ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বরিশালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার নেই

বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার নেই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী, খুনি, অগ্নিসন্ত্রাসী মানিলন্ডারিংকারী ও যুদ্ধাপরাধীর দল। এরা দেশে নির্বাচন চায় না। দেশের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বানচাল করতে চায়। আমরা জনগণের জন্য যখন দেশের উন্নয়ন করছি, বিএনপি-জামায়াত তখন দেশে আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে। এরা বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চিফ হুইফ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির সভাপতিত্বে তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। ২১ বছরে তারা দক্ষিণ বাংলার জনগোষ্ঠীর কোনো উন্নয়ন করেনি। আমরা ক্ষমতায় এসেছি বলেই বরিশাল অঞ্চলে আলো জ্বলছে। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি, পায়রা সেতু হয়েছে, পায়রা নৌবন্দর, বরিশাল সেনাবিনাবস, বরিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বরিশালে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যস্ত বাংলাদেশ ছিল স্বর্ণযুগ। দেশের সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে না দেওয়ার কারণে ২০০১ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের উপর নির্মম-নির্যাতন, হত্যা-ধর্ষণ করা হয়েছিল। দক্ষিণাঞ্চলের ২৫ হাজার মানুষ তখন কোটালীপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের অপকর্মের জবাব দিয়েছিল জনগণ। এ কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৩০০ সিটের মধ্যে ২৩৩টি আসন পায় আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি ২০ দলীয় জোট নিয়ে মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। তাদের দুঃশাসনের কারণে বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে দেশকে স্বনির্ভর বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। সমাবেশের শেষে তিনি নৌকা মার্কা মনোনীত বরিশাল অঞ্চলের সব প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাদের বিজয়ী করার জন্য নৌকায় ভোট চান। এ সময় তিনি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে দেখিয়ে বলেন, তিনি সন্ত্রাসী দল ছেড়ে নৌকায় এসেছেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে। তাই শাহজান ওমরসহ নৌকা মার্কা মনোনীত সকল প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ভাঙ্গা থেকে বরিশাল-কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত ৬ লেনের সড়ক নির্মাণের এবং ভোলা থেকে বরিশালে গ্যাস সরবরাহের ঘোষণা দেন।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির আন্দোলন পল্টনের খাদে পড়ে গেছে। খেলা হবে, ৭ জানুয়ারি বিপুল ভোটের খেলা হবে। আগামী ৭ জানুয়ারি বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাব আমরা। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দক্ষিণাঞ্চলের কোনো উন্নয়ন করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বরিশালের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। শেখ হাসিনা মানবতার মা। এই মানবতার মাকে আর একবার ক্ষমতায় আনতে হবে। আপনারা অনেক প্রধানমন্ত্রী পাবেন; কিন্তু এই মানবতার মা শেখ হাসিনাকে আপনারা আর পাবেন না। তাই আসুন আমরা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আর একবার তাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসি।

সমাবেশে বরিশাল সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত, আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দীন নাছিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এছাড়া বন্ধবন্ধুর কনিষ্ঠকন্যা শেখ রেহেনাসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে সকাল থেকে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী বাদ্যযন্ত্র নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে বরিশালের সমাবেশে যোগ দেয়। সকাল ৯ টা থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হন নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ৫ বছর পর বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর এ সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। এ কারণেই দুপুর ১২টার মধ্যেই সমাবেশ স্থল কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। শুধু বঙ্গবন্ধু উদ্যানই নয়, এর আশপাশের সকল সড়ক ছিল লোকারণ্য। এমনকি বরিশাল সদর রোড পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানুষের ঢল নেমেছিল। তবে সমাবেশ স্থল ও এর আশপাশ এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ কারণে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার প্রশংসা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে। গতকাল বিকালে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জনসভায় এই বিভাগের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং তাদের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঝালকাঠিতে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর সন্ত্রাসী দল ছেড়ে সে এখন নৌকায় উঠেছে। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে।’

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সহিংসতার মামলায় ৪ নভেম্বর রাজধানীর একটি বাসা থেকে শাহজাহান ওমরকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। এরপর ৯ নভেম্বর জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। এরপর ২৯ নভেম্বর দুপুরে জামিন পান শাহজাহান ওমর। জামিনে কারাগার থেকে বেরোনোর পরদিন ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারের ইউটিসি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কথা জানান শাহজাহান ওমর। তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নও পান সেদিন।

নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হওয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমরকে দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে ৩০ নভেম্বর বহিষ্কার করা হয়। ৬ ডিসেম্বর সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রির করিডোরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শাহজাহান ওমর বলেন, আওয়ামী লীগ আমার পুরোনো দল, মাঝে অন্য জায়গায় ছিলাম। এখন ফিরে এসেছি।

গতকালের জনসভায় শাহজাহান ওমর একই ধরনের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে সর্বকনিষ্ঠ হলেও জয় বাংলার চেতনার পুরোনো লোক আমি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত