ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফিরে দেখা ২০২৩

বহু মাত্রিকতায় বছর পার করল বিএনপি

বহু মাত্রিকতায় বছর পার করল বিএনপি

২০২৩ সালকে নির্বাচনি বছর ধরে জানুয়ারি মাস থেকেই সরকার পতনের আন্দোলনে সরব হয়ে ওঠে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে চলে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ২০২২ সালের অক্টোবরে সারাদেশে সাংগঠনিক বিভাগগুলোতে ধারাবাহিক সমাবেশ কর্মসূচি করে বিএনপি, যা শেষ হয় ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠের সমাবেশের মধ্য দিয়ে। সেই সমাবেশ থেকে সংসদ ভেঙে দেয়া, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিসহ ১০ দফা ঘোষণা করে দলটি। তবে ওই বছরের একেবারে শেষভাগে ১৯ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৭ দফা ঘোষণা করেন। সেই ঘোষণায়ই তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ২৭ দফা হচ্ছে বিএনপির রূপরেখা। পরে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আরো পরামর্শ হলে সেগুলো রূপরেখায় যোগ করার কথা বলেন তিনি।

আসে নতুন বছর ২০২৩ সাল। বছরের শুরু থেকেই ‘এক দফা এক দাবি’র ইঙ্গিত দিতে থাকে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় একের পর এক কর্মসূচি। বছরের শুরু থেকেই বিএনপির আন্দোলনের লক্ষ্যবিন্দুতে পরিণত হয় বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেই লক্ষ্যের ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জুলাই সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা ঘোষণা করে বিএনপি। ওইদিন গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দফা ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঠিক তার একদিন আগে ১২ জুলাই নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি। সেই সমাবেশ থেকে আসে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা। বিএনপিসহ আরো প্রায় ৩৬টি রাজনৈতিক দল এই এক দফা আন্দোলনের একমত পোষণ করে।

এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির আন্দোলনের গতিপথেও আসে বৈচিত্র। ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে ওঠে জোট মিত্ররা। শরিকদের সঙ্গে টানাপড়েন কাটিয়ে সম্পর্কোন্নয়নেও মনযোগী হয় বিএনপি। বছরের শেষভাগে রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি আর হতাশা বেড়ে যায়। বছরজুড়ে মাঠের রাজনীতিতে চাঙ্গা থাকলেও দল নির্বাচনের বাইরে থাকার কারণেও নেতাকর্মীদের একটি অংশ মানসিকভাবে ঝিমিয়ে পড়ছেন।

বছরের শুরু থেকেই সরকারিবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সমমনা রাজনৈতিক দল নিয়ে পদযাত্রা, অবস্থান কর্মসূচি, গণমিছিল ও রোড মার্চ কর্মসূচি দিয়ে নিজেদের শক্তির জানায় দেয় দলটি। ধারাবাহিকভাবে এসব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন হলেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ নেয় গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দলটির মহাসমাবেশ ঘিরে। ওইদিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। পরদিন ২৯ অক্টোবর ঢাকার সব প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হয়। একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় তিনদিনের অবরোধ।

ওই মহাসমাবেশের পরপরই দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হন। তাদের অনেকে বর্তমানে কারাগারে। এরপর বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে। ৩১ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ১১ দফায় ২২ দিন অবরোধ এবং ৪ দফায় পাঁচদিন হরতাল পালন করে বিএনপি ও সমমনারা। এরই মধ্যে ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন করে সর্বসাধারণের প্রতি সরকারকে অসহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি। গত ২০ ডিসেম্বর সরকারের পদত্যাগ দাবিতে সারাদেশে এই অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় দলটি। একই দিন ২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে গণসংযোগ এবং ২৪ ডিসেম্বর সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করে বিএনপি। এরপর থেকে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে দলটি।

গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান মাঠে সক্রিয় থাকা অন্য অনেক নেতাকর্মীও। ফলে বছরজুড়ে আন্দোলনের যে জমাট অবস্থা তৈরি ছিল বছরের শেষভাগে এসে তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। বলা যায়, স্বস্তিতে শুরু হলেও অস্বস্তিতে বছর পার করছে বিএনপি।

এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপ্সিল ঘোষণার পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদধারীসহ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন নেতা দল ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেন। সাংগঠনিক ও ভোটের মাঠে এই নেতাদের তেমন গুরুত্ব না থাকলেও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম এবং দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সঙ্গী বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীককে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে না পারাটা বিএনপির নেতৃত্বের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বছরজুড়েই দলের চেয়ারপাসন অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ইস্যুটিও ছিল বিএনপির আলোচনার কেন্দ্রে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে কারামুক্ত খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কখনো কেবিনে আবার কখনো আইসিইউতে রেখে তার চিকিৎসা চলছে। এরই মধ্যে গত ২৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় এসে ২৬ অক্টোবর খালেদা জিয়ার অস্ত্রোপচার করেন। ২৮ অক্টোবর সেই চিকিৎসক দল যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত