতিনিয়তেই খাদ্য গ্রহণে বৈচিত্র্য দেখা গেছে। বর্তমানে ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমছে, বেড়েছে সবজি ও ফলমূল খাওয়ার প্রবণতা। একই সঙ্গে রুটি, ডিম ও দুধ খাওয়ার পরিমাণও বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।

২০২২ সালে চালের দৈনিক মাথাপিছু গড় ভোগের পরিমাণ ৩২৮ দশমিক ৯ গ্রাম, যা ২০১৬ সালে ৩৬৭ দশমিক ২ গ্রাম, ২০১০ সালে ৪১৬ গ্রাম, ২০০৫ সালে ৪৩৯ দশমিক ৬ গ্রাম এবং ২০০০ সালে ৪৫৮ দশমিক ৫ গ্রাম ছিল। অন্যদিকে, সবজি ও মাংসের ব্যবহার ধীরে ধীরে বেড়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে একজন মানুষ দৈনিক ৩২৮ দশমিক ৮ গ্রাম ভাত খাচ্ছেন, ২০১৬ সালে এর পরিমাণ ছিল ৩৮৬ দশমিক ১ গ্রাম। বর্তমানে দৈনিক সবজি গ্রহণের পরিমাণ ২০১ দশমিক ৯ গ্রাম, ২০১৬ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৬৭ দশমিক ৩ গ্রাম। বর্তমানে একজন দৈনিক ৯৫ গ্রাম ফল খাচ্ছেন, ২০১৬ সালে এর পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৮ গ্রাম। এছাড়া মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, আলু, চিনি ও ডালের চাহিদা বেড়েছে।

শহর এলাকার তুলনায় পল্লি এলাকায় মধ্যম বা মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা : ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে ২১ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যক্তি মাঝারি বা মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। যেখানে ২০২২ সালে পল্লি এলাকায় এ হার ছিল ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দেশে ২০২২ সালে ১ দশমিক ১৩ শতাংশ মানুষ মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ছিলেন।

খানার মাসিক ব্যয় বৃদ্ধি : জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী খানার মাসিক আয় বৃদ্ধির সঙ্গে মাসিক ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী খানার মাসিক ব্যয় ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১৬ সালে যা ছিল ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা।

খানায় খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত ব্যয়ের ধারায় পরিবর্তন হয়েছে। খাদ্য বহির্ভূত ব্যয় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ২০২২ সালে খাদ্য ব্যয়ের শতকরা হার ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত ব্যয় ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ। যেখানে ২০১৬ সালে খাদ্যের জন্য ব্যয় ছিল ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত ব্যয় ছিল ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ।

প্রতি পরিবারের গড় ঋণ ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা : উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষ ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে। বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে একটি পরিবারের গড় ঋণ ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। ঋণগ্রস্ত পরিবার হিসেবে এই অঙ্ক আরো অনেক বেশি। বিশেষ করে শহরের মানুষকে বেশি ঋণ করতে হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের একটি পরিবার মাসে গড় আয় করে সাড়ে ৩২ হাজার টাকা। আয়ের বিপরীতে একটি পরিবারের ব্যয় সাড়ে ৩১ হাজার টাকা। অর্থাৎ, একটি পরিবার মাসে ১ হাজার টাকার মতো সঞ্চয় করে। বিবিএস জানায়, দেশের প্রতিটি খানার গড় আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এইচআইইএস ২০২২ জরিপের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী খানার মাসিক গড় আয় ৩২ হাজার ৪২২ টাকা, যা ২০১০ ও ২০১৬ সালের জরিপে ছিল যথাক্রমে ১১ হাজার ৪৭৯ এবং ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা।

এছাড়া এইচআইইএস ২০২২ অনুযায়ী গতবারের তুলনায় এবার প্রতিটি খানার মাসিক আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাসিক ব্যয়ও বেড়েছে। এইচআইইএস ২০২২ অনুযায়ী, বর্তমানে একটি খানার মাসিক ব্যয় ৩১ হাজার ৫০০ টাকা, যা ২০১০ ও ২০১৬ সালে ছিল যথাক্রমে ১১ হাজার ২০০ এবং ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত