ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

২০২৪ সাল হোক নতুন চেতনার প্রতিধ্বনি

২০২৪ সাল হোক নতুন চেতনার প্রতিধ্বনি

শেষ হয়ে গেল আরো একটি বছর। ক্যালেন্ডারের শেষের পাতাটি অতীত হয়ে গেল। শুরু হলো আরেকটি খ্রিষ্টীয় বছর। এবারের কুয়াশান্ন সকালের সূর্যটা নতুন না হলেও ক্ষণটি একেবারেই নতুন। নতুন বছরে মানুষ নতুন করে ভাবে। নতুন করে চিন্তা করে নতুন করে চেতনার ডানা মেলে। অতীতের সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসাব মেলায়। বিগত একটি বছর কি করেছে কি সাফল্য এসেছে, ব্যর্থতার পাল্টাটাই বা কতটা ভারি হলো সেই হিসাব মেলানোর দিন আজ। আজ শুরু হলো নতুন করে পথচলা। আগামী এক বছরের পরিকল্পনা মানুষ আজ করবে। কীভাবে আগামী একটি বছর সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তিময় জীবন কাটাবে সেই ভাবনা আজ মানুষ করবে। অতীতের একটি বছর আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেল। পুরাতনকে বিদায় আর নতুনকে স্বাগত জানাতে চলছে নতুন প্রস্তুতি। একজন মানুষ বাঁচে নিজের জন্য, তার পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য। এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই যথার্থ ভূমিকা পালনের জন্য দরকার সুস্থ দেহ ও সুস্থ মন। মানুষ সুস্থ দেহে সুস্থ মন নিয়ে আগামীর দিনগুলো কাটাবে এটাও হোক নববর্ষের প্রত্যাশা।

বিদায়ী বছরে ব্যক্তি জীবনের অর্জন সন্তোষজনক নাও হতে পারে, কিংবা প্রত্যাশার সম্পূর্ণ বিপরীত হতে পারে, অথবা অনেক সমস্যার জালে আটকে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। সেজন্য দুঃখবোধ জাগ্রত হতে পারে। তবে ভেঙে পড়া যাবে না। হতাশাগ্রস্ত হওয়া যাবে না। মানুষ যদি দুঃখবোধকে জয় করতে পারে তাহলে তার জীবনের সফলতা অর্জন করা অনেকটাই সহজ হয়। সময়ের নতুনত্বকে চিন্তা-চেতনা ধ্যান-ধারণার নতুনত্বের সঙ্গে একাকার করে নিতে হবে। নিজের প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত করতে হবে। নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে। নিজের প্রতি অবহেলা কিংবা নিজের জীবনযাপনের প্রতি গুরুত্ব না দিলে নিজস্ব সত্ত্বা এক সময় হারিয়ে যাবে। মানুষের জীবনে দুঃখ বেদনা আসবে। সেটা হয়তো সাময়িক। তবে এই দুঃখ কষ্টকে সব সময় চিন্তা চেতনার মধ্যে আচ্ছন্ন রাখলে বিষণ্ণতাজনিত সমস্যা জীবনকে আকড়ে ধরবে। হতাশাগ্রস্ত হয়ে মানুষ নেশা জাতীয় দ্রব্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। দেখা দিতে পারে অনেক জটিল মানসিক সমস্যা। তাই যতটা সম্ভব চেষ্টা করা দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করা। জীবনের যে কোনো ঘাটতি নতুন বছর থেকেই পূরণ করার চেষ্টা অন্তত শুরু করা যেতে পারে। তাহলে কেবল ব্যক্তি জীবন নয়- সামাজিক, রাষ্ট্রীয় বা সমগ্র মানবজাতির ক্ষেত্রে অবদান রাখা অনেকটা সহজ হবে। দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ তার জীবনকে উপভোগ্য করে তুলতে পারে। নতুন দিনের সূচনা, নতুন করে পথচলা। নতুন প্রাণ চাঞ্চল্য, নতুন শপথ সব কিছুই যেন একাকার হয়ে বছরের প্রথম দিনটি আসে। অতীতকে মুড়িয়ে দিয়ে নতুন এক সময়কে বরণ করে নেয়ার শিহরণই যেন অন্যরকম। পুরোনো গ্লানি মুছে নতুনভাবে বাঁচার প্রত্যয়ে শুরু হয় নববর্ষে। ইংরেজি নববর্ষ পালনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎসব হচ্ছে থার্টি ফার্স্ট নাইট। বছরের শেষ এ দিনটিতে পুরো বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় নববর্ষের উৎসব হিসেবে। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সুর ও সঙ্গীতের মূর্ছনায় মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। শুরু হয় প্রিয়জনদের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানো। একে অপরকে উপহার আদান প্রদানের মাধ্যমে বরণ করে নেয় নতুন বছর। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই পালন করে হয়ে থাকে ইংরেজি নববর্ষ। নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো আরেকটি নতুন বছরের। নয়া বছরের পথচলার এই অগ্রগতি যেন সঠিকভাবে আগামীর পথে এগিয়ে যায় তার জন্যও ছিল আকর্ষণীয় এসব আয়োজন। মনে হয় নতুনকে নতুনরূপে বরণ করলে বা সাদর সম্ভাষণ না জানালে পুরোনোটাই আঁকড়ে থাকবে। তাই তো উৎসমুখর পরিবেশে গোটা দুনিয়ার মানুষের পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষও একত্মতা ঘোষণা করে, বর্ষবরণ করে নিয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তরুণদের আবেশী বা আনন্দঘন চিন্তা-ভাবনা। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য হাজার বছরের। বারো মাসে তেরো পার্বণে অভ্যস্ত বাঙালি জাতি খুবই উৎসবপ্রিয়। যে কারণে নিজস্ব উৎসব ছাড়াও অন্যের উৎসবেও রং ছড়াতে দ্বিধাবোধ করে না তারা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ এ জাতি ইংরেজি নববর্ষ পালন করে থাকে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ উপায়ে। প্রিয়জনকে ফুল, মিষ্টি আর কার্ড আদান-প্রদানের মাধ্যমে বরণ করে নেয়া হয় নতুন বছরকে। আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। মানুষের নতুন অভিযাত্রা, নতুন রূপান্তরের তাগিদে। গেয়ে ওঠে নববর্ষের গান। একটি বছরের বিদায় আর নতুন বছরের আগমন সত্যিকার অর্থেই জীবনযাপনে প্রভাব ফেলবে। বিষাদের গ্লানি দূর করে নতুনকে স্বাগত জানানোর উন্মাদনা থাকবেই। সেটা উপহার আদান প্রদান, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে, গান গেয়ে কিংবা বর্ষ বিদায় ও স্বাগত অনুষ্ঠান করে এবং পরিবার পরিজনকে উপহার দিয়ে পালন করা যেতে পারে। গত বছরের সব ব্যর্থতাকে মুছে দিতেই নতুন বছরের আগমন ঘটে। দেশের মঙ্গল কিংবা নিজেদের মঙ্গল কামনা যা-ই বলি না কেন এ যেন সৌহার্দ্য সম্প্রীতির জন্যই। হাতে হাত ধরে সুন্দর একটি বছর পার করার কামনা, সাফল্যের ঝুড়ি প্রসারিত করা, বিশ্বের মানচিত্রে সফল দেশের একটি হিসেবে নিজের দেশকে তুলে ধরাই সবার কাম্য। সবার জন্য শুভ হোক ইংরেজি নববর্ষ-২০২৪।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত