ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পৃথক পৃথক জনসভায় শেখ হাসিনা

দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন

দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন

দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে তরুণ ও নতুন ভোটাদের নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল পৃথক পৃথক তিনটি নির্বাচনি জনসভা থেকে তিনি এ আহ্বান জানান।

এদিন মাদারীপুর জেলার কালকিনি ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ায় নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রতিটি জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রতিটি জনসভায় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠকন্যা শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।

নতুন ভোটারের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রথমবার যারা ভোটার, তাদের অনুরোধ করব, নৌকা মার্কায় ভোট দিতে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে, এটাই আমাদের লক্ষ্য। মাদারীপুরে আমাদের যারা প্রার্থী, তাদের ভোট দেবেন। আমি নৌকা মার্কায় ভোট চাই। কারণ, নৌকা উন্নয়ন, নৌকা দেবে সব। নৌকা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। এই নৌকা নূহু নবীর নৌকা। যে নৌকা মহাপ্লাবন থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই নৌকাই বাংলাদেশের উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি। সেই তারুণ্যকেই স্মার্ট তরুণ হিসেবে সমাজে গড়ে তুলতে চাই। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়তে চাই। আমরা দিনবদলের সনদ দিয়েছিলাম। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সবদিকে আজ বাংলাদেশ উন্নয়ন করেছে। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১। এই ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলব। একটা স্মার্ট পপুলেশন, আমাদের সরকার হবে স্মার্ট, ইকোনমি হবে স্মার্ট, সমাজ হবে স্মার্ট।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘শিক্ষা-দীক্ষায় এ দেশের জনগণ যেন প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যেতে পারে। আর ’৪১ এর যারা সৈনিক, আজকের তরুণরাই হবে সেই সৈনিক। তারাই চালাবে এই দেশ। সেভাবেই নিজেদের তৈরি করে তুলতে হবে। মাদারীপুর আমার অনেক স্মৃতিবিজড়িত। এই মাদারীপুরে আমার দাদার চাকরি সূত্রে আমার বাবা লেখাপড়া করেছেন।’

কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ।

এর আগে শেখ হাসিনা কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান কলেজ মাঠে নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য দেন। সেখানেও আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নতুন ভোটার ও তরুণদের কাছে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, ‘যারা যুবসমাজ ও তরুণসমাজ এবং প্রথমবার যারা ভোটার হবেন শুধু কোটালীপাড়া টুঙ্গিপাড়া নয়, সারা বাংলাদেশের জন্য আমার আহ্বান- নতুন ভোটাররা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে সুযোগ করে দিয়ে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ায় তাদের সাহায্য করতে হবে।’

এদিন সকালে টুঙ্গিপাড়ায় সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অনেকে আন্তর্জাতিকভাবেও জড়িত। তারা বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষকে ক্ষমতায় আনার জন্য কাজ করছে। আমরা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত জবাব দেব। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারি আমাদের নির্বাচন। নৌকা মার্কায় আমরা ভোট করব। আপনারা সকালে সকলে সশরীরে এসে ভোট দেবেন। বিশ্ববাসীকে দেখাবেন যে, আমরা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে জানি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আমরা করতে পারি। আমরা চাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক।’

টুঙ্গিপাড়াবাসীর সমর্থনকে নিজের শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি ৩০০ আসন দেখি। আর আমাকে দেখেন আপনারা। কাজেই এটাই হচ্ছে আমার সব থেকে বড় পাওয়া, আমার মতো একজন সৌভাগ্যবান প্রার্থী বাংলাদেশে আর নেই। এটা হলো বাস্তবতা। তার কারণ আপনারা। আপনারাই আমার দায়িত্ব নেন। আপনারা আমাকে দায়মুক্ত করে রেখেছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করতে পারছি। আমি একজন প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, ভোট দেবেন তো?’ এ সময় উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে ভোট দেওয়ার সম্মতি জানায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতালে বোমা মেরে ফিলিস্তিনে নারী শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে (এখানে বাংলাদেশে) একই কাজ করেছে তারেক জিয়া। বাংলাদেশে এ সমস্ত দুর্বৃত্তায়ন চলবে না। আল্লাহ যদি দিন দেন, আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে ওই লন্ডনে বসে হুকুম দেবে আর দেশের মানুষের ক্ষতি করবে, দেশের মানুষ মারবে সেটা হতে পারে না। দরকার হলে ওটাকে ওখান থেকে ধরে এনে শাস্তি দেওয়া হবে, ধরে এনে শাস্তি দেব।’

নির্বাচন বানচাল করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষ কী করতে পারে? দেশের কোনো উন্নতি করতে পারে না। ২০০৭ সালে আপনারা দেখেছেন কী করেছে। তার আগে তো জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া, এরাই তো ছিল, মানুষের তো কোনো ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি! মানুষ তো যে অন্ধকার-অন্ধকারেই ছিল। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।’

আওয়ামী লীগ চায় দেশে শান্তি থাকুক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষ নিরাপদ থাকুক। দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হোক। আর তারা বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। বারবার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কিন্তু এটা করেও তারা সফল হতে পারছে না।’

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে জানিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই এই যাত্রা সফল করতে পারে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ পারবে না। কারণ, বিএনপি-জামায়াতের সে যোগ্যতাই নাই। কারণ, বিএনপি হচ্ছে খুনিদের দল আর জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল। বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে। এখনো বিদেশে কয়েকজন রয়ে গেছে। নূর, রশিদ, ডালিম, মুসলেহ উদ্দিন, রাশেদ এখনো ফেরারি। তাদের আনার জন্য বিদেশের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালাচ্ছি, আইনগতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কেন আমেরিকা সেই খুনি রাশেদকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। কানাডা নূরকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। ডালিম আর রশিদ পাকিস্তান আর লিবিয়াতে যাতায়াত করে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে ওই খুনিদের ধরে এনে আমরা রায় কার্যকর করব। জাতির পিতার হত্যাকারীদের রায় আমরা কার্যকর করব। এরই মধ্যে কয়েকজনকে আমরা নিয়ে এসেছি। ওদের রায় আমরা কার্যকর করেছি।’

শেখ হাসিনার নির্বাচনি জনসভায় যোগ দিতে ভোর থেকে এ মাঠে জড়ো হন দলের নেতাকর্মী ও জনসাধারণ। ঢাক-ঢোল, বাদ্যযন্ত্রের তালে নেচে-গেয়ে উৎসব করতে করতে নানা রঙের পোশাক পরে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মাঠে আসেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সমর্থকরা। সকাল ১০টা নাগাদ পুরো মাঠ কানায় কানায় ভরে গিয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে জনস্রোত। নিজের পিতৃভূমিতে বঙ্গবন্ধুকন্যার আগমনে গোটা গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া-কোটালিপাড়ায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।

এর আগে দুই দিনের সফরে গত শুক্রবার সড়ক পথে বরিশাল যান শেখ হাসিনা। বিকালে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জনসভায় যোগদান শেষে সন্ধ্যায় নিজের পিতৃভূমিতে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। নির্বাচনি এ সফরে শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে তার ছোট বোন শেখ রেহানা। সেদিন সন্ধ্যায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা।

গত ২০ ডিসেম্বর সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত এবং এরপর সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনি জনসভার মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগ প্রধান। টুঙ্গিপাড়ার জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, রেড ক্রিসেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, অভিনেতা মীর সাব্বির, অভিনেত্রী তারিন জাহান প্রমুখ। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের। সঞ্চালনা করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত