ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কঠোর নিরাপত্তা থাকছে ভোট কেন্দ্রে পথে পথে থাকবে তল্লাশির ব্যবস্থা

কঠোর নিরাপত্তা থাকছে ভোট কেন্দ্রে পথে পথে থাকবে তল্লাশির ব্যবস্থা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব ভোটকেন্দ্র কঠোর নিরাপত্তার চাদরে থাকবে। গত বছরের নির্বাচনের কাজে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার চূড়ান্ত পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪২ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্র থাকছে। ভোটারদের ভোট দিতে সহযোগিতা করতে কয়েক লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা কাজ করবেন। কেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা এবং প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারের তালিকা করেছে নির্বাচন কমিশন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ৩০০ সংসদীয় আসনে ভোট কেন্দ্রের তালিকার গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এবার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৩৩ জন ভোটারের নির্বাচনে ৪২ হাজারেও বেশি কেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকছে ১ লাখ ৬২ হাজারেরও বেশি। এসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রয়োজন হবে ৭ লাখের কাছাকাছি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। সরকারি গেজেটে প্রকাশিত কোনো ভোটকেন্দ্র কোনো প্রার্থীর মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে- তাহলে নির্বাচন কমিশন যে কোনো সময়ে তা পরিবর্তন করতে পারবে। প্যানেলভুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং অফিসাররা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের কার্যক্রম চূড়ান্ত করবেন। জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, অর্থের লেনদেন ও পেশিশক্তির ব্যবহার জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে; জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে কোনো মূল্যে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করতে হবে।

নির্বাচনি পরিবেশ নির্বিঘ্ন রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি তৎপরতা থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তায় টহল দিতে দেখা যাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের। পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক সাদা পোশাকের সদস্যরা দায়িত্বপালন করবেন। নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী। তবে এর আগে ২১ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, সশস্ত্র বাহিনী ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৩ দিন দায়িত্ব পালন করবে। এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আগের সিদ্ধান্তে সেনানিবাস থেকে মাঠপর্যায়ে যাতায়াতের সময়সহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের সময়সীমার কথা জানানো হয়েছিল। সশস্ত্র বাহিনীর পরের চিঠিতে তাদের যাতায়াতের সময় বাদ দিয়ে মাঠপর্যায়ে অবস্থানের সময় উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাচনের সময় প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন ‘নোডাল পয়েন্ট’ ও সুবিধাজনক স্থানে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে থাকবেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের চিঠি অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সমন্বয় করতে একটি সেল খোলা হবে।

পুলিশ জানায়, জাতীয় নির্বাচন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব, আনসার বাহিনী, বিজিবি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করবে।

নির্বাচন ঘিরে যেকোনো অপতৎপরতা এড়াতে বিভিন্ন মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামিরাসহ নজরদারিতে থাকবে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকাণ্ড। এছাড়া পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সাইবার ক্রাইম টিমের মনিটরিংয়ের আওতায় রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় র‌্যাব-পুলিশের তল্লাশি চৌকি বসানো হবে। সন্দেহভাজন সবাইকে তল্লাশি করা হবে। প্রয়োজনে যাচাই করা হবে পরিচয়পত্র।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, সুষ্ঠুভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য পুলিশের সদস্যরা মাঠে থাকবেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের পর পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তা সদস্যের একটি দল মোতায়েন করা হবে।

মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অবস্থিত ভোটকেন্দ্র এবং মেট্রোপলিটন এলাকার ভেতরে অবস্থিত কেন্দ্রগুলোর জন্য পৃথক নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অস্ত্রধারী দুইজন পুলিশ, অস্ত্রধারী একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিধারী একজন আনসার, ১০ জন আনসার, লাঠি হাতে একজন বা দুইজন গ্রামপুলিশ সদস্যসহ ১৫ থেকে ১৬ জনের একটি দল সব সাধারণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেবে। তবে প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের ক্ষেত্রে (যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত) অস্ত্রসহ তিনজন পুলিশসহ ১৬-১৭ জনের একটি দল থাকবে।

মেট্রোপলিটন এলাকার ভেতরের সব ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ১৫ সদস্যের একটি নিরাপত্তা দল। যার মধ্যে অস্ত্রধারী তিনজন পুলিশ সদস্য, অস্ত্রধারী একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিধারী আরেকজন আনসার এবং ১০ জন আনসার সদস্যের দল প্রতি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্র হলে ১৬ থেকে ১৭ সদস্যের একটি নিরাপত্তা দল পাহারা দেবে এবং অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য সংখ্যা তিনজনের পরিবর্তে চারজন হবে। বিশেষ এলাকাগুলো যেমন- পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দুর্গম এলাকায় মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অন্যান্য গ্রামীণ এলাকার মতোই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখা হবে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে থেকে পাঁচ দিন (যাতায়াতের সময়সহ) মোতায়েন থাকবে এবং ভোটের একদিন পর পর্যন্ত তারা সেখানে থাকবে।

এছাড়া নির্বাচনি এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। তারা ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ দিন (তাদের যাতায়াতের সময়সহ) নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে নির্বাচনি এলাকায় বিপুলসংখ্যক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন রয়েছে।

৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আর বিএনপিসহ কয়েকটি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর আরো ১০ হাজার স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রস্তুত থাকবে। নির্বাচনে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ তাদের সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে কাজ করবে। এখন পর্যন্ত ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজমান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত